মাথার উপর চক্কর কাটতে থাকা হেলিকপ্টার মানেই তাকে আর শুধু ভিভিআইপি-র বাহন ভাবার জো নেই। ভাবা যাবে না বায়ুসেনার টহলদারিও। হয়তো দেখা যাবে, কারও এমন আকাশ-পাতাল চিন্তার ফাঁকে তাঁরই এলাকার বিদ্যুৎ চুরির ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছে ওই বায়ুযান! হলিউডি থ্রিলারের মতো।
রূপকথা নয়। তার দিয়ে বয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎ অপচয় রুখতে এই ব্যবস্থা চালু করতে চলেছে বণ্টন নিগম পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন। তারা জানিয়েছে, সব ঠিকঠাক চললে, নজরদারি চালু হবে এ মাসে। দেশে তো বটেই, বিশ্বেও এ ধরনের নজরদারি প্রথম বলে তাদের দাবি।
নিগমের মতে, পরিবহণের সময় বহু ভাবে নষ্ট হয় বিদ্যুৎ। কোথাও হয়তো তা চুরি যাচ্ছে, তো কোথাও ভাঙনের জেরে নদীগর্ভে তলিয়ে যেতে বসেছে বিদ্যুতের তার। কোনওখানে আবার লাইন অকেজো হয়ে যাচ্ছে বরফ পড়ার দরুন। এ বার এই সমস্ত সমস্যা আগাম জেনে তা দ্রুত মেটানোর লক্ষ্যেই হেলিকপ্টারের ডানায় সওয়ার হচ্ছে তারা। নিগমের ডিরেক্টর আর পি শাসমল জানান, “হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নজরদারি করা হবে। ব্যবহৃত হবে উচ্চ ক্ষমতার ক্যামেরা। হেলিকপ্টার চালাবেনও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাইলট।” পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে বিদ্যুৎ-লাইনের খুব কাছ দিয়ে উড়ে ছবি তোলা হবে। তার পর তা খতিয়ে দেখে খুঁজে বার করা হবে বিপদের সম্ভাবনা থাকা সব জায়গা। শাসমলের কথায়, “এখন কোনও টাওয়ার তার সমেত নদীগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার পর লোকমুখে তা জানতে পারি আমরা। নতুন ব্যবস্থায় কিন্তু তা জানা যাবে অনেক আগেই।”
নিগমের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর এস কে গুপ্ত বলেন, “নজরদারির জন্য ভাড়া নেওয়া হেলিকপ্টারে আমাদের নিজস্ব ইঞ্জিনিয়ার থাকবেন। ছবি তুলবেন তিনিই। সম্ভাব্য খরচ প্রতি কিলোমিটারে ৪,৫০০ টাকা।”
শাসমলের দাবি, “কোন কোন অঞ্চলে লাইনে সমস্যা আছে, তা আমরা জানি। বিদ্যুৎ চুরির সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলিও আমাদের চেনা। বিশেষত ওই সব অঞ্চলেই নজরদারি চালানো হবে।” তা ছাড়া বিদ্যুৎ অপচয় কিংবা পরিকাঠামো নষ্ট রুখেও বহু টাকা বাঁচানো যাবে বলে নিগমের অভিমত।
আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকেই এই নজরদারি শুরু করতে চায় নিগম। শুরু হবে বল্লভগড়-আগ্রা ১৬০ কিলোমিটার লাইন দিয়ে। প্রথম পর্যায়ে নজরদারি চালানো হবে ১৫ হাজার কিলোমিটারে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৫৫ হাজার কিলোমিটার। উল্লেখ্য, ১.২২ লক্ষ কিলোমিটার লাইন নিগমের হাতে রয়েছে। যা দেশের মোট ‘হাই টেনশন’ লাইনের প্রায় ৯০%। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আকাশপথে নজরদারির কথা বলেছে বিভিন্ন সংস্থা। কিন্তু পরে তা বাস্তবায়িত হয়নি। পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশনের অবশ্য দাবি, ইতিমধ্যেই এ জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত অনুমোদন পেয়েছে তারা। ফলে এ মাসে পরিষেবা চালু করা সম্ভব হবে বলেই তাদের দাবি। |