|
|
|
|
পড়ুয়াদের গলায় ফাঁস পরিয়ে ইতিহাস শিক্ষা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • গুয়াহাটি ও কলকাতা |
ক্লাসঘরে পরপর দাঁড়িয়ে বছর দশেকের কয়েকজন পড়ুয়া। সকলের গলায় দড়ির ফাঁস! ভয়ে কাঁপছে প্রত্যেকে। পাশে দাঁড়িয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তখন জোর গলায় বলছেন—বন্দেমাতরম। তারপর? হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণদান মোটেই নয়, প্রাণ বাঁচাতে দড়ি গলায় লট্কেই সটান দৌড় দিল পড়ুয়ারা।
স্বাধীনতা আন্দোলনের ‘ব্যঙ্গচিত্র’ নয়, একেবারেই বর্তমানের ঘটনা। বিজ্ঞান পাঠ্যক্রমে হাতেকলমে পরীক্ষা করা যায়। এ বার ইতিহাস নিয়ে ‘ব্যবহারিক’ জ্ঞান দিতে গিয়ে এমনই কাণ্ড করলেন এক শিক্ষক। শোণিতপুর জেলার কঁকালভাঙি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ধীরেন কাকতি ইতিহাস ‘বোঝাতে’ গিয়ে দড়ির ফাঁস দিলেন পড়ুয়াদের গলায়! স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস পড়াতে গিয়ে ফাঁসির ‘প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস’ করানোর এমন ঘটনা নজিরবিহীন। ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রায়ই মত্ত অবস্থায় স্কুলে যান ধীরেনবাবু। গতকালও তাই করেছিলেন। চতুর্থ শ্রেণিতে ইতিহাসের ক্লাস নিতে গিয়েছিলেন হাতে কয়েকটি দড়ি নিয়ে। শিক্ষকের হাতে দড়ি দেখে প্রথমে কৌতুহল ছিল ছাত্রছাত্রীদের। পরে তা বদলায় আতঙ্কে।
শ্রেণিকক্ষে ‘ফাঁসিকাণ্ড’ নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইতিহাসের অধ্যাপক সুরঞ্জন দাস বলেন, “ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর এমন অদ্ভুত পদ্ধতির কথা কখনও শুনিনি। এই পদ্ধতি অবৈজ্ঞানিক তো বটেই। এ ভাবে ইতিহাস পঠনপাঠনের প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলেও আমার মনে হয়।”
ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছে, ‘স্বাধীন ভারত’ বই থেকে অসমের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিষয়ে পড়াতে শুরু করেন ধীরেনবাবু। সেই প্রসঙ্গেই মণিরাম দেওয়ান, কুশল কূঁয়রের কথা ওঠে। ওই দুই স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ফাঁসি দিয়েছিল ইংরেজরা। সেই তথ্য জানানোর পর ধীরেনবাবু জানান, ফাঁসির ব্যবহারিক জ্ঞান দেওয়া হবে সকলকে। তার ব্যবস্থা করেই এসেছেন। একে একে ছাত্রছাত্রীদের ডেকে তাদের গলায় দড়ির ফাঁস দিতে থাকেন। বাকিদের শেখাতে থাকেন, কেমন করে ফাঁসি দিতে হয়!
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পালায় ছাত্রছাত্রীরা। খবর পেয়ে অভিভাবকেরা স্কুলে পৌঁছন। তুমুল হট্টগোল শুরু হয়। কিন্তু, ধীরেনবাবুর হেলদোল নেই। নিজের সিদ্ধান্তে অনড় থেকে জানান, তিনি কোনও ভুল করেননি। বিজ্ঞানে ব্যবহারিক শিক্ষা থাকলে ইতিহাসে কেন থাকবে না? ফাঁসি কী জিনিস তা চোখের সামনে না-দেখলে ছাত্রছাত্রীরা নেহাত পড়া মুখস্ত করেই বাড়ি চলে যাবে। তা হতে দেওয়া যায় না। |
|
|
|
|
|