ডিসেম্বর মাসে আমন ধান কাটা এবং তার পরেই আলু বসানোর ভরা মরসুম। আর ওই মাসেই হুগলি জেলার ১৮টি ব্লকে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ৩২ লক্ষ ৭২ হাজার শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে নির্দেশিকা পাঠালেন জেলাশাসক।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই আর্থিক বছরে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় মোট শ্রমদিবস হয়েছে ৪৫ লক্ষ ৯১ হাজার ৮৬৫ দিন। ডিসেম্বর মাসের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা ওই নির্দেশিকা ব্লকগুলিতে পাঠানো হয় গত ২২ নভেম্বর। তাতে ২ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ৩২ লক্ষ ৭২ হাজার শ্রমদিবস তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওই লক্ষ্যমাত্রা পঞ্চায়েতের সংখ্যা অনুযায়ী ভাগ করে জেলার ১৮টি ব্লকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেওয়া হয় ধনেখালি ব্লককে। সেখানে ১৮টি পঞ্চায়েতের জন্য শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা ৮ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭০৫টি। আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতে লক্ষ্যমাত্রা ৮ লক্ষ ৭ হাজার ৩৭৬টি। খানাকুল-১ ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের জন্য ৬ লক্ষ ৯৮ হাজার ৫১৪টি। এ রকমই ক্রমান্বয়ে আছে হরিপাল ব্লক, গোঘাট-২ ব্লক-সহ ১৮টি ব্লকই। প্রকল্পের জেলার নোডাল অফিসার প্রেমকিশোর কাঁসারি বলেন, “লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে বিডিওদের উপায় বের করতে বলা হয়েছে।” |
বিপুল ওই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ কার্যত অবাস্তব, অভিযোগ তুলেছেন দিশাহারা বিডিওরা। কাজের ক্ষেত্র খুঁজতে প্রকল্পের সহকারী প্রোগ্রাম অফিসারদের ঘুম ছুটছে। ক্ষুব্ধ বিভিন্ন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও। জেলা প্রশাসনের এই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ধনেখালির বিডিও সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এখানের মতো কৃষিপ্রধান এলাকার ডিসেম্বর মাসে ওই লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া বাস্তবসম্মত নয়। তবু, বিভিন্ন পঞ্চায়েতে গিয়ে উপায় খুঁজতে বৈঠক করা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা ছাড়িনি।” তারকেশ্বরের বিডিও প্রভাংশু হালদার বলেন, “তারকেশ্বর এলাকায় ধান কাটা প্রায় আলু লাগানোর কাজ চলছে। ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখের পরে কাজ শুরু সম্ভব হতে পারে।” গোঘাট-২ বিডিও শিবপ্রিয় দাশগুপ্তের বক্তব্য, “শুধু ধান কাটা এবং তার পরে আলু বসানোর কাজই শুধু বাধা নয়, চাষের কাজে আগে ভোরের দিকে বা সকালে চাষের কাজ সেরে কয়েক ঘণ্টা যে পুকুর সংস্কারের মতো কাজ করাব, তারও উপায় নেই। কারণ মাঠে ধান বা আলুর কাজ হওয়ায় ভরা পুকুর থেকে এখন জল বের করা যাবে না। এ কথা জেলাশাসককে জানিয়েছি।”
একই অসুবিধার কথা জানিয়েছেন, আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুই, খানাকুল-১ ব্লকের বিডিও গোবিন্দ হালদার প্রমুখ। যদিও পোলবা-দাদপুরের বিডিও ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য তাঁদের ১ লক্ষ ৫০ হাজার ৩৪১ শ্রমদিবসের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে বলেন, “রাস্তার কাজ, নিকাশি-সংস্কার ইত্যাদি কিছু কাজ করা হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চেষ্টা চলছে।”
অন্য দিকে, পঞ্চায়েত প্রধানদের মধ্যে গোঘাট-২ ব্লকের কুমারগঞ্জ পঞ্চায়েতের প্রধান বংশী রায় বলেন, “এই সময়ে যে যাঁর চাষাবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। তা সত্ত্বেও কাজ চাইলে কাজ হয়তো হবে, কিন্তু কাজের গুণমান থাকবে না। গত দু’বছরে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে জেলা প্রশাসন থেকে যতবারই লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, ততবারই কেমন কাজ হয়েছে, সে প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঞ্চায়েত প্রধানদের বক্তব্য, “গতবার মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসার আগে যে বিপুল লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ করতে মোরাম রাস্তায় ঝাঁট দেওয়া হয়েছে, খেলার মাঠ থেকে নুড়ি বাছার মতো কাজ হয়েছে। বৃক্ষরোপণের জন্য গর্ত খোঁড়া হলেও তা করা হয়নি।” অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মুক্তা আর্য বলেন, “অসুবিধাগুলি খতিয়ে দেখছি। সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।” |