হাসপাতাল চত্বরেই পড়ে ‘বেপাত্তা’ রোগিণীর দেহ
বাঁ হাত কাটা। মাথায় ক্ষত নিয়ে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পড়েছিলেন বছর ষাটের অজ্ঞাতপরিচয় এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা। তাঁকে স্থানীয় কিছু যুবক তুলে এনে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করেন গত ২০ নভেম্বর। আর তার ১৩ দিনের মাথায়, সোমবার সকালে সেই মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হল ওই হাসপাতাল চত্বরেই একটি গাছের নীচে। মৃতের গায়ে হাসপাতালেরই লাল কম্বল জড়ানো। এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও অমানবিকতার অভিযোগ তুলে স্থানীয় মানুষ মৃতদেহ আটকে হাসপাতালে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, ওই মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়া হয়। তাঁর চিকিৎসা এবং কোনও রকম পরিচর্যাও হয়নি। গত কয়েক দিন ধরে তিনি হাসপাতালের জল ট্যাঙ্কের সামনে গাছ তলাতেই থাকতেন। অভিযোগ জানানো হয় রোগীকল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা আরামবাগ মহকুমাশাসকের কাছে। মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন। মহকুমাশাসক বলেন, “সার্বিক পরিষেবা নিয়ে সুপারকে যত্নবান হতে বলেছি। ঘটনার তদন্ত করতে বলছি।” মৃতদেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। সুপার নির্মাল্য রায় বলেন, “ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। কারও ত্রুটি প্রমাণিত হলে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।”
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, “গত ২০ নভেম্বর সকালে আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন কোর্ট রোডের মোড়ে পড়েছিলেন ওই মহিলা। বাঁ হাতে ক্ষত ছিল। তাতে মাছি ভনভন করছিল। বিষ্ঠায় মাখামাখি ওই মহিলাকে স্থানীয় যুবক সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এক গাড়ি চালক অমিত দাওয়ান একটি ট্রলিতে চাপিয়ে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে আনেন।
অন্তিম শয়ন। আরামবাগ হাসপাতালে তোলা নিজস্ব চিত্র।
সুজিতের অভিযোগ, “ওই দিনও জরুরি বিভাগে চিকিৎসকেরা দেখতেই চাইছিলেন না মহিলাকে। আমরা নাছোড়বান্দা হওয়ায় দূর থেকে দেখে মহিলাকে ভর্তি করে দিতে বলেন। হাসপাতালের কর্মীরা তাঁকে উপরে মহিলা ওয়ার্ডে তুলতে ছুঁতেই চাইছিলেন না। আমরাই উপরে তুলি। সেখানে শয্যা খালি থাকা সত্ত্বেও সিস্টাররা মেঝেতে কম্বল পেতে শুইয়ে দিতে বলেন।” সুজিত জানান, পর দিন মহিলাকে দেখতে গেলে কর্মরত এক সিস্টার চড়া গলায় জানিয়ে দেন, মহিলাকে দেখভাল করার জন্য পয়সা দিয়ে আয়া রাখো। না হলে এখানে রাখা যাবে না।” সুজিত বলেন, “দেখি নিজের বিষ্ঠায় মাখামাখি ওই মহিলাকে কেউ পরিষ্কার করেনি। অবশ্য কাটা হাতে একটা ব্যান্ডেজ করেছিল। আয়া রাখার বিষয়ে ওদের জানাই, আমি বেকার ছেলে। এত টাকা দিয়ে লোক রাখব কী করে। সিস্টাররা ঝাঁজিয়ে উঠে বললেন, তা হলে নিয়ে যাও। না হলে আমরাই বের করে দেব।’’ ওই যুবক জানান, সিস্টারদের মুখ ঝামটার ভয়ে পরে আর যাননি। সুজিতের ক্ষোভ, “সত্যিই ওঁকে বের করে দেওয়ার মতো অমানবিক কাজ হাসপাতালের কেউ করতে পারে বলে ভাবতে পারিনি।”
মানসিক প্রতিবন্ধী ওই রোগিণীকে হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়নি বলে দাবি করে সিস্টাররা জানিয়েছেন, মহিলার কর্মকাণ্ড নিয়ে সকলেই তিতিবিরক্ত ছিলেন। তবে পরিচর্যার অভাব হয়নি। বরং একটু চলতশক্তি ফিরতেই তিনি সারা শরীরে নিজের মল মেখে ওয়ার্ডময় ঘুরে বেড়াতেন। সিস্টারদের দাবি, আগে দু’বার পালানোর চেষ্টা করেছিলেন উনি। ধরে আনা হয়েছিল সিঁড়ি থেকে। কিন্তু গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যা থেকে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ওয়ার্ডমাস্টার থানাতেও জানিয়েছিলেন।
প্রশ্ন উঠেছে, গত ২৪ নভেম্বর হাসপাতালের লাল কম্বল জড়িয়ে মহিলা দোতলা থেকে হাসপাতাল কর্মী এবং নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখ এড়িয়ে পালালেন কী করে? আর যদি পালিয়েও যান, তা হলে ওই বিল্ডিং এর নীচেই সপ্তাহ খানেক ধরে পড়ে থাকলেও কারও চোখে পড়ল না কেন? মঙ্গলবার ঘটা করে প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন হচ্ছে দেশ জুড়ে। আর তার ঠিক এক দিন আগে আরামবাগ হাসপাতালের এই ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা এলাকায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.