বন্ধ হয়েছে হোটেল, থানায় গেলে বেড়েছে হামলা
তোলাবাজদের দৌরাত্ম্যে আতঙ্কে বাসিন্দারা
বাড়ি-জমি কেনাবেচা প্রায় বন্ধ। নিশ্চিন্তে ব্যবসা করার উপায়ও নেই। তোলাবাজি তথা তোলাবাজদের দৌরাত্ম্যে এমনই অবস্থা দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে দোকানদার, ব্যবসায়ী, প্রোমোটারদের।
অশোকনগর-কল্যাণগড় এলাকায় তোলাবাজি, ছিনতাই, দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা নয়। এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই এ সবের সঙ্গে পরিচিত। তব সাম্প্রতিক কালে তা মাত্রা ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। অবস্থা এমনই যে টাকাপয়সা নিয়ে সন্ধের পর তো দূরঅস্ত, দিনেও ভয় পাচ্ছেন বাসিন্দারা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে দুষ্কৃতীদের দাপট। বেড়ে যায় বাইকবাহিনীর দৌরাত্ম্যও। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে মিলেছে বহিরাগত দুষ্কৃতীরাও। যারা এই সব এলাকাতেই আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে। ফলে মাঝেমধ্যেই দুষ্কৃতীদের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোলে বোমাবাজি, গুলিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মদত পেয়েই দুষ্কৃতীদের এই বাড়বাড়ন্ত। তারা এতটা লাগামছাড়া। পুলিশও এই সব দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয় না। এলাকায় ভয়-সন্ত্রাস এতটাই ছড়িয়েছে যে, তোলাবাজদের দাবি মেনেই ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের কাছে গেলে কোনও কাজ হয় না। তা ছাড়া থানায় গেলে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের আরও কোপে পড়তে হয়। তাই বাধ্য হয়ে এই ব্যবস্থাকেই মানতে হয়েছে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “তোলাবাজদের বিরুদ্ধে কেউ থানায় অভিযোগ দায়ের না করলে তো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। তবে ওই সব এলাকায় পুলিশের টহলদারির ব্যবস্থা রয়েছে। যাঁরা হামলার শিকার হচ্ছেন, পুলিশের উপর ভরসা থাকলে আসতে পারেন। কোনও দুষ্কৃতীই রেহাই পাবে না।’’
শুধু তোলাবাজি নয়, এলাকায় চোলাইয়ের ঠেক-এর পাশাপাশি বেড়ে গিয়েছে সমাজবিরোধী কাজকর্মও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি ভাতশালা এলাকায় এক চোলাই কারবারীর কাছে দুষ্কৃতীরা মোটা অঙ্কের তোলা (টাকা) দাবি করে। ওই কারবারী তখন অন্য এক দুষ্কৃতী দলের কাছে সাহায্য চায়। তারা প্রতিশ্রুতি দেয়, তুলনায় কম টাকা নিয়ে তারা ওই কারবারীকে নিরাপত্তা দেবে। কিন্তু এই খবর আগের দলের কাছে পৌঁছে যায়। এর পরে কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। একদিন সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় বোমাবাজি চলে ওই চোলাই কারবারীর বাড়ির সামনে। চলে গুলিও। ওই চোলাই কারবারী বর্তমানে এলাকাছাড়া।
স্থানীয় কচুয়ামোড় এলাকার জয়জয়ন্তী সুপারমার্কেটে কিছুদিন আগেও রমরমা ব্যবসা ছিল একটি হোটেলের। ওই হোটেল মালিকের লরির ব্যবসাও রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তোলাবাজদের দাবিমত একবার তোলাও দিয়েছিলেন তিনি। তাতে পেয়ে বসে পরবর্তীতে ফের তোলা দাবি করে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু হোটেল মালিক তা দিতে না পারায় দুষ্কৃতীদের অত্যাচারের ভয়ে হোটেল বন্ধ করে দিয়েছেন।
চৌরঙ্গী মোড়ে জমি কিনেছিলেন একটি কোচিং সেন্টারের মালিক। তাঁকেও মোটা অঙ্কের তোলা দিতে হয়েছিল। শুধু সুপারমার্কেট, চৌরঙ্গী মোড়ের ঘটনা নয়, এমন উদাহরণ রয়েছে একাধিক। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তোলাবাজরা এখন বেছে বেছে কিছু ব্যবসায়ীকে তোলা চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে। সেরকমই একটি চিঠিতে লেখা ছিল, ‘দুষ্কৃতীদের একজন সাগরেদ জেলে রয়েছে। তাকে ছাড়াতে প্রচুর টাকা দরকার। টাকা দরকার মামলা চালাতেও। তাই তোলা দিতে হবে’।
এক ব্যবসায়ীর কথায়, “দুষ্কৃতীরা যা করে বেড়াচ্ছে তাতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। পুলিশের উপরে ভরসা হারিয়েছি। পুলিশের একাংশের সঙ্গে দুষ্কৃতীদের যোগসাজশ রয়েছে। তাই তোলাবাজরা তোলা দাবি করলেও থানায় যেতে সাহস পাচ্ছি না।” গোলবাজার এলাকায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক রয়েছে। অভিযোগ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা পেনশন তুলতে গেলে কেপমার, ছিনতাইবাজরা তাঁদের উপরে হামলা করে টাকাকড়ি ছিনিয়ে নেয়। বাইকে করে এসে চোখে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে টাকা নিয়ে চম্পট দেয় তারা। গত কয়েক মাসে এ ধরনের ১১টি ঘটনা ঘটলেও ব্যাঙ্কের আশপাশে বা ওই এলাকায় নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। এই অবস্থায় অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা টাকা তুলতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। এ ছাড়া মহিলাদের গলা থেকে হার ছিনতাই, বাইকে চেপে এসে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। দিন কয়েক আগে সুতনু মাল্টিজিমের সামনে সন্ধ্যায় দু’দল দুষ্কৃতীর লড়াইয়ে ব্যাপক বোমাবাজি ও গুলি ছোড়াছুড়ি হয়।
অশোকনগর কল্যাণগড় পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের শর্মিষ্ঠা দত্তর অভিযোগ, “দুষ্কৃতীরা কোন রাজনৈতিক আশ্রয়ে এতটা বেপরোয়া তা সকলেই জানেন। পুলিশও তাদের বিরুদ্ধে নির্বিকার। কেউ বাড়ি করলে, কেউ ব্যবসা করলেই তোলা দিতে হচ্ছে। না দিলে হামলা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে অনেকে দোকান, হোটেল বন্ধ করে দিচ্ছেন।” প্রসঙ্গত, রবিবারই অশোকনগরে প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সত্যসেবী করের বাড়ির সামনে বোমাবাজি করে দুষ্কৃতীরা। এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বাড়ার কথা স্বীকার করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান তৃণমূলের সমীর দত্ত। তিনি বলেন, “থানায় সম্প্রতি নতুন ওসি এসেছেন। আমরা তাঁকে বলেছি এলাকায় রং না দেখে শান্তিরক্ষায় সবরকম ব্যবস্থা নিতে। প্রয়োজনে আমরাও সহযোগিতা করব।” তাঁর পাল্টা দাবি, “যারা এ সব করছে তারা সকলেই সিপিএম আশ্রিত। তৃণমূল বরাবরই তোলাবাজির বিরুদ্ধে।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.