জামিনে ছাড়া পেয়ে পোষা সেন্ট বার্নাড কুকুর নিয়েই সোমবার ভোরে মালদহ ছেড়েছেন জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার। রবিবার গভীর রাতে তিনি শিলিগুড়ি থেকে মালদহে নিজের বাংলোয় ফিরেছিলেন। প্রশাসন সূত্রের খবর, কয়েক ঘণ্টা বাংলোতে কাটিয়ে সোমবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাংলো ছেড়ে চলে গিয়েছেন শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত মালদহের জেলাশাসক। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন তাঁর প্রিয় সেন্ট বার্নাড ও একটি গোল্ডেন রিট্রিভার কুকুর এবং ৪০-৫০টি রঙিন পাখিও।
গত শনিবার বিকেলে তাঁকে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি জামিনে মুক্তি পান। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময়েই সরকার থেকে তাঁকে ১৫ দিনের জন্য ছুটিতে চলে যেতে বলা হয়েছিল। তারপরে এ দিন সকালে জেলা প্রশাসনের কয়েকজন আধিকারিক বাংলোয় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে জানতে পারেন, কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে গোদালা ভোরেই বাংলো ছেড়েছেন। গোদালাকে গ্রেফতারের খবর পেয়ে হায়দরাবাদ থেকে চলে এসেছিলেন শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক। তাঁরাও চলে গিয়েছেন তাঁর সঙ্গে। |
কিন্তু তিনি কোথায় গিয়েছেন, তা কেউই জানাতে পারেননি। গোদালা কিরণকুমারকে ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্তের পরেই মালদহের অতিরিক্ত জেলাশাসক নীলকমল বিশ্বাসকে আপাতত জেলাশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নীলকমলবাবু বলেন, “আমার সঙ্গে জেলাশাসকের দেখা হয়নি। কখন জেলাশাসক শিলিগুড়ি থেকে মালদহে এসেছিলেন, কখন চলে গিয়েছেন জানি না। কোথায় গিয়েছেন, তা-ও জানি না।” জেলার আর এক প্রশাসনিক আধিকারিক অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) অমলকান্তি রায় বলেন, “রবিবার শিলিগুড়ি আদালতে জেলাশাসকের সঙ্গে ছিলাম। জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে জেলাশাসককে একটি অতিথি নিবাসে নিয়ে যাই। সেখানে ওঁর পরিবারের লোকজন ছিলেন। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে তিনি সপরিবারে মালদহে চলে যান। তার পরে উনি কোথায় গিয়েছেন, তা জানা নেই।”
তাঁর দু’টি কুকুরই দামি। পাখি পোষারও শখ ছিল গোদালার। বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি ৪০-৫০টি রঙিন পাখি সংগ্রহ করেছিলেন। তারা থাকত তাঁর বাংলোর ভিতরেই অনেকগুলি খাঁচাতে। সেগুলি তিনি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন। তবে রয়ে গিয়েছে একটি গরু, একটি মোষ এবং দু’টি বাছুর। বাংলোর এককর্মী বলেন, “সাহেব কুকুর ও পাখি নিয়ে গিয়েছেন। গরু, মোষ রয়ে গিয়েছে। তিনি মোষের দুধ খেতে ভালবাসেন। আর তাঁর মেয়ে গরুর দুধ খেত। তাই দু’টিই পুষেছিলেন।” সেগুলির দেখভাল করছেন বাংলোর কর্মীরা। সকালে স্নান করানো থেকে শুরু করে সন্ধ্যায় মশার হাত থেকে বাঁচাতে গোয়াল ঘরে ধূপ জ্বালিয়ে ধোঁয়াও দিয়েছেন তাঁরা।
তাঁরা জানালেন, ‘সাহেব’ গভীর রাতে শিলিগুড়ি থেকে কখন বাংলোয় ঢুকেছিলেন, আর কখনই বা বেরিয়ে গিয়েছেন, তা তাঁদের জানা নেই। সকালে কাজে এসে বাংলোয় জেলাশাসক ও তাঁর পরিবারের কাউকেই আর তাঁরা দেখতে পাননি। তাঁদের অনুমান, জেলাশাসক সম্ভবত পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে অন্ধ্রপ্রদেশে নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছেন।
|