“আর কত দিন? প্যাকেট থেকে পচা গন্ধ বের হতে শুরু করেছে। কী করব?” সুনসান সার্ক রোডে দাঁড়িয়ে ফোনে রফতানিকারক সংস্থার কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে চান ভুটানের গেলেফুর বাসিন্দা সোনোম ডুকপা। উত্তর শুনে ফোন কেটে করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি। সহকর্মীকে বললেন, “রাস্তায় দাঁড়িয়ে ট্রাক-ভর্তি কমলালেবু নষ্ট করার মানে আছে!”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জোটসঙ্গী জামাতে ইসলামির আন্দোলনের ফলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের চ্যাংরাবান্ধা দিয়ে রফতানি কারবার বন্ধ। বিপাকে পড়েছেন সোনোমের মতো অন্তত ১৫টি ট্রাকের চালক। ভুটানের নানা এলাকা থেকে লেবু বোঝাই করে শনিবার বিকেলেই তাঁরা চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে পৌঁছে যান। চেকপোস্ট খোলা ছিল। কিন্তু ফের হিংসা ও হানাহানির জন্য বাংলাদেশে ঢোকার সাহস হয়নি। পথে দাঁড়িয়ে ওই দেশের পরিস্থিতির খবর জানার চেষ্টা করেছেন। বুড়িমারি পৌঁছনো সম্ভব হবে কি না খোঁজ নিয়েছেন। কোথাও উত্তর মেলেনি। সীমান্ত রক্ষী বাহিনী থেকে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের আধিকারিকরাও ভরসা দিতে পারেননি। চ্যাংরাবান্ধা ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার সুখবিন্দর সিংহ বলে দিলেন, “গাড়ি নিয়ে যেতে বলি কী করে? ভাল খবর তো পাচ্ছি না।”
বুদ্ধা তামাঙ্গ, ভোলা প্রসাদেরা জানান, বারো ঘণ্টার মধ্যে কমলালেবু বাংলাদেশে পৌঁছে দেওয়ার কথা। প্যাকেট বন্দি থাকার জন্য এর পরে ছত্রাক সংক্রমণ শুরু হবে। পচন দেখা দেবে। গ্যালেফু থেকে চ্যাংরাবান্ধার দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটার। বাংলাদেশে রফতানির জন্য ভুটান থেকে ১৫টি ট্রাক গত শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ রওনা দিয়ে শনিবার সকালে সীমান্তে পৌঁছে যায়। এর পর থেকেই সেগুলি সার্ক রোডে দাঁড়িয়ে। প্রতিটি ট্রাকে ১০ টন করে লেবু রয়েছে। বুদ্ধা তামাং বলেন, “রবিবার দুপুরের পর পচা গন্ধ বার হচ্ছে। আর অপেক্ষা করা সম্ভব নয়। কী করব বুঝতে পারছি না।”
শুধু কমলালেবুই নয়, চ্যাংরাবান্ধা এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সম্পাদক মূলচাঁদ বুচা জানান, ভারত থেকে রফতানির জন্য পাথর-সহ বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে শতাধিক ট্রাকও সীমান্তে পৌঁছেছে। রবিবারও ট্রাক এসেছে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশে অবরোধ আন্দোলনের কথা শুনে তাঁদের কেউ টার্মিনালে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়েছেন। ইমিগ্রেশন চেক পোস্টের আধিকারিক প্রশান্ত বিশ্বাস জানিয়েছেন, ওই সীমান্ত পথে প্রতিদিন গড়ে দেড়শো পর্যটক ও সাধারণ মানুষ যাতায়াত করেন। প্রায় ২০০ পণ্যবাহী ট্রাক চলে। বাংলাদেশ থেকে আমদানি হয় তুলো, পোশাক, ফলের রস, বিস্কুট, চিপস, চকোলেট ইত্যাদি। গত শনিবার থেকে একটিও ট্রাক সীমান্ত পারাপার করেনি। |