চলন্ত ট্রেন থেকে কোলের সন্তানকে ছুড়ে ফেললেন মা। বছর দেড়েকের শিশুকন্যাটি প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তার। শিশুর মা পূর্ণিমা সাহাকে গ্রেফতার করেছে রেলপুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, মহিলা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁর মানসিক চিকিৎসা চলছিল বলে জানিয়েছেন বাড়ির লোকজন।
রেলপুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পূর্ণিমার শ্বশুরবাড়ি কল্যাণীর নেতাজি সুভাষপল্লিতে। স্বামী কৃষ্ণ সাহা লটারির টিকিট বিক্রেতা। বড় মেয়ে মাম্পি পড়ে নবম শ্রেণিতে। ছোট মেয়ে, বছর দেড়েকের মামনকে নিয়ে সোমবার সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ নৈহাটি থেকে আপ কৃষ্ণনগর লোকাল ধরে কল্যাণী যাচ্ছিলেন পূর্ণিমা। স্টেশন থেকে ট্রেন ধীর গতিতে কিছুটা এগোনোর পরেই দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পূর্ণিমা মেয়েকে ছুড়ে দেন। তা দেখে হইহই করে ওঠেন বাকি যাত্রীরা। পূর্ণিমাকে মারধরও করা হয়। যাত্রীরাই তাঁকে ধরে কাঁচরাপাড়া স্টেশনে নামান। সেখানে তাঁকে রেল পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। |
মায়ের কোল থেকে মামন গিয়ে পড়েছিল একটি ঝোপের উপরে। স্বপন বিশ্বাস, তপন ওঁরাও এবং তারক মজুমদার নামে তিন মৎস্যজীবী সে সময়ে লাইনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। শিশুর কান্না শুনে তাঁরা ছুটে যান। মামনের হাত-পা ছড়ে গিয়েছিল। মাথায় চোট ছিল। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। মাথায় দু’টি সেলাই দিয়ে তাকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার অনুভা কয়াল বলেন, “শিশুটি ভর্তি হওয়ার সময়ে তার পরিচয় জানা যায়নি। মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত ছিল। আমরা জরুরি বিভাগে চিকিৎসার পরেই গুরুতর কিছু হয়েছে কিনা বোঝার জন্য কল্যাণী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেছি।” শিয়ালদহের রেলপুলিশ সুপার উৎপল নস্কর বলেন, “মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানা গিয়েছে।” তাঁর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পূর্ণিমার বাপের বাড়ি ওই জেলারই কল্যাণীর মাঝেরচর এলাকায়। তাঁর ভাই বিশ্বনাথ খবর পেয়ে এসেছিলেন কল্যাণী জিআরপি থানায়। তিনি জানান, পূর্ণিমার মানসিক রোগের চিকিৎসা চলছিল। মাঝে-মধ্যে কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে যেতেন তিনি। তারাপীঠ যাওয়া নিয়ে কয়েক দিন আগে স্বামীর সঙ্গে ঝামেলাও হয় তাঁর। রেলপুলিশকে বিশ্বনাথ জানিয়েছেন, অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে যেতে রাজি ছিলেন না জামাইবাবু। কিন্তু পূর্ণিমা যাবেন বলে গোঁ ধরেছিলেন। প্রতিবেশীরা জানান, তারাপীঠ যাওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর কথা কাটাকাটিও হয়।
বিশ্বনাথ জানান, রবিবার রাতে বাপের বাড়িতে কাটিয়ে এ দিন সকালেই শ্বশুরবাড়িতে ফেরেন পূর্ণিমা। গিয়ে দেখেন, স্বামী বেরিয়ে পড়েছেন। এর পরেই ছোট মেয়েকে নিয়ে তারাপীঠে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন পূর্ণিমা। বড় মেয়ে ছিল বাড়িতেই। কল্যাণী থেকে নৈহাটি স্টেশনে পৌঁছে পূর্ণিমা দেখেন, সে সময়ে তারাপীঠগামী কোনও ট্রেন নেই। মামনকে নিয়ে কল্যাণীর ফিরতি ট্রেন ধরেন তিনি। স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই মেয়েকে ছুড়ে ফেলেন তিনি।
এ দিন নৈহাটি রেলপুলিশের লক-আপে বসে নানা রকম অসংলগ্ন আচরণ করছিলেন পূর্ণিমা। কখনও মেয়ের কথা বলে কাঁদছিলেন, কখনও নিরুত্তাপ। এক বার বলতে শোনা যায়, “ক’দিন আগে স্বপ্নে দেখলাম, মা কালী বলছেন, হয় স্বামীকে ছাড় না হলে মেয়েকে। ট্রেনে উঠে সে কথা মনে পড়ল। কী যে হল, মেয়েটাকে ছুড়ে ফেলে দিলাম।” এ দিন রেল পুলিশ তাঁকে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে মামনকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন পূর্ণিমা। তত ক্ষণে তাঁর ঠিকানা লেখা হয়ে গিয়েছে নৈহাটির জিআরপি লক-আপ। |