ইট কেনার জন্য ভাটা মালিককে টাকা দিয়েছিলেন এক যুবক। কিন্তু ইট পাননি। ক্রেতা সুরক্ষা আদালত ভাটা মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিলেও তিনি তা অগ্রাহ্য করেন। সোমবার ওই ভাটামালিককে আট মাসের জন্য জেল হাজতে পাঠাল হাওড়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।
ক্রেতা সুরক্ষা আইনে কিছু ক্ষেত্রে কড়া সাজার কথা থাকলেও শ্রীঘরবাসের নজির বেশি নেই। এ দিনের রায়কে স্বাগত জানিয়ে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, “এই আদালতকে বুড়ো আঙুল দেখানো যাবে না। দোষীদের নামে পরোয়ানা জারি এবং হাজতবাস করানোর যে আইনি সংস্থান রয়েছে তা প্রয়োগ করতে জেলায়-জেলায় বিচারকদের বলা হচ্ছে। সুফলও যে মিলছে, হাওড়ার ঘটনা তার প্রমাণ।” সাজাপ্রাপ্তকে উলুবেড়িয়া মহকুমা উপ-সংশোধানাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইটভাটা মালিকের নাম অসীম মৈনান। বাড়ি শ্যামপুরের গোবিন্দপুর গ্রামে, ভাটা বাগনানের গদাইপুরে। ২০১১ সালের গোড়ায় ১২ হাজার ইট কেনার জন্য আমতার খসনান গ্রামের অরুণ মণ্ডল অসীমবাবুর ভাটায় যান। ১২ হাজার ইটের দাম ঠিক হয় ৫৪ হাজার টাকা। দু’দফায় মোট ৫০ হাজার টাকা তিনি অসীমবাবুকে অগ্রিম দেন। ১০ মার্চের মধ্যে পাওয়ার সময়ে বাকি ৪ হাজার টাকা মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে চুক্তি হয়। এর পরে দিনের পর দিন ভাটায় গেলেও অরুণবাবু ইট বা টাকা কোনওটাই পাননি। ২০১২-র ৮ ডিসেম্বর তিনি মামলা করেন। আদালত মালিককে টাকা ফিরিয়ে দিতে বলে। মানসিক হেনস্থার জন্য ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ ও মামলার খরচ বাবদ দু’হাজার টাকা দিতে বলা হয়।
এর পরেও কিন্তু ভাটা মালিক অরুণবাবুকে একটি পয়সাও দেননি। বিষয়টি তিনি আদালতকে জানালে অসীম মৈনানকে গ্রেফতার করে হাজির করাতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁকে ধরা যায়নি। আদালত সাত বার পরোয়ানা জারি করে। দ্রুত ধরা না-হলে শ্যামপুর থানার ওসিকে শো-কজ করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়। তাঁর বাড়ি থেকে অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশও দেয় আদালত। এরই মধ্যে ২৫ নভেম্বর অন্য একটি মামলায় গ্রেফতার হন অসীম। উলুবেড়িয়া এসিজেএম আদালত তাঁকে জেল হাজতে পাঠায়। খবর পেয়ে শ্যামপুর থানার পুলিশও উলুবেড়িয়া মহকুমা উপ-সংশোধনাগারে গিয়ে তাঁকে ফের গ্রেফতার করে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে জানিয়ে দেয়।
আদালতে অসীম মৈনান বলেন, “আমি ভাটা তুলে দিয়েছি। ইট দেব কী ভাবে? এখন নন্দকুমারে ভেড়ির ব্যবসা করি। তাতেও লোকসান। তাই টাকা দিতে পারিনি।” হাওড়া জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের সভাপতি তুষারকান্তি ভট্টাচার্য ছাড়াও ঝুমকি সাহা ও প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় নামে দুই সদস্যকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ তাদের রায়ে জানায়, ক্ষতিপূরণের পরিমাণ সুদে-আসলে মিলে ৭৪ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। সেই টাকা না-দেওয়ায় অসীম মৈনানকে সাত মাস জেল খাটতে হবে। এ ছাড়াও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাস কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। |