লড়াইটা এবার আমেরিকা যাওয়ার। ২০১৫ সালে সেখানেই বসবে বিশ্ব স্পেশ্যাল অলিম্পিক। ইশারায় বছর বাইশের বিট্টু বাগ জানিয়ে দেয়, দেশের হয়ে সে পদক আনতে চায়।
মঙ্গলকোটের শীতলগ্রামের এই যুবক মূক-বধির এবং মানসিক প্রতিবন্ধী। তাতে কী? তাঁর নেশা হল গোল করা। এই ছেলের পায়ে বল যেন কথা বলে। ইতিমধ্যেই তার ঝুলিতে রয়েছে জাতীয় স্পেশাল অলিম্পিকের ফুটবলের ফাইনালে সেরা খেলোয়াড়ের সম্মান। গত ২ অক্টোবর ‘ফাইভ এ সাইড’ এই ফুটবলে হরিয়ানার হিসায় আর্মি ক্যাম্পের মাঠে ফাইনালে মিজোরামের বিরুদ্ধে গোল করে বিট্টু। মিজোরামকে হারিয়ে স্পেশ্যাল অলিম্পিক ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলা। সামনের বিশ্ব স্পেশ্যাল অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলে খেলার সুযোগ পেয়েছে সে।
বাংলার স্পেশ্যাল অলিম্পিক ফুটবল দলের কোচ গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বিট্টু আন্তজার্তিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে। ওকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন।” এই স্বপ্নপূরণে বাধা একমাত্র অর্থ। বিট্টুর বাবা মেঘনাদবাবু পেশায় খেতমজুর। আমেরিকা যাওয়ার টাকা জোগাড় হবে কী করে তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। মেঘনাথবাবু বলেন, “আমার গ্রাম তো বটেই আশেপাশের প্রতিটি মানুষ বিট্টুর পাশে থাকার কথা দিয়েছেন। তবুও সব সময় ভয়ে থাকি। যদি শেষ রক্ষা না হয়।” |
বছর সাতেক আগে শীতলগ্রামের ফুটবল মাঠে পাশের কুরুম্বা গ্রামের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের সদস্যদের চোখে পড়ে যায় বিট্টু। তাঁরাই মেঘনাদবাবুকে বুঝিয়ে কুরুম্বা গ্রামের স্কুল মাঠে বিট্টুকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। ওই সংগঠনের স্কুলেই ভর্তি করা হয় তাঁকে। এখন সে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। সেখানকার ফুটবল কোচ গৌতম মাঝি জানান, প্রথমে বিট্টুকে প্রশিক্ষণের জন্য সল্টলেকের সাইয়ের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁকে বিহার, চণ্ডীগড়, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের ফুটবল শিবিরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ বার রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায় বর্ধমান জেলার হয়ে ভাল খেলায় বাংলার স্পেশ্যাল অলিম্পিক কর্তাদের মনে ধরে তাঁকে। যাতায়াতের অর্থ বাঁচাবার জন্য কখনও বাসের ছাদে চেপে, কখনও না খেয়ে সল্টলেকের সাইয়ের শিবিরে গিয়েছে বিট্টু।
এক সময় প্রতিবন্ধী ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন মেঘনাদবাবু। সেই ছেলেই এখন ভারতের হয়ে পদক আনতে যাচ্ছে। প্র্যাক্টিসে মগ্ন বিট্টু যেন জানিয়ে দিচ্ছিল, আমেরিকা যাওয়ার লড়াই তাঁর শুরু হয়ে গিয়েছে। এই লড়াইয়ের তাঁর ‘সঙ্গী’ এলাকার প্রতিটি মানুষ। |