সম্পাদকীয় ২...
সাম্রাজ্য বনাম স্বাধিকার
উরোপীয় ইউনিয়নের সহিত ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পথে বাধা হইয়া দাঁড়াইল রাশিয়া। আরও পাঁচটি সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সহিত ইউক্রেনেরও কথা ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহিত চুক্তিবদ্ধ হওয়ার। শেষ লগ্নে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বাঁকিয়া বসায় তাহা বানচাল হইল। তিনি অবশ্য রাশিয়ার চাপের কাছে নতিস্বীকারের অজুহাতটি সততার সহিত উল্লেখ করিয়াছেন। ইউক্রেনের জনগণ এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রাজধানী কিয়েভ-এর ‘স্বাধীনতা-বাগ’-এ লাখে-লাখে সমবেত হইয়া তীব্র আন্দোলনে অবতীর্ণ। রক্তপাতের আশঙ্কা মূর্ত। সমগ্র বিরোধী পক্ষ, এমনকী কারাবন্দি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উলিয়া তাইমোশেঙ্কোও সরকারের ইস্তফা দাবি করিয়াছেন। ২০০৪ সালের ‘কমলা বিপ্লব’-এর জেরে নির্বাচিত এই তাইমোশেঙ্কোকে সরাইয়াই রুশপন্থীরা ইয়ানুকোভিচকে গদিতে বসান। ভ্লাদিমির পুতিন সমর্থিত এই ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট যে গণদাবি উপেক্ষা করিবেন, ইহা অস্বাভাবিক নহে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহিত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের দাবি আসলে ইউক্রেনের মতো সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলির ইউরোপীয় সত্তায় প্রত্যাবর্তনের ঐতিহাসিক দাবি, প্রথমে জারের রাশিয়া ও পরে বলশেভিক সোভিয়েত ইউনিয়ন যাহা খর্ব করিয়া লিথুয়ানিয়া, এস্টোনিয়া লাটভিয়ার মতো বল্টিক রাজ্য এবং জর্জিয়া, আর্মেনিয়া, বেলারুশ, আজেরবাইজান, মলডোভার মতো ইউরোপীয় ভূখণ্ডকে এশীয় স্বৈরাচারের অন্তর্ভুক্ত করিয়াছিল। রাশিয়ার বর্তমান শাসকরা যে আদৌ জার ও স্তালিনের সাম্রাজ্যিক উত্তরাধিকার ছাড়িয়া দিতে প্রস্তুত নন, তাহা ক্রমেই স্পষ্ট হইতেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহিত এই প্রজাতন্ত্রগুলি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে এক পা অগ্রসর হইলেই পুতিনের রাশিয়া মিখাইল গোর্বাচভের দেওয়া প্রতিশ্রুতি হইতে দ্রুত প্রস্থান করিতেছে এবং রুশ আধিপত্য কায়েমে তৎপর হইতেছে। হয় সামরিক হুমকি, নয়তো আর্থিক প্রলোভন কিংবা ভাতে-মারার হুমকি দিয়া ওই সব রাজ্যের নির্বাচিত শাসক গোষ্ঠীকে নিরস্ত করা হইতেছে। ইউক্রেনের জনসাধারণ ইউরোপের শরিক হইতে আগ্রহী। ইউরোপও আকর্ষক অনুদানের প্রস্তাব দিয়াছে। কিন্তু পুতিন ইউক্রেনকে বর্তমানের অর্ধেক দরে তেল সরবরাহের প্রস্তাব দিয়াছেন। ইউক্রেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের শস্যাগার বলিয়া গণ্য হইত। তাহাকে এত সহজে রাশিয়া ছাড়িবে না।
প্রশ্ন অবশ্য শুধু ইউক্রেনের নয়। মূল রুশ ভূখণ্ডকে বাদ দিলে যে সব সংলগ্ন ভূভাগ ষোড়শ শতকে ‘আইভান দ্য টেরিব্ল’-এর কাল (১৫৩৩) হইতে ১৯১৭ সালে জার দ্বিতীয় নিকোলাস পর্যন্ত রুশ শাসকরা দখল করিয়াছিলেন, বলশেভিক উত্তরসূরিরা যাহার উপর সোভিয়েত রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব সম্প্রসারণে তৎপর হন, পিটার দ্য গ্রেটকে বাদ দিলে আর কেহই সেই বিস্তীর্ণ ভূভাগ ও তাহাতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে ইউরোপীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ইতিহাসে সম্পৃক্ত হইতে দেন নাই। অথচ জনসাধারণের মধ্যে ইউরোপ হইতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা ও তাহার সহিত পুনর্মিলনের আকাঙ্ক্ষা থাকিয়াই গিয়াছে। রাশিয়ায় ইয়েলতসিন জমানার মুক্ত বাতাস এবং ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসানের ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যাপ্তি ওই আকাঙ্ক্ষাকে তীব্রতর করিয়াছে। রাষ্ট্র বিংশ শতকের স্থিতাবস্থায় ফিরিতে চাহিতেছে। কিন্তু জনসাধারণ একবিংশ শতকে লভ্য বিকল্পের সাধনায় মগ্ন হইতে উৎসুক। দ্বন্দ্ব বহ্নিমান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.