সারা জীবনের অবদানের স্বীকৃতি অশীতিপর ক্রীড়াবিদকে
বিএসএফ, পুলিশে কর্মরত থাকাকালীন রাজ্য-জাতীয় স্তর অ্যাথলেটিক্সে সোনা ও রূপা মিলিয়ে ৩০টিরও বেশি পদক পান। অবসরের পর উত্তর দিনাজপুর জেলার ছেলে মেয়েদের অ্যাথলিট হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি চালু করেন ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। গত দু’দশকে তাঁর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় দেড়শো পড়ুয়া রাজ্য, জাতীয় এমনকী এশিয়াড স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কৃত হয়েছেন।
রায়গঞ্জের উদয়পুরের বাসিন্দা ৮৬ বছর বয়সী কৃষ্ণচন্দ্র রায় নামে প্রবীণ ও দুঃস্থ ওই অ্যাথলেটিক কোচকে সারা জীবনের কাজের অবদানের জন্য ‘লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট’ পুরস্কার দিল কলকাতার অ্যাথলেটিক কোচেস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল নামে এক সংস্থা। গত রবিবার সংস্থার তরফে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠানে কৃষ্ণচন্দ্রবাবুর নাম ঘোষণা করা হয়। কৃষ্ণচন্দ্রবাবু অসুস্থ থাকায় তিনি ওই দিন কলকাতায় যেতে পারেননি। তাঁর তিন সহকারী ছাত্র পুরস্কার নিয়ে আসেন। সোমবার পুরস্কার হাতে পেয়ে আবেগে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কৃষ্ণচন্দ্রবাবু। তিনি বলেন, “সারাজীবন ধরে অনেক অ্যাথলিট তৈরি করেছি। কিন্তু সরকারি সম্মান ও আর্থিক সাহায্য পাইনি। জীবনে প্রথম লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার পেয়ে মনে হচ্ছে আমার দীর্ঘ দিনের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।”
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উদয়পুরের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ছিয়াশি বছরের ‘যুবক’ কৃষ্ণচন্দ্র রায়। —নিজস্ব চিত্র।
১৯২৮ সালে ৩০ জুন বাংলাদেশের ঢাকায় কৃষ্ণচন্দ্রবাবুর জন্ম হয়। ছোট থেকেই তিনি প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিভিন্ন খেলাধুলোয় পারদর্শী ছিলেন। নবম শ্রেণি পাশ করার পর তিনি কলকাতার ব্যারাকপুরে থাকতেন। সত্তরের দশকে তিনি রায়গঞ্জের উদয়পুরে বাড়ি তৈরি করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি বিএসএফ ও ১৯৭১ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্য সশস্ত্র পুলিশে ছিলেন। অবসরের পর ১৯৮৭ সাল থেকে কৃষ্ণচন্দ্রবাবু উদয়পুরের একটি ক্লাবের মাঠে অ্যাথলেটিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেন। তিন দশক ধরে বিনা পারিশ্রমিকে অ্যাথলেটিক কোচ হিসেবে স্কুল পড়ুয়াদের দৌড়, হাই জাম্প, লংজাম্প, জ্যাভলিন, শটপাট, ডিসকাস-সহ নানা ধরনের খেলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন কৃষ্ণচন্দ্রবাবু।
তিনি জানান, মাসিক ১০ হাজার পেনশনে ঠিকমতো সংসার চলে না। সরকারি আর্থিক সাহায্য পেলে ভাল হয়। স্ত্রী রেখাদেবী বলেন, “অভাবের মধ্যেও স্বামী কোচিং করিয়েও পয়সা নেননি। অসুস্থ শরীর নিয়েই সকাল ও বিকালে মাঠে গিয়ে বিভিন্ন এলাকার ২০০ পড়ুয়াকে প্রশিক্ষণ দেন। একদিন মাঠে না গেলে ওঁর ঘুম হয় না।”
কৃষ্ণচন্দ্রবাবুর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজ্য ও জাতীয় স্তরের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় একাধিক সোনা, রুপা দখল করেছে রায়গঞ্জের শিপ্রা সরকার, সনিয়া বৈশ্য, বিপাশা দেবনাথরা। তাদের কথায়, “এখনও স্যার মাঠে এসে আমাদের নানা পরামর্শ দেন।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.