আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস
দু’বছর ধরে বন্ধ প্রতিবন্ধী চিহ্নিতকরণ
৯৯৫ সালে তৈরি হওয়া আইনে বলা আছে, যদি কোনও প্রতিবন্ধীকে তাঁর প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা হয়, অথবা তাঁর প্রাপ্য মেলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়, সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। দোষ প্রমাণিত হলে, শাস্তি হিসেবে তার ছ’ মাসের জেল কিংবা ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে। কিন্তু গাঁ-গঞ্জের ক’জন প্রতিবন্ধীই বা জানেন এমন কোনও আইনের কথা? ফলস্বরূপ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দিনের পর দিন নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের একটা বড় অংশের প্রতিবন্ধী। নাগরিক হিসেবে তাঁদের প্রাপ্য অধিকার সম্বন্ধে সচেতন করার কাজ করে চলেছে শান্তিনিকেতনে স্থিত জেলা প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র।
এমনিতে জেলায় দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিবন্ধী চিহ্নিতকরণের কাজ থমকে রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বর্তমানে এমন মানুষের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়েছে। কিন্তু গত দু’ বছর ধরে চিহ্নিতকরণ না হওয়ায় ক্রমশ বাড়ছে ওই সংখ্যা। মেডিক্যাল বোর্ড নিয়ে ধারাবাহিকতার অভাবেই এই চিহ্নিতকরণ কর্মসূচি থমকে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এর আগে শেষ ২০১২ সালে রামপুরহাটে ওই মেডিকেল বোর্ড করার সময়ে চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকায় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে মানসিক ভারসাম্যহীন এমন প্রায় দেড়শোর কিছু বেশি আবেদন জমা আছে। প্রায় দু’ বছর কেটে গেলেও ওই আবেদনেরও কোনও সুরাহা হয়নি। অভিযোগ, সরকারি আধিকারিকদের একাংশের সদিচ্ছা এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে জেলার প্রায় ৭০ শতাংশ প্রতিবন্ধী উপেক্ষিত হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রই বিভিন্ন জায়গায় যখন যেমন পারছে, প্রতিবন্ধী চিহ্নিতকরণ কর্মসূচি নিচ্ছে। কিন্তু মেডিক্যাল বোর্ড না বসায় এখনও তাতে সরকারি শিলমোহর পড়ছে না।
প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে বীরভূমেও ২০০৯-১০ সালে ওই কেন্দ্রটি গড়ে ওঠে। উদ্যোগী হয়েছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। পরিচালনার ভার ছিল এলাকারই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। জেলায় প্রতিবন্ধীদের জন্য নোডাল এজেন্সি হিসেবে কাজ শুরু করে ওই সংস্থা। কেন্দ্রের সম্পাদক সুমন সামন্ত বলেন, “ডিসেম্বরে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হলেও, আমরা বছরভরই জেলার বিভিন্ন জায়গায় নানা কর্মসূচি নিই। জেলা সদর থেকে শুরু করে ছোট ছোট গ্রামে সচেতনামূলক প্রচার অভিযান, প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন, শিবির করে উপকরণ বিলি-সহ নানা সাহায্য তুলে দেওয়া হয়।” কলকাতা অবস্থিত ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অর্থোপেডিক্যালি হ্যান্ডিক্যাপ্ড’-এর সাহায্যে ওই কেন্দ্র বিভিন্ন এলাকায় শিবির করে শনাক্তকরণ কর্মসূচি, উপকরণ বিলি এবং প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কাজ করছে। জেলায় একমাত্র এই কেন্দ্রেই ‘স্পিচ থেরাপি’, ‘ফিজিওথেরাপি’, মোবিলিটি উপকরণ, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট-সহ একাধিক ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও অনুদানের অভাবে প্রয়োজনীয় তহবিল গড়তে না পারায় যে কোনও দিনই ওই সব পরিষেবাও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
ওই কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ব্লক থেকে রাজ্য সর্বত্র প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা একটি বিভাগ গড়ে তোলার দাবি জানানো হয়েছিল। রাজ্যের তৎকালীন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রকে তা প্রস্তাব আকারে পাঠানোও হয়েছিল। কেন্দ্রের দাবি, এখনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। কেন্দ্রের তরফে জেলা মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর এবং এই কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে পঞ্চায়েত ধরে ধরে চিহ্নিতকরণ কর্মসূচির আয়োজন করে প্রতিবন্ধীদের হাতে মানপত্র তুলে দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছে। জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “পরিকাঠামো না থাকায় পঞ্চায়েত বা ব্লক স্তরে শিবির করে চিহ্নিতকরণ কর্মসূচি এবং তাঁদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেওয়ার কাজ করা যাচ্ছে না। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সিএমওএইচয়ের সঙ্গে কথা বলব। আপাতত মহকুমা স্তরে প্রত্যেক মাসে ধারাবাহিক ভাবে ওই চিহ্নিতকরণ কর্মসূচি শুরু হয়, তার জন্য ব্যবস্থা নেব। কাউকেই প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে না।” অন্য দিকে, বহুবার চেষ্টা করা হলেও জেলা সমাজকল্যাল দফতরের আধিকারিক প্রদীপকান্তি কুমার ফোন ধরেননি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.