মুম্বই এফসি: ৩ (ইয়াকুবু, আমেদ, প্রদীপ)
ইস্টবেঙ্গল: ২ (কেভিন, সুয়োকা) |
কোমরে হাত দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে বারপোস্টের দিকে তাকিয়ে অভিজিৎ মণ্ডল। কয়েক মুহূর্ত নিথর। চোখে-মুখে শুধু বিস্ময়!
বিপক্ষ বক্সের সামনে থেকে উড়ে আসা সাদামাঠা একটা লং বল-এ যে গোল হতে পারে, সেটা বোধহয় ইস্টবেঙ্গল গোলকিপারের বিশ্বাস হচ্ছিল না! তবে দিন কয়েক আগের ডার্বি-নায়ক কিন্তু আরেকটু সতর্ক থাকতে পারতেন! কারণ, পুণের বালেওয়ারি স্টেডিয়ামে ম্যাচের তিন মিনিটেই মুম্বই এফসি-র যে স্ট্রাইকার ডান পায়ের সূক্ষ্ম টোকায় নিখুঁত ‘ফিনিস’ করলেন, তাঁর নাম ওডাফা কিংবা টোলগে নয়। তিনি চল্লিশোর্ধ্ব ইউসুফ ইয়াকুবু। চালসে তো নেই-ই, উল্টে গোলের খিদে আগের মতোই গনগনে। চিমা ওকোরি বলছিলেন, “ফুটবলের প্রতি ইয়াকুবুর দায়বদ্ধতা অতুলনীয়। এখানে এত পরিশ্রমী ফুটবলার খুব কমই এসেছে। ইয়াকুবুর বৈশিষ্ট, ও এক জন প্রকৃত টিমম্যান। ব্যক্তিগত রেকর্ডের জন্য খেলে না।”
আটত্রিশ বছর অবধি চুটিয়ে খেলা চিমার ফিটনেস টোটকা, “লম্বা ফুটবল কেরিয়ারের স্বপ্ন দেখতে হলে ম্যাচের দিনও সকালে পুরোদমে প্র্যাকটিস করতে হবে। আমি ওটায় ফাঁকি দিইনি।” চিমার মতো ইয়াকুবুও ম্যাচের সকালে প্র্যাকটিস করেন কি না জানা নেই। তবে সোমবার ম্যাচের শুরুতেই লাল-হলুদের গোয়ান কোচ আর্মান্দোর ঘুম কেড়ে নিলেন মুম্বইয়ের ঘানাইয়ান স্ট্রাইকার। ফোনে আর্মান্দো বললেন, “ইয়াকুবুর কাছেই হেরে গেলাম। শুরুতেই গোল খেলে কামব্যাক করা সহজ নয়। তবু সেটাও কেভিনের গোলে হলেও ইয়াকুবুকে আটকাতে পারলাম না। এই বয়সেও কী টার্নিং! দৌড়, স্কিল! আমার কাছে স্কোরলাইন ইয়াকুবু-৩ : ইস্টবেঙ্গল-২।” মাঠের ভিতরে বড় ফুটবলার হওয়ার প্রমাণ আরেক বার দেওয়ার পর মাঠের বাইরে সৌজন্যতার পরিচয় রাখলেন ইয়াকুবু। তাঁর পুরনো টিমকে হারানোর পর ম্যাচ শেষে প্রত্যেক লাল-হলুদ ফুটবলারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সটান ছুটলেন আর্মান্দোর দিকে। জড়িয়ে ধরলেন প্রতিপক্ষ কোচকে। মুগ্ধ আর্মান্দো বলছিলেন, “ভাল ফুটবলার হতে হলে আগে ভাল মানুষ হতে হয়। ইয়াকুবু আরও অনেক বছর খেলবে।” |
ইস্টবেঙ্গলের হারের পিছনে ইয়াকুবু প্রথম কারণ হলে, দ্বিতীয় কারণ লাল-হলুদ রক্ষণ। সেই চিরাচরিত মুখগুলো খেললেও তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়া খুঁজে পাওয়া যায়নি। মুম্বইয়ের তিনটে গোলই ওপারাদের ডিফেন্সের ভুলে। লং বলের উপর সূক্ষ্ম টাচে ইয়াকুবুর গোলের সময় অর্ণব মণ্ডলের পাত্তা নেই। আমেদ যখন চকিত টার্নিংয়ে ২-১ করলেন, ওপারা-সৌমিকের মধ্যে বিশাল দূরত্ব। এন প্রদীপ ফাঁকায় হেড করে তৃতীয় গোল করে গেলেন। বাধা দেওয়ার কেউ নেই। আর্মান্দো স্বীকার করে নিলেন, “ডিফেন্সের ভুলে তিন গোল হজম করতে হল।” কিন্তু চার বছর একই থাকা ডিফেন্স আচমকা ভেঙে পড়ল কেন?
দুটো কারণ।
এক) ওপারা-সৌমিক পুরো ফিট নন। ইয়াকুবু-মহম্মদ রফিদের চোরাগতির সামনে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল আর্মান্দোর ছেলেদের। অথচ ইয়াকুবু, ক্লাইম্যাক্স লরেন্স, প্রদীপ, আনোয়ারের মতো বড় ক্লাবের বাতিল ফুটবলারদের নিয়ে গড়া মুম্বই এফসি দলের গড় বয়স তিরিশেরও বেশি। উল্টো দিকে তরুণ ইস্টবেঙ্গল দলের রিপোর্ট কার্ড এ রকম ওপারা আর সৌমিকের হ্যামস্ট্রিং। হরমনজ্যোতের হাঁটু। কেভিনের কুচকি আর সুয়োকার পাঁজরে চোট। আর্মান্দো বললেন, “ওপারার এমআরআই করাতে হবে। সুয়োকার যে রকম লেগেছে কাল সকালের আগে কিছু বলতে পারব না। মনে হচ্ছে, প্রথম দলের বেশ কিছু ফুটবলারকে পরের ম্যাচে পাব না।”
দুই) মেহতাবের অনুপস্থিতি। চোটের জন্য এ দিন খেলতে পারেননি। ডিফেন্সিভ ব্লকারের জায়গায় মেহতাবের বিকল্প খুঁজে বার করতে পারেননি আর্মান্দো। বলছিলেন, “মেহতাব থাকলে ডিফেন্সে এত সমস্যা হত না। ইয়াকুবুও এত সহজে খেলে যেতে পারত না।”
হারের হতাশার মধ্যেই ইস্টবেঙ্গল দুটো ভাল গোল করেছে। বিপক্ষের চার ডিফেন্ডারের মধ্য দিয়ে কেভিনের ডান পায়ের দুরন্ত শটে ১-১ হয়। এর পর ১-৩ পিছিয়ে থেকে ৮২ মিনিটে আমেদের লাল কার্ডে মুম্বই দশ জন হয়ে গেলে জ্বলে ওঠেন সুয়োকা। শেষের তিন মিনিট আগে জাপানি মিডিওর নিখুঁত প্লেসিং হেডে দ্বিতীয় গোল। কিন্তু সে সবই লাল-হলুদের কাছে সান্ত্বনা, ম্যাচের সেরা ইয়াকুবুর ঔজ্জল্যের পাশে। আর আর্মান্দো?
ডার্বি জয় দিয়ে শুরু করেও ইউনাইটেড ড্র। মুম্বই এফসি হার। ময়দানের প্রথম গোয়ান কোচের গ্রাফ কি এখনই পড়তে শুরু করে দিল?
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, নওবা (রাজু), ওপারা, অর্ণব, সৌমিক, হরমনজ্যোৎ, তুলুঙ্গা (লেন), কেভিন, ডিকা, চিডি, সুয়োকা।
|
মোগার ফেরা নিয়ে ধোঁয়াশা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জেমস মোগা কবে ইস্টবেঙ্গলে ফিরবেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা আরও বাড়ল। সাফ কাপের মতো সেন্ট্রাল আফ্রিকায় একটি টুর্নামেন্ট হয় নাম সেকাফা কাপ। সেখানে প্রথম ম্যাচে মোগার দল হেরেছে জেনজিবারের সঙ্গে। পরের ম্যাচে কিনিয়ার কাছেও হেরে যায় মোগার দেশ দক্ষিণ সুদান। আজ মঙ্গলবার ইথিওপিয়ার সঙ্গে খেলা মোগাদের। তারপর তিনি হয়তো ভারতে ফিরবেন। তা হলে কেন ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার বারবার ফিরে আসার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ক্লাবকে? পুরো বিষয়টি নিয়ে কর্তারা বিরক্ত। তারা পুরো ব্যাপারটা ছেড়ে দিয়েছেন কোচের উপর। পুণেতে মুম্বই এফ সি-র কাছে হারের পর ফোনে ধরা হলে ইস্টবেঙ্গল কোচ আর্মান্দো কোলাসো বললেন, “কলকাতায় ফিরে ওকে নিয়ে কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। ও বলেছিল মুম্বই ম্যাচের আগেই পুণে আসবে। রাত পর্যন্ত আসেনি। সুয়োকা যদি চোট নিয়ে খেলতে পারে ও খেলবে না কেন?”
পুরনো খবর: পুণে মাঠের অসমান বাউন্স নিয়ে চিন্তায় লাল-হলুদ কোচ |