ফুল চাষে উৎসাহ দিতে ভর্তুকি, জানেন না চাষিরা
ফুল চাষের খরচ নিয়ে বেশি ভাবার দরকার নেই। কারণ ফুল চাষের পর খরচের তথ্যপ্রমাণ দিয়ে উদ্যানপালন দফতরে আবেদন করলে অর্ধেক টাকা ফেরত পাওয়া যায়।
ফুল চাষে উৎসাহ বাড়ানোর জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে নাশনাল হর্টিকালচার মিশন এই ভর্তুকি দেওয়া শুরু করলেও প্রচারের অভাবে বিষয়টি জানা নেই রাজ্যের অধিকাংশ ফুলচাষির। আবার অনেকে জানলেও ‘কাগজপত্র’ লাগে বলে সরকারি ঝুটঝামেলায় যেতে চান না। ফলে জেলায়-জেলায় উদ্যান পালন দফতরে এই খাতে টাকা পড়ে রয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে যেমন গত কয়েক বছর মিলিয়ে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা হাতে রয়েছে বলে জানান জেলা উদ্যান পালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের আধিকারিক স্বপন কুমার শিট। রাজ্যের উদ্যানপালন মন্ত্রী সুব্রত সাহা মেনে নেন, “প্রচারে কিছু ঘাটতি রয়েছে। চাষিদের সচেতনতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই টাকা খরচ করা যায় না।”
কিন্তু জানলে তবে তো সচেতন হবেন চাষিরা। সুবিধা পাওয়া যায় কী ভাবে? উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, ফুল চাষিদের দফতরে এসে একটি ফর্ম নিতে হবে। ওই ফর্ম পূরণ করে তার সঙ্গে খরচের ‘বিল’ এবং জমির মালিকানার প্রমাণপত্র জমা দিলে সংশ্লিষ্ট দফতরের ‘ফিল্ড অফিসার’ সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রতি ক্ষেত্রেই ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হয়। চাষের খরচের হিসেব অনুযায়ী বিভিন্ন ফুলকে চারটি গ্রেডে ভাগ করা হয়। হেক্টর পিছু ৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়া হয়। শুনতে যতটা ভাল, বাস্তবে ততটা সহজ নয় অবশ্য। ক্ষুদ্র চাষিদের অনেকের কাছেই জমির মালিকানার উপযুক্ত কাগজপত্র থাকে না। আবার কাগজ থাকলেও সামান্য সার, কীটনাশকের খরচের ‘ভাউচার’ গুছিয়ে রাখা হয় না। এ সব হলেও সরেজমিন পরিদর্শনে এসে কৃষি দফতরের কর্তারা কতটা ‘সন্তুষ্ট’ হবেন বলা কঠিন। অগত্যা সরকারি সাহায্যের আশায় না থেকে গ্রামের মহাজনের কাছেই পরের চাষের জন্য ঋণ নিয়ে নেন কৃষকেরা।
অনেকে আবার জানেনই না, এমন সুবিধা আছে বলে। সে নদিয়ার কুপার্স ক্যাম্প নোটিফায়েডের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফুল চাষি নেপাল বালা হোন বা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ধর্মসাগরের গোলাপ চাষি জয়দেব গোস্বামী, দাসপুরের বেল ফুল চাষি সঞ্জয় মালাকার। পাঁশকুড়ার মহতপুর গ্রামের চন্দ্রমল্লিকা ফুল চাষ করেন গণেশ মাইতি। তিনি বলেন, ‘‘মাত্র ৬ মাস আগে পাঁশকুড়া ফুলবাজারে উদ্যান পালন বিভাগের একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে গিয়ে ফুল চাষের জন্য এই আর্থিক সাহায্য পাওয়ার কথা জানতে পারি। এরপরে আমি সাড়ে ১২ ডেসিমেল জমিতে চাষের খরচের হিসেব দিয়ে সাহায্য পাওয়ার জন্য আবেদন করেছি। এখনও সাহায্য পাওয়া যায়নি।” কোলাঘাটের সিদ্ধা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর জিয়াদা গ্রামের প্রশান্ত পড়িয়া বলেন, “নতুন করে ফুল চাষের জন্য আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয় বলে উদ্যান পালন দফতর থেকে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।” সারা বাংলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সম্পাদক নারায়ণ নায়েকের অভিযোগ, ‘‘জেলা উদ্যান পালন দফতর থেকে কোনও প্রচারই হয় না। ব্লক অফিসে কাজে এসে বা আমাদের সূত্রে কেউ হয়তো জানতে পেরেছেন। কিন্তু ঝুট-ঝামেলার ভয়ে তাঁরা আর এগোননি। চাষিদের অভয় দিয়ে ভর্তুকির সদ্ব্যবহারে সদিচ্ছার অভাব আছে প্রশাসনে।” নদিয়ার নোকারি ফুল বাজার কমিটির সম্পাদক জ্যোতির্ময় মজুমদারও বলেন, “ভর্তুকির বিষয় আমাদের জানা নেই। রানাঘাট-২ নম্বর ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় ফুল চাষ হয়। কিন্তু কোনও চাষি এই সুযোগ পায় বলে আমি শুনিনি। তবে চাষিরা ভর্তুকি পেলে খুবই উপকৃত হবেন।”
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক রণজয় দত্ত বলেন, “আমাদের জেলায় ২৯টি ব্লকের মধ্যে মাত্র ১৮টি ব্লকে একটি করে ফিল্ড অফিসার (অস্থায়ী) রয়েছেন। তা-ও আবার গত জুন মাসে তাঁদের চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে। তবুও ওই কর্মীরা কাজ করছেন। কর্মী-সঙ্কট থাকা সত্ত্বেও আমরা মাঝে-মধ্যেই প্রচার করি। চলতি বছরে প্রচারে আরও জোর দেওয়া হয়েছে।”
প্রশাসনের মতি ফিরছে হয়তো। চাষিদের ভাগ্য ফিরলে হয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.