লিঙ্কন স্কুলের ওয়েবসাইটে এখনও সুদীপ্ত দেবযানীর নাম |
সরকারি ভাবে শিলিগুড়ির লিঙ্কন হাইস্কুলের পরিচালনার ভার দার্জিলিঙের জেলাশাসকের নেতৃত্বধীন ১০ সদস্যের এক কমিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তার দশ দিন পরেও স্কুলের নিজস্ব ওয়েবসাইটে লিঙ্কন স্কুলের চেয়ারম্যান কাম ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে সুদীপ্ত সেনকে উল্লেখ করা নিয়ে অভিভাবক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয়, স্কুলটি এখনও সারদা এডুকেশনাল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি অলাভজনক সংস্থার অধীনে রয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে ওয়েবসাইটটিতে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত ২২ নভেম্বর বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশনের নির্দেশে স্কুলের নতুন পরিচালন কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই অস্বস্তি বেড়ে নতুন পরিচালন সমিতির সদস্যদের মধ্যে।
স্কুলের পরিচালন কমিটির নতুন সভাপতি তথা জেলাশাসক পুনীত যাদব বলেন, “কমিশনের নির্দেশে স্কুলটি সঠিক ভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর এক দফায় বৈঠক হয়েছে। আগামী শনিবার ফের বৈঠক হবে। তবে স্কুলের ওয়েবসাইটে সারদা গোষ্ঠীর উল্লেখ থাকার বিষয়টি জানতাম না। দ্রুত ওয়েবসাইটি-র ভুল-ত্রুটি ঠিক করতে নির্দেশ দিচ্ছি।” কমিশনের নির্দেশে যে পরিচালন কমিটি গঠন করে স্কুলটি চালানো হচ্ছে, তা-ও ওয়েবসাইটে উল্লেখ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন।
ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একাংশ জানিয়েছেন, সারদার অধীনে থাকা স্কুলটির পরিচালনা নিয়ে গত ৭-৮ মাস ধরে সমস্যা চলছিল। কমিশনের নির্দেশ গঠিত পরিচালন কমিটির মেয়াদ ১০ দিন হলেও ওয়েবসাইটের বিষয়টি কেন কারও নজর পড়ল না তা বোঝা যাচ্ছে না। যে ব্যক্তিকে স্কুলের চেয়ারম্যান হিসেবে দেখানো হচ্ছে সেই সুদীপ্ত সেন তো জেল আর পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। ওয়েবসাইটে সুদীপ্তবাবু ছাড়া যাঁর পরামর্শ এবং সহযোগিতায় স্কুলটি চলছে বলে উল্লেখ করা হচ্ছে, সেই দেবাযানী মুখোপাধ্যায়ের নামও এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসাবে লেখা রয়েছে। দু’জনেই এখন সারদার নানা মামলায় অভিযুক্ত। অভিভাবকদের কয়েকজনের কথায়, “রাজ্যে সারদা কেলেঙ্কারির পরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতে হত। বিশেষ করে শ্যামল সেন কমিশনের নির্দেশ আসার পরে সারদার নামটা সরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। নতুন পরিচালন কমিটির বিষয়টি ওয়েবসাইটে উল্লেখ করতে হত।”
স্কুল ও প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ১৯৮০ সালে স্কুলটি তৈরি হয়। প্রথমে সেটি শহরের মধ্যেই ছিল। পরবর্তীকালে শিলিগুড়ির অদূরে কড়াইবাড়িতে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য ক্যাম্পাস তৈরি করা হয়। আর মিলনপল্লিতে লোয়ার কেজি থেকে অষ্টম শ্রেণি অবধি ক্লাস চলছে। ২০১০ সালে সারদা গোষ্ঠী লিঙ্কন স্কুলের দায়িত্ব নেয়। এরপর থেকে প্রতি মাসে ছাত্রছাত্রীদের থেকে ফি বাবদ আদায় করা অর্থ সারদা গোষ্ঠীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করার নির্দেশ দেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষক-কর্মীদের বেতন সারদা গোষ্ঠীর থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হত।
চলতি বছরের গত ১১ এপ্রিল স্কুলের তরফে ১১ লক্ষ টাকা সারদা গোষ্ঠীর অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। তার কিছু দিন পরেই সারদা গোষ্ঠীর ভরাডুবি ঘটে। এর ফলে স্কুল পরিচালনা করা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। সারদার আমানতকারীরা স্কুলে গিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভ জানান। সেই সময় ঠিক হয়, ছাত্রছাত্রীদের থেকে আদায় করা ফি দিয়ে স্কুলটি চলবে। স্কুলে একটি ‘অ্যাডহক’ কমিটি গড়ে ৫৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ২৬ জন কর্মীর বেতন মেটানোর ব্যবস্থা চালু হয়। এর পরে নভেম্বরে কমিশনের নির্দেশে পরিচালন কমিটিটি গঠিত হয়।
জেলাশাসক জানান, সারদার সম্পত্তি’র মাধ্যমে কী ভাবে স্কুলের বকেয়া গত ফেব্রুয়ারি এবং মার্চের পরিবহণ খরচ এবং মার্চ মাসের বেতন মিটিয়ে দেওয়া যায় তা দেখার জন্য আমরা কমিশনের কাছে আর্জি জানাচ্ছি। |