চা খেয়েই রাত কাটিয়ে দিলেন জেলাশাসক
রাত কাটল মাটিগাড়া থানার লক আপের পাশে ওসি-র রেস্ট রুমে। কিন্তু ঘুম হয়নি। ঘুমোনোর চেষ্টাও করেননি। ভোরের দিকে অবশ্য চোখ বুজে এসেছিল। চারপাইয়ের উপরে শুয়ে পড়েছিলেন মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার।
থানার বাইরে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সামান্যাও। শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন পর্ষদের প্রাক্তন কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণকুমারকে সেখানেই দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল শুক্রবার। স্বামীর সঙ্গেই মালদহ থেকে শিলিগুড়ি এসেছিলেন সামান্যা। মেয়ে মীনাক্ষি ছিল মালদহেই জেলাশাসকের বাংলোয়। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সারা দিন ধরে তাঁকে আগলে রাখেন জেলাশাসকের বাংলোর কর্মীরাই। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মীনাক্ষি যাতে কোনও ভাবেই বাবার গ্রেফতার হওয়ার কথা জানতে না পারে, সে জন্য সকালে খবরের কাগজ আসতেই বাংলোর কর্মীরা সেগুলি পর্যন্ত লুকিয়ে ফেলেন।
নমস্কার। শিলিগুড়ি আদালতে যাওয়ার পথে
গোদালা কিরণকুমার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
সারা রাত প্রায় কিছুই মুখে দেননি গোদালা। কী খাবেন, জিজ্ঞাসা করাতে রুটি, তরকারি দিতে বলেন। থানার ক্যান্টিনে তৈরি খাবারই দেওয়া হয়। তিনি অবশ্য কিছুই খাননি। শুধু এক কাপ চা চেয়ে নিয়েছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতের বেশির ভাগ সময়টাই ছটফট করে কাটিয়েছেন গোদালা। অনেক ক্ষণ চুপ করে বসেছিলেন চারপাইয়ে। থানার বাইরে একটি গাড়িতে বসেছিলেন তাঁর স্ত্রী। তিনিও সে ভাবে কিছুই খাননি। সকাল হলে কেবল দু’টো একটা ফল খেয়েছেন। তাঁর স্বামী অবশ্য সকালে চা ও পাঁউরুটি আর ডিম ভাজা দিয়ে প্রাতরাশ করেন। প্রাতরাশের পরে স্নান সেরে নেন গোদালা।
শুক্রবার সন্ধ্যাতেই জানাজানি হয়ে গিয়েছিল, শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গোদালা অবশ্য থানার মধ্যে কোনও প্রসঙ্গেই কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলেননি। মাঝে এক বার তাঁর আইনজীবী অত্রিদেব শর্মা ভিতরে যান। তাঁর সঙ্গে দু-একটি কথা বলেন মাত্র। অত্রিবাবু তাঁকে না জানিয়ে কারও সঙ্গে কোনও কথা বলতে নিষেধ করেন। ফলে কোনও কথা হয়নি। অন্য কাউকে তাঁর ছায়াও মাড়াতে দেয়নি পুলিশ।
শনিবার সন্ধ্যাতেই রাতারাতি থানার নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকী যত ক্ষণ কিরণকুমার থানায় থাকছেন, তত ক্ষণ থানার ওসির কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়ে এসিপি এ ঠাকুরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। রবিবার নিরাপত্তা এতটাই কড়া করা ছিল যে কোনও ব্যক্তি কোনও অভিযোগ দায়ের করতে এলে তাঁকে থানার ভবনের বাইরে দাঁড় করিয়ে আগে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল। কী অভিযোগ, কেন ভিতরে যাবেন সে সব জেনে তারপরেই মিলছে ছাড়পত্র। অভিযোগ জমা করা হয়ে গেলেই ফের তাঁদের থানার বাইরে পৌঁছে দিয়ে আসছিলেন রক্ষীরা। সারা দিনই থানা চত্বরে ছিল একটা সন্ত্রস্ত ভাব।
দুপুর দু’টো নাগাদ পুলিশ কমিশনারেটে একটি জরুরি বৈঠকে বসেন সদ্য দায়িত্ব বুঝে নেওয়া পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিম। তখনই ঠিক হয় অভিযুক্ত জেলা শাসককে আদালতে পেশ করা হবে। খবর পেয়েই তিনি বুঝতে পেরেছেন, তাঁকে হয়তো জামিন দিয়ে দেওয়া হবে। আইনজীবীর কাছ থেকে সে খবর পেয়ে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন গোদালা। থানা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় হাসিমুখে হাতও নাড়েন। তবে জবাব দেননি কোনও প্রশ্নের।
বিকেলে জামিন পেয়ে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময় তাঁকে দেখা যায় পরিচিত চেহারায়। তবে তখনও কোনও প্রশ্নের জবাব দেননি। গাড়িতে ওঠার সময় জিজ্ঞাসা করা হয়, কিছু বলবেন? বাঁ হাত দিয়ে জামাটা ঠিক করেন শুধু। গাড়ি নিয়ে সস্ত্রীক গোদালা বেরিয়ে যান আদালত চত্বর থেকে।
ফাটকের ২৫ ঘণ্টা
• বিকেল ৪টে: গ্রেফতার কিরণকুমার গোদালা।
• ৫টা: ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ কোর্টের।
• সন্ধ্যা ৬টা: মাটিগাড়া থানায় কিরণকুমার।
• দুপুর ২টো: জরুরি বৈঠকে জাভেদ শামিম-সহ তদন্তকারী অফিসাররা।
• সাড়ে ৩টে: থানা থেকে শিলিগুড়ি আদালতে কিরণকুমার।
• বিকেল ৫টা: মিলল শর্তসাপেক্ষে জামিন।
• সাড়ে ৫টা: মালদহের উদ্দেশে রওনা কিরণকুমারের।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.