সময়ের সঙ্গে পাল্টেছে হাটের চরিত্র
ছিল হাট। হয়ে গেল বাজার।
বাংলা সাহিত্য থেকে লোকগানে হাটের যতই রোম্যান্টিক উপস্থিতি থাক, মুর্শিদাবাদের মহকুমা ডোমকলের কয়েকটি সাপ্তাহিক হাট কিন্তু বদলে গিয়েছে রোজকার বাজারে। সপ্তাহে দু’দিন বা বড় জোর তিন বার যেখানে হাট বসত, সেখানে এখন রোজ সকাল সন্ধ্যা বাজার বসে। তাতে পাওয়া যায় নিত্যদিনের নানা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মেলে শৌখিন দ্রব্যও।
কী করে এমনটা হল? এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা রানিনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি বাবলু আলম বলেন, “মূলত ভিন রাজ্য থেকে আসা অর্থ আমাদের এলাকার এই পরিবর্তন এনেছে। হাট এখন গঞ্জ। সেখানে সব্জির দোকানেও রেফ্রিজারেটর থাকে।”
সেই নব্বইয়ের দশকের শেষ থেকেই এলাকার বহু যুবক কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে শুরু করেন। তাতে গ্রামে থেকে দিনমজুরি করে যা আয় হত, তার থেকে অনেক বেশি রোজগার হচ্ছে। কুপিলা গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম কেরলে কাজ করেন। তিনি বলেন, “গ্রামে আমাদের সামান্য জমি রয়েছে। তাতে চাষ করে সংসার চলে না। দিনমজুরি করলে রোজ বড়জোর মেলে একশো থেকে দেড়শো টাকা। সেখানে অন্য রাজ্যে করতে গিয়ে আমি দিনে পাঁচ থেকে ছ’শো টাকা রোজগার করি।” এর মধ্যে কিছু টাকা ব্যয় হয় বিভুঁইতে থাকতে। তার পরেও যথেষ্ট জমে। তাই রফিকুল বলেন, “আমি মাসে বাড়িতে আগে যে টাকা দিতে পারতাম, এখন তার তিন থেকে চার গুণ বেশি দিতে পারি।”
এই পরিবারগুলির চাহিদা বেড়েছে, তাতেই হাট বদলেছে বাজারে। রুচি বদলেছে। পরিবর্তন ঘটেছে রক্ষণশীল আবহাওয়ারও। বাড়ির মেয়ে বৌ-রাও এখন বাজারে যাচ্ছেন। বাবলু আলমের কথায়, “আগে হাটই ছিল কেনাবেচার একমাত্র জায়গা। সেখানে যেতেন বাড়ির পুরুষেরা। এখন পুরুষেরা বাড়ির বাইরে থাকছেন। তাই মেয়েরাও অনেক সময়ে ঘরের কাছেই বাজা র চাইছেন।” কুপিলা হাট বদলে গিয়েছে কুপিলা বাজারে। করিমপুরের বাগডাঙা হাট বদলে গিয়েছে রীতিমতো বড় বাজারে। ফুনকোতলা হাটের নাম একসময়ে গোটা জেলা জানত। তা এখন নিত্যদিনেরই বাজার।
আগে তাই নিচু জমির উপরে মাটি ফেলে মাথায় ত্রিপল দিয়ে বাঁশের ঠেকনা দেওয়া হাটের যে দোকানগুলো দেখতে পাওয়া যেত, সেগুলো এখন বদলে গিয়েছে পাকা দোকানঘরে। কিন্তু তার ফলে দাম বেড়েছে জিনিসের। কুপিলার মনিরুল ইসলাম বলেন, “হাটে আমরা যে দরে যে জিনিস পেতাম, বাজারে তার চেয়ে বেশি দাম দিতে হয়।” বাগডাঙা হাটের দোকানদার আজিমুদ্দিন শেখের কথায়, “দাম বেশি পড়ছে, কেননা হাটে সরাসরি চাষিরাই ফসল বিক্রি করতেন, কিন্তু বাজারে তা হয় না।” ডোমকল মহকুমা চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক শঙ্কর মণ্ডল বলেন, “হাটে অনেকেই দিনের দিনই যা দাম পাচ্ছেন, তাতেই জিনিস বিক্রি করে চলে যেতেন। কেননা, পরের হাট বসত অন্তত তিন দিন পরে। কাঁচা সব্জি বা মাছ অত দিন ধরে রাখা অনেকের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এখন যেখানে হাট বদলে বাজার হয়েছে সেখানে দিনের দিনই সব জিনিস বিক্রি করে দেওয়ার দায় দোকানদারের নেই। সেই সঙ্গে, দামি জিনিসের কদরও বেড়েছে।”
হাট তাই অনেক জায়গাতেই স্রেফ নামেই অস্তিত্ব ধরে রেখেছে। বাগডাঙা হাটের এক সময়ের মালিক আজাদ মণ্ডল বলেন, “একটা সময় হাট শুরু হলে মেলার মতো কোলাহল শোনা যেত। যেন গোটা এলাকাটাই গা ঝাড়া দিয়ে জেগে উঠত ওই দিনগুলোয়। দূরের গ্রামের মানুষও ভিড় করতেন হাটে। এখন সেই দিন নেই।” বাগডাঙা হাটে আগে কেবল মঙ্গলবার করে হাট বসত। এখনও ওই দিনটায় বাজারের আশেপাশে অনেকে ছোট পসরা সাজিয়ে বসেন। সে দিন বাজারে একটু চোখে পড়ার মতোই বেশি ভিড়ও হয়। সঙ্গে বসে হাটের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গল্পের আসর।
এই এলাকার বাইরে কিন্তু এখনও বেঁচে রয়েছে অনেক হাট। সেখানে সরেস কৃষিপণ্য সস্তা দরে মেলেও বটে। শঙ্করবাবু বলেন, “গ্রামীণ অর্থনীতিতে হাটের প্রয়োজনীয়তা ফুরোয়নি। কিছু হাট ধুঁকছে, কিন্তু উঠে যায়নি। অনেক হাটে আবার ভালই কেনাবেচা হয়। কিছু এলাকাতেই কেবল হাট বদলে গিয়েছে রোজকার বাজারে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.