ডাক্তার-নার্সরাই ভীত,
অবহেলায় এড্স রোগীরা
র্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসে এড্স আক্রান্তেরা যে নানা সমস্যায় পড়ছেন, তা স্বীকার করছে জেলার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারাই।
রাজ্যের অন্যতম মেডিক্যাল কলেজে কখনও ওষুধ, কখনও কিটের অভাবে এড্স আক্রান্তদের পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত ১ ডিসেম্বর, বিশ্ব এড্স দিবসে এক অনুষ্ঠানে উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ২ দীপায়ন হালদারও বলেন, “স্বীকার করতে খারাপ লাগছে, তবু এ কথা বলা যায় যে জেলার সবচেয়ে বড় হাসপাতালে এড্স রোগীদের নানা অব্যবস্থার শিকার হতে হচ্ছে।”
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সাধারণ ওয়ার্ডেই এড্স বা ‘এইচআইভি পজিটিভ’ রোগীদের চিকিৎসা হওয়ার কথা। বর্ধমান মেডিক্যালের রাধারানি ওয়ার্ডে এই রোগীদের নানা চিকিৎসার প্রয়োজনে রাখা হয়। কিন্তু ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্স ও চিকিৎসকেদের আজও এডস ভীতি কাটেনি এবং তার ফলে চিকিৎসা পেতে অসুবিধা হচ্ছে বহু আক্রান্তের অভিযোগ। রবিবার বিশ্ব এড্স দিবসের আলোচনা সভায় উঠে আসে এ রকম বেশ কিছু অভিযোগের কথা: • কিছু দিন আগে আসানসোলের এক এড্স আক্রান্ত মহিলা গলব্লাডারে পাথর অস্ত্রোপচার করাতে ভতির্র্ হন। অস্ত্রোপচার ঠিকই হয়েছিল। কিন্তু তার পরে ওয়ার্ডে ফিরে তিনি দেখেন, সংক্রমণ রুখতে তাঁর সঙ্গে আনা সমস্ত কাপড়চোপড় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
• রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় মাস দেড়েক আগে পালিতপুরের এক যুবতী রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তাঁর যে এড্স আছে, তা ওয়ার্ডে জানাজানি হয়ে যায়। এর পরে নার্সেরা হিমোগ্লোবিন পরীক্ষার জন্য রক্ত নিতে, এমনকী তাঁকে স্পর্শ করতেও অস্বীকার করেন।
• অর্শের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কুলটির এক এড্স আক্রন্ত যুবক। তিন বছর ধরে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়নি। পরে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিছু দিন আগে সেখানেই তিনি মারা গিয়েছেন। পরিমলবাবুদের অভিযোগ, সময়ে ঠিকঠাক চিকিৎসা হলে ওই যুবককে বাঁচানো যেত।
স্বাস্থ্য দফতরের দেওয়া তথ্য অনুসারে, জেলায় এড্স আক্রান্তের সংখ্যা ২১৯৪। তাঁদের মধ্যে বর্ধমান মেডিক্যালের অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপি (এআরটি) সেন্টারে এসেছেন ১৮৯২ জন। গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ২৬৩৩৯ জনের রক্ত পরীক্ষা করে ৩৪৫ জনের ক্ষেত্রে এইচআইভি সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। ৩০৬৯৪ জন গর্ভবতী মহিলার রক্ত পরীক্ষায় ৩৫৪ জনকে পাওয়া গিয়েছে যাঁরা ‘এইচআইভি পজিটিভ’। ১০৭৪ জন যক্ষা রোগীর রক্তপরীক্ষা করে ২৮ জনের রক্তে সংক্রমণ মিলেছে।
বর্ধমানে এড্স এবং ‘এইচআইভি পজিটিভ’ রোগীদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পাদক পরিমল রায়ের অভিযোগ, “বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিৎসা করাতে এসে এডস রোগীদের প্রায় প্রতি দিনই সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। এআরটি সেন্টারে দু’জন চিকিৎসকের থাকার কথা। প্রায় এক বছরের উপরে আছেন মাত্র এক জন। ফলে আক্রান্তদের নানা পরীক্ষা ও চিকিৎসায় সমস্যা হচ্ছে।”
অভিযোগ কার্যত মেনে নিয়ে দীপায়নবাবু বলেন, “ওই সেন্টারে যিনি রয়েছেন, তিনি আবার অবসরের পরেও কাজ করে চলেছেন। ব্যক্তিগত জরুরি প্রয়োজনে তিনি কেন্দ্রে না আসতে পারলেই রোগীরা সমস্যায় পড়েন। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে বিকল্প চিকিৎসকের ব্যবস্থা হয় ঠিকই, কিন্তু তাঁরা এড্স রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষিত নন। রোগীদের সমস্যা বাড়ে। তার উপরে ওই কেন্দ্র চলছে স্বল্প জায়গায়। প্রতি দিন এত ভিড় হয় যে পরিদর্শনে গিয়ে আমিও সমস্যায় পড়ি। ঠেলে ভিতরে ঢুকতে হয়।”
নার্স ও চিকিৎসকদের এড্স ভীতি কাটাতে প্রায়ই তাঁদের নিয়ে আলোচনা সভা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন বর্ধমান মেডিক্যালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ। কিন্তু বাস্তবে গত কয়েক বছরের মধ্যে তেমন কোনও আলোচনা হতে দেখা যায়নি। কবে হতে পারে, তাপসবাবুরা তা-ও বলতে পারেননি। তাঁর বক্তব্য, “ওই আলোচনা সভা ডাকার দায়িত্ব উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ২-এর।”
দীপায়নবাবু বলেন, “বর্ধমান মেডিক্যাল মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের অধীন না থাকাতেই আলোচনা সভা ডাকা যাচ্ছে না। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের এড্স সংক্রান্ত সেমিনারে ডাকতে গেলে বহু চিঠিপত্র লিখতে হবে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষকে। তাঁদের বিশেষ অনুমতিও নিতে হবে। তাই সভা আজও হয়ে ওঠেনি।” এই দড়ি টানাটানির খেলায় শুধু ভোগান্তি বাড়ছে রোগীদেরই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.