বাবা ছিলেন প্রাথমিক স্কুলের রাত পাহারাদার। চাকরির মেয়াদ থাকতে থাকতেই তিনি মারা যান। বাবা মারা যাওয়ায় সেই চাকরি পেয়েছিল ছেলে। মাস শেষে বাবা পেতেন ৩৫ টাকা বেতন। সেই বেতনেই শুরু হয় ছেলের চাকরি। কিন্তু তারপর বহু আবেদন -নিবেদনেও সেই বেতন বাড়েনি। এখন তাঁর বয়স ৬৬। খাতায় কলমে এখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মী তিনি।
মন্তেশ্বরের জামনা পঞ্চায়েতের ফজলপুর গ্রামের স্থানীয় কাটসিহি জুনিয়র বেসিক স্কুলে বাগান তৈরি ও রাতপাহারার কাজ করতেন ভৈরব হুইয়ের বাবা মাণিকচন্দ্র হুই। তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়েছিল মাসিক ৩০ টাকা বেতনে। মাঝে তাঁর বেতন ৫ টাকা বেড়ে হয় ৩৫ টাকা। স্কুল থেকে অবসর নেওয়ার আগেই মৃত্যু হয় তাঁর। এরপর ভৈরববাবু তাঁর বাবার চাকরিতে যোগ দেন। তখন তাঁর বয়স ২২ বছর। সেই সময় এলাকার একটি উচ্চবিত্ত পরিবারে হিসেব নিকাশের কাজ করতেন তিনি। সেই কাজ ছেড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরিতে যোগ দেন। তাঁকে সরকারি নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল বলে জানান ভৈরববাবু। বাবার বেতন তাঁর ক্ষেত্রেও অপরিবর্তিত থাকে। প্রথম মাসে পেয়েছিলেন ৩৫ টাকা। কিন্তু তারপর সময় অনেক এগিয়ে গেলেও তাঁর বেতন বাড়েনি। মেলেনি অবসরও। অবসরকালীন কোনও অর্থ ও পেনশনের সম্ভাবনাও আপাতত প্রায় নেই। শরীর অসুস্থ থাকার কারণে বছর পাঁচেক নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে পারেন না। |
এই নামমাত্র বেতনে সংসার চলে কী করে? ভৈরববাবু জানান, তাঁর একমাত্র ছেলে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। ছেলের মাইনের টাকায় কোনওক্রমে দিন গুজরান হয়। তবে তাতেও পুরো সুরাহা হয় না। বাধ্য হয়ে মাঝে মধ্যে ১০০ দিনের কাজ কিংবা দিনমজুরের কাজ করতে হয় ভৈরববাবুকে। তাঁর আক্ষেপ, “বাবার আমলে ৩৫ টাকায় অনেক কিছু পাওয়া যেত। এখন তো ওই টাকায় একবেলার খাওয়া জোটে না। আশা ছিল একদিন পরিস্থিতি বদলাবে। কিন্তু বার বার আবেদন করেও কিছু হল না।” কাঠসিহি জুনিয়র বেসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীর দত্ত বলেন, “২০০৬ সালে আমি এই স্কুলের দায়িত্ব নিই। শুনেছি তার আগে উনি স্কুলের অনেক কাজ করেছেন। এত বছরেও কেন বেতন বাড়ল না সেটা বুঝতে পারলাম না।” ৬০ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কেন বেতন দেওয়া হয় ভৈরববাবুকে? সমীরবাবু বলেন, “৩৫ টাকা বলেই হয়তো এখনও বন্ধ হয়নি এটি।” জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান দেবাশিস নাগ বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। তবে অনেক বছর আগে প্রাথমিক স্কুলের রাত পাহারা ও বাগান তৈরির পদটি তুলে দেওয়া হয়েছে।” তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও বিদ্যালয় পরিদর্শক এই বিষয়টি লিখিত ভাবে জানালে বিষয়টি তিনি ঊর্দ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। |