অবসর নিয়েও প্রাপ্য পাননি উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম বা এনবিএসটিসি-র এক কর্মী। ওই কর্মীর মৃত্যুর পরেও অর্থসঙ্কটের কারণ দেখিয়ে অবসরকালীন প্রাপ্য দেওয়া হয়নি তাঁর স্ত্রীকে। এই অবস্থায় ওই নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং অন্য ডিরেক্টরদের বেতন ও ভাতা বন্ধ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
আদালতের বক্তব্য, যে-সংস্থার কর্মী বা তাঁর পরিবার অবসরকালীন পাওনা পান না, সেখানকার কর্তাদের বেতন ও ভাতা দেওয়া হচ্ছে কী ভাবে? কর্মীদের অবসরের টাকা মেটাতে তহবিল না-গড়া পর্যন্ত কর্তাদের বেতন-ভাতা বন্ধ থাকবে। এনবিএসটিসি-র চেয়ারম্যান এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “হাইকোর্টের রায়ের প্রতিলিপি পেলে যা বলার বলব।”
নিগমের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মীর মৃত্যুর ৩৯ মাস পরেও অবসরকালীন প্রাপ্যের একটি টাকাও তাঁর পরিবার না-পাওয়ায় সোমবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যের বিষয়, ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মী জীবিত অবস্থায় তাঁর অবসরকালীন প্রাপ্য পেলেন না। স্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী নিগমকর্তাদের কাছে বারবার ঘুরে একটি টাকাও আদায় করতে পারেননি। এখন তিনি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। সরকারের বক্তব্য, কোষাগারে টাকা নেই, ৫০ হাজার টাকার বেশি দেওয়া সম্ভব নয়।
এই মামলা চলার সময়, গত ৭ অক্টোবর রাজ্য সরকারের আইনজীবী আদালতকে জানান, নিগম ওই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীর জন্য দু’টি চেক তৈরি করে রেখেছে। কোচবিহারে নিগমের সদর দফতরে ওই দু’টি চেক রাখা আছে। একটি চেক এক লক্ষ ৯৪ হাজার টাকার, অন্যটি এক লক্ষ ১২ হাজার টাকার। ওই কর্মীর স্ত্রী অর্থাৎ আবেদনকারিণী কোচবিহারে গেলেই চেক দু’টি পেয়ে যাবেন। সরকারের এই বক্তব্য জেনে আবেদনকারিণী কোচবিহারে যান। কিন্তু চেক পাননি।
আবেদনকারিণী এ দিন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা হাইকোর্টে জানান। সরকারি আইনজীবী ওই মহিলার আইনজীবীকে ৫০ হাজার টাকার একটি চেক দেন। আবেদনকারিণীকে ওই চেক নিয়ে ভাঙাতে বলেন বিচারপতি। তার পরে তিনি সরকারি আইনজীবীর কাছে জানতে চান, যে-কর্মী অবসর নিয়েছেন, তাঁর মৃত্যুর পরেও পরিবারের প্রাপ্য টাকা নিয়ে এই টালবাহানা কেন? জবাবে সরকারি আইনজীবী বলেন, নিগমের কোষাগারে টাকা নেই। রাজ্য সরকারও টাকা দিতে পারছে না। এই মুহূর্তে প্রয়াত কর্মীর অবসরকালীন পাওনার অংশ হিসোবে ৫০ হাজার টাকার বেশি দেওয়া সম্ভব নয়।
সরকারি আইনজীবীর এই বক্তব্য শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি। তিনি বলেন, অবসরকালীন প্রাপ্য মেটানোর মতো টাকাও নিগম বা সরকারের অর্থ নেই! অবসরপ্রাপ্ত এবং প্রয়াত এক কর্মীর বিধবা স্ত্রী সেই প্রাপ্য আদায় করতে দরজায় দরজায় ঘুরবেন এই অবস্থা চলতে পারে না। অবসরকালীন প্রাপ্য মেটানোর জন্য এখনই তহবিল তৈরি করা দরকার। আর যত দিন না ওই তহবিল তৈরি হচ্ছে, তত দিন নিগমের এমডি এবং অন্য ডিরেক্টরদের বেতন ও ভাতা বন্ধ থাকবে। |