|
|
|
|
আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস |
জীবনযুদ্ধে হার না মানা দুই লড়াকুকে সম্মান সরকারের |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
জন্ম থেকেই দু’চোখে দেখতে পান না। তবু কখনও হার মানেননি ওঁরা। সেই হার না-মানা লড়াইকেই কুর্নিশ করেছেন সকলে। এ বার মিলতে চলেছে রাজ্য সরকারের স্বীকৃতি। আজ, মঙ্গলবার বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে পশ্চিম মেদিনীপুরের দেবকুমার দণ্ডপাট এবং ভোলানাথ দত্তকে সম্মান জানানো হবে। কলকাতার অনুষ্ঠানে শংসাপত্র তুলে দেওয়া হবে তাঁদের হাতে। দু’জনেই খুশি। দেবকুমারবাবু বলছিলেন, “এই সম্মান ভাল কাজ করার ক্ষেত্রে আরও উৎসাহিত করবে।” আর ভোলানাথবাবুর কথায়, “দিন কয়েক আগে খবরটা পাই। ছোট থেকেই মনে জোর রেখে এগিয়েছি। এই সম্মানটা আমার কাছে খুব বড়।”
দেবকুমারবাবুর বাড়ি চন্দ্রকোনার বান্দিপুরে। বাবা-মা, দুই দিদিকে নিয়ে সংসারে তিনিই ছোট। জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের পাঠ হলদিয়ার বিবেকানন্দ মিশনে। পরে গ্রামে ফিরে ভর্তি হন ঝাঁকরা হাইস্কুলে। ২০০৮ সালে মেদিনীপুর কলেজ থেকে স্নাতক হন। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। এখন দাসপুরের দুধফোমরা বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠে ইংরেজির শিক্ষক দেবকুমারবাবু। তিনি বলেন, “আর পাঁচজন আমাকে দেখে অবাক হন। আমার কিন্তু অবাক লাগে না। আসলে ছোট থেকেই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। মনেই হয় না, আমি প্রতিবন্ধী।” স্কুল-কলেজে সহপাঠীরা নানা ভাবে সাহায্য করেছেন জানিয়ে দেবকুমারবাবুর বক্তব্য, “বাবা-মা সহ পরিবারের সকলের সঙ্গে সহপাঠীদেরও সমান সাহায্য পেয়েছি। ওদের সাহায্য ছাড়া এতদূর এগোনো হয়তো সম্ভব হত না।” বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব কম নয়। তাই দুধফোমরায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। কখনও ছাত্রদের সঙ্গে স্কুলে যান। কখনও সহ-শিক্ষকের সঙ্গে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রকাশকুমার ঘনা বলছিলেন, “ওঁর জন্য আমাদের গর্ব হয়।” |
দেবকুমার দণ্ডপাট। |
ভোলানাথ দত্ত। |
|
জীবনে চলার পথে একইরকম লড়াইয়ের সম্মুখীন হয়েছেন ভোলানাথবাবু। তাঁর বাড়ি মোহনপুরে। ছোটবেলায় তবলা শিখেছেন। ভাল গানও করেন। এখন অন্যদের গান শেখান। স্ত্রী গৌরীদেবী গৃহবধূ। ছেলে সঞ্জীব বিদ্যুতের সরঞ্জাম মেরামতের কাজ করেন। মেয়ে সঙ্গীতার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পঞ্চাশ পেরনো ভোলানাথবাবুর কথায়, “ছোটবেলায় মন খারাপ করত। এখন আর করে না। সেই ৮ বছর বয়সে তবলা শেখা শুরু করি। জেলাস্তরের প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃতও হই। ছোট থেকেই সঙ্গীতচর্চায় আমার উৎসাহ রয়েছে।” জীবন দিয়ে তিনি বুঝেছে, সমস্যার কথা ভেবে ভেঙে পড়লে সমস্যা বাড়বে। তাই মনে জোর রেখে এগোতে হবে। তাহলেই জীবনে সাফল্য আসবে।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে কৃষি ও পশুপালনের প্রশিক্ষণও নিয়েছেন ভোলানাথবাবু। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিবন্ধী নই। কেউ কেউ আমাদের প্রতিবন্ধী করে রেখেছেন। অন্য চোখে দেখেন। তাই কোথাও কোথাও সমস্যা হয়েছে।” ৩২ বছর আগে প্রেম করেই বিয়ে করেন। ভোলানাথবাবুর কথায়, “এক বন্ধুর বোনকে গান শেখাতাম। ভাল লেগে যায়। ওঁরও আমাকে ভাল লেগে যায়। দু’জনে বিয়ে করি। ওই বন্ধুর বোনই আমার স্ত্রী। আমি প্রতিবন্ধী। তাই শুরুতে কিছু সমস্যা হয়েছিল। পরে সব মিটে যায়।”
প্রতিবন্ধকতাকে তাঁরা দু’জনই জীবনে প্রতিষ্ঠিতও হয়েছেন। এই হার না- মানা মনোভাবকে আঁকড়ে ধরে এ বার নিজেদের সঙ্কল্প আরও অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান ওঁরা। বলতে চান, ইচ্ছে আর জেদ থাকলে কঠিন পথও সহজে পেরোনো সম্ভব।
|
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|