মাদিবার জীবনছবি যেন না থামে, বললেন দুই মেয়ে

৬ ডিসেম্বর
দুস্তর বাধা উজিয়ে চলেছেন মানুষটি। দীর্ঘ যাত্রা। হোক না পর্দায়, তবু এ যাত্রাও যেন না থামে। অনুরোধ করেছিলেন তাঁর দুই মেয়ে। তার অমর্যাদা করেনি লেস্টার স্কোয়্যারের ওডেয়ন হল। গৃহযুদ্ধের পথে নয়, অহিংসার পথে বর্ণবিদ্বেষকে কফিনে পাঠানোর পরেও এগিয়ে চলেছেন মুক্ত সমাজের কারিগর। ছবি শেষ। হল ফেটে পড়ছে হাততালিতে, গমগম করছে প্রশংসায়। বিশিষ্টদের কেউ কেউ সদ্য বেরিয়েছেন হল থেকে। ঘোষণাটা এল এই সময়। দর্শক জানতে পারলেন, তাঁরা যখন ‘ম্যান্ডেলা: লং ওয়াক টু ফ্রিডম’ দেখছিলেন, তাঁরই ফাঁকে চিরমুক্তি নিয়েছেন বিশ্ববন্দিত নায়ক।
একটু আগেও কান পাতা দায় হয়ে উঠেছিল যে বিশাল ঘরটায়, সেখানেই পাথরের মতো থমকে গিয়েছেন সকলে। কেঁদে ফেললেন অনেকে। তাঁরা মানতে পারছেন না, এত ক্ষণ ধরে যাঁর সাফল্যের কাহিনি দেখছিলেন, ছবিতে নায়কের যে শেষটা দেখানো হয়নি, সেটাই লিখে দিয়েছে ভবিতব্য। একটু আগেই!
পর্দায় নাম ভেসে ওঠা শুরু হতেই গুটিগুটি পায়ে মঞ্চে উঠে আসেন নির্দেশক অনন্ত সিংহ। পিছনে ইদ্রিস এলবা। ছবিতে ম্যান্ডেলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ছবির নির্দেশক অনন্ত জন্মসূত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক। প্রায় ১৬ বছর ধরে গবেষণা করে ছবিটি বানিয়েছেন। ম্যান্ডেলাই তাঁকে এই ছবি বানানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। দু’জনকে উঠে আসতে দেখে হর্ষধ্বনি যখন আরও উচ্চকিত, ঘোষণাটা এল সেই সময়।
এত প্রশংসা, সাধুবাদেও কোনও উচ্ছ্বাস নেই অনন্তের চোখেমুখে। দর্শকরা অবাক। দু’হাত তুলে অনুরোধ জানালেন অনন্ত, হাততালি দেবেন না। বাকিটা বললেন ইদ্রিস, “প্রেসিডেন্ট জুমা কিছু ক্ষণ আগে ঘোষণা করেছেন, ম্যান্ডেলা আর নেই।”
ছবির প্রিমিয়ারের আগে কেটের সঙ্গে ম্যান্ডেলার দুই কন্যা।
তখনও আসেনি বাবার মৃত্যুর খবর। ছবি: রয়টার্স।
লন্ডনে ছবিটির প্রিমিয়ারে হাজির ছিলেন ম্যান্ডেলার দুই মেয়ে জিনজি ও জেনানি। গত সপ্তাহেই ছবিটি মুক্তি পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। তখনই দেখেছেন দু’জনে। তাই এ দিন আর ছবিটি দেখেননি দুই বোন। অনুষ্ঠানের প্রথম কিছুটা সময় উপস্থিত ছিলেন। বাবার সম্মানে রেড কার্পেটেও হাঁটেন। রাজকুমার উইলিয়াম ও রাজবধূ কেটের সঙ্গে দেখা করেন। আলাপ করেন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে। তার পর হোটেলে ফিরে যান।
হোটেলে ফিরেই দেশ থেকে ফোন পান জিনজি-জেনানি। তাঁরা কিন্তু তখনই খবর পাঠিয়েছিলেন লেস্টার স্কোয়্যারে। তবে অনুরোধ করেন, “ছবির সম্প্রচার যেন বন্ধ করা না হয়। দর্শকাসনে রাজকুমার-রাজবধূ।” কথা রাখা হয় ম্যান্ডেলা-কন্যাদের। সেই মতো ছবির শেষে ঘোষণা করা হয় বাবার মৃত্যুসংবাদ।
যত ক্ষণে মঞ্চে উঠেছেন অনন্ত, প্রেক্ষাগৃহ ছেড়েছেন কেট-উইলিয়াম। তাঁদের খবরটা দিলেন সহায়ক। ফিরে এসে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন তাঁরা। মিশে গেলেন দর্শকদের ভিড়ে।
ছবি শুরুর আগেই ম্যান্ডেলা-কন্যা জিনজি বলেছিলেন, “অসম্ভব গর্ববোধ হচ্ছে। আমার পরিবার কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, আমার বাবার ভূমিকা চিরকাল লোকে মনে রাখবে। আমার বাবার জন্য এ ছবি আসলে সম্মান।” তাঁর কথায়, “এ ছবি শুধু আমাদের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, দেশের তরুণদের জন্য, যাদের কথায় বাবা সত্যিই আবেগপ্রবণ ছিলেন।” তখনও জানতেন না, কী খবর আসবে আর কিছু ক্ষণ বাদেই।
ম্যান্ডেলার মৃত্যু, লন্ডনে তাঁকে নিয়ে তৈরি ছবির প্রিমিয়ার দুইয়ের এই আশ্চর্য সমাপতন ব্রিটেনের চোখে অবশ্য অন্য রকম। বর্ণবিদ্বেষ-বিরোধী লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন উত্তাল, কারাবন্দি ম্যান্ডেলা, তাঁর মুক্তির দাবিতে সমলোচনার ঝড় উঠেছে জোহানেসবার্গে, সে আন্দোলনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল লন্ডন। এখন যাঁরা ব্রিটেনের রাজনীতিতে তাবড় নেতা, তাঁদের অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন সেই আন্দোলনে। জেল থেকে মুক্তির পর বন্ধু দেশকে ধন্যবাদ জানাতে ব্রিটেনে এসেছিলেন ম্যান্ডেলা। সে ইতিহাস আজ ব্রিটেনের নানা মহলে ভাসছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বললেন, “এ সময়ের উজ্জ্বলতম আলোক রশ্মিটি বিদায় নিল।” গাঁধীজির মৃত্যুর পর যেমনটা শোনা গিয়েছিল জওহরলাল নেহরুর মুখে, “আমাদের জীবনের আলো নিভে গেল।” এতে কোনও অত্যুক্তি দেখছেন না কেউ। ম্যান্ডেলাই তো বলতেন, গাঁধীজি ছিলেন তাঁর অনুপ্রেরণা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.