ওঁরা তিনজনই জন্মান্ধ। আঁধারকে উপেক্ষা করে এক সময় বাবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠের কাজ করেছেন। এখন আর শরীর সঙ্গ দেয় না। তিন ভাইয়েরই বয়স ষাটের কোটায়। আশ্চর্যজনকভাবে হোগলবেড়িয়ার ওই বিশ্বাস পরিবার বিপিএল তালিকাভুক্ত নয়। তাই একশো শতাংশ প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিন ভাইয়ের কেউই পান না বার্ধক্য ভাতা। মেলে না প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকার প্রদত্ত ভাতাও। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যদের কাছে হত্যে দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। মেলেনি বিপিএল কার্ড। ফলে অতিকষ্টে দিন গুজরান করতে হচ্ছে ওঁদের।
হোগলবেড়িয়ার বালিয়াশিশা গ্রামের উপেন বিশ্বাসের তিন ছেলে আনন্দ, ভক্ত ও পাতিরাম বিশ্বাস জন্ম অবধি চোখে কিছুই দেখেন না। উপেনবাবুর সম্বল বলতে বিঘে সাতেক আবাদি জমি। অবশ্য সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া তৈরির সময় উপেনবাবুর বিঘে দু’য়েক জমি সরকার অধিগ্রহন করে। শারীরিক অক্ষমতার কারণে উপেনবাবুর ছেলেরা আর জমিতে চাষ করতে পারেন না। আবার সরকারি সাহায্যও পায় না ওই পরিবার। ফলে এক প্রকার অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাঁদের। নবতিপর বৃদ্ধ উপেন বিশ্বাসের গলায় আক্ষেপের সুর, “বয়সের ভারে আর কাজ করতে পারি না। ছেলেদেরও বয়স হয়েছে। ওরা কর্মক্ষমতা হারিয়েছে। তিন তিনটি অন্ধ ছেলের মুখে কীভাবে অন্ন উঠবে তা ভেবেই দিন রাত কাটে।” |
অশক্ত শরীরেই পতিরাম বিশ্বাস মাঠ থেকে ফিরে কাদা মাটি মাখা হাতে ফিরে উগরে দিলেন প্রশাসনের উপর ক্ষোভ। তাঁর কথায়, “বার বার গ্রামের নেতা ও পঞ্চায়েত কর্তাদের কাছে বিপিএল তালিকাভুক্ত করার আবেদন করেছি। কিন্ত কেউই কানে নিলেন না।”
কী বলছেন রাজনীতির কারবারিরা? হোগলবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের শিপ্রা পোদ্দার বলেন, “সবে ক্ষমতায় এসেছি। ওই পরিবারকে বিপিএল তালিকাভুক্ত করার জন্য আমরা ব্লক প্রশাসনের কাছে দরবার করব।” ওই পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান কংগ্রেসের প্রতিমা প্রামাণিকের সাফাই, “দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা ওই পরিবারকে বিপিএল তালিকাভুক্ত করেননি। আমাদের কিছু করার ছিল না।” নদিয়ার জেলা শাসক পিবি সালিম বলেন, “বিপিএল তালিকায় নাম না থাকায় বার্ধক্য ভাতা বা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে না ওই পরিবার। কিন্ত আরও অনেক সরকারি প্রকল্প যার মাধ্যমে ওই পরিবারকে সাহায্য করা যেতে পারে। বিষয়টি সম্পর্কে ব্লক প্রশাসনকে খোঁজ নিতে বলব।” |