ছাড়া পেলে একছুটে চলে যায় বাড়ির পাশের মাঠে। রাগ হলে জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলে। আবার বাইরে শিশুদের খেলতে দেখলে হাততালি দিয়ে হাসে। এমন ‘পাগলামি’-র জন্য সারা দিন দড়ি দিয়ে বাঁধা আরফিন।
তার বয়স মাত্র ছয়। সে মূক ও বধির। তিন বছর বয়স থেকেই দড়িতে বাঁধা পড়ে গিয়েছে আরফিন। নদিয়ার শান্তিপুরের সাহেবডাঙার উত্তরপাড়ার আরফিনকে এমন বেঁধে রাখার কথা প্রতিবেশিরা জানেন। আরফিনের বাবা আমীর আলি ধাবক, বা আরফিনের মা খাদিজা বিবিকে নিষেধ করেননি তাঁরা। বরং সায় দিয়েছেন। “সাধ করে কেউ নিজের ছেলেকে বেঁধে রাখে?” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন খাদিজা। “ডাক্তার বলেছেন, আরফিনের কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সবাই যাকে পাগল বলে তাঁকে কি ছেড়ে রাখা যায়, বলুন?” |
পাগলকে যে বেঁধে রাখতে হয়, তার দৃষ্টান্ত ধাবক পরিবারের চোখের সামনেই রয়েছে। একই পাড়াতে মল্লিক পরিবারে তিন সন্তানকে বেঁধে রাখা হয়েছে দড়ি দিয়ে। উনিশ বছরের আসিফ, ১৬ বছরের মনসুরা ও ১২ বছরের আনসুরা, তিন মূক -বধির ভাইবোন বাঁধা থাকে তাদের তিন, চার বছর বয়স থেকেই। বাবা আহমেদ মল্লিক পেশায় দিনমজুর। তিনি জানান, গোড়ায় কিছু দিন কলকাতার হাসপাতালে দেখিয়েছিলেন। শেষে খরচ চালাতে না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
পরিবার আর গ্রামবাসীদের কাছে মৃগীরোগী, মনোরোগী আর মূক -বধির, সব শিশুর পরিচয়, ওরা ‘পাগল।’ শুনে চমকে উঠেছেন শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত মনোবিদ দেবাশিস দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, “কোনও মূক ও বধির শিশুর মস্তিষ্ক ভাল থাকলে সে বোঝে, আর পাঁচজন বাচ্চার থেকে সে আলাদা। সেই হতাশা থেকে সে কখনও অন্য রকম আচরণ করে ফেলতে পারে। বাড়ির লোক যদি তাকে বেঁধে রাখেন, তাহলে হয়তো সত্যি মানসিক ভারসাম্য হারাবে।” |