শুরু হল হিংসাত্মক প্রতিবাদের আরও একটা সপ্তাহ। আরও এক প্রস্ত নয়া সংঘর্ষ, কাঁদানে গ্যাস, রবার বুলেট এবং সরকার-বিরোধিতার চেনা স্লোগান, এ সব কিছু নিয়ে ঘুম ভাঙল ব্যাঙ্ককের বাসিন্দাদের। উত্তেজনার প্রহর কাটিয়ে কবে যে তাঁদের শহর চেনা মেজাজে ফিরবে, তা জানেন না তাঁরা।
তবে শুধু তাঁরাই নন। গত আট দিন ধরে তাইল্যান্ড বা বলা ভাল ব্যাঙ্ককের বুকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা সরকার-বিরোধিতার শেষটা ঠিক কোথায়, তা বিরোধীরা নিজেও জানেন না। তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গলাক শিনাবাত্রা-সহ গোটা সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। ক্ষমতা তুলে দিতে হবে ‘পিপলস কাউন্সিলের’ হাতে। এবং এ কাজ করতে প্রধানমন্ত্রীকে মাত্র দু’দিন সময় দিয়েছেন বিরোধীরা। এতেই শেষ নয়। বিভিন্ন সরকারি সদর দফতরের সামনে এ দিন দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে বিরোধীদের। কখনও দফতরের সুরক্ষায় থাকা পুলিশকর্মীদের লাঠি দিয়ে মারেন তাঁরা। তার প্রত্যুত্তরে রবিবারের মতো এ দিনও পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। কোথাও বা চালানো হয় জলকামান, রবার বুলেট। |
পুলিশকে লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ছেন এক প্রতিবাদী। সোমবার তাইল্যান্ডে। ছবি: এএফপি। |
কিন্তু গদিত্যাগের প্রশ্নে এখনও অনড় ইঙ্গলাক। সোমবারও জানানা, শান্তি ফেরাতে আলোচনায় তিনি রাজি। কিন্তু গদি ছাড়বেন না। এর পিছনে সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতাকেই দেখাচ্ছেন তিনি। তাঁর বয়ানে, “আমার অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করুন। সংবিধানের কোন আইনের বলে বিরোধীদের দাবি মেনে নেব?” সীমাবদ্ধতাটা কীসের? আসলে যে পিপলস কাউন্সিলের হাতে ক্ষমতা তোলার দাবি জানাচ্ছেন বিরোধীরা, তা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি নয়। আর দেশ শাসনের ক্ষমতা এই অগণতান্ত্রিক পরিষদের হাতে ন্যস্ত করা সংবিধানের পরিপন্থী। একে হাতিয়ার করেই গদি বাঁচানোর লড়াই করছেন ইঙ্গলাক।
যুক্তি-পাল্টা যুক্তি চলছেই। চলছে রবার বুলেট, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস। নিরাপত্তার খাতিরে বন্ধ থাকছে স্কুল-বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন। কিন্তু এরই ফাঁকে গত কাল গভীর রাতে সেনা, নৌসেনা এবং বিমানবাহিনীর অফিসারদের উপস্থিতিতে ইঙ্গলাকের সঙ্গে গোপন বৈঠক সেরে ফেলেছেন বিরোধী নেতা সুতেপ তাউগসুবান। নিট ফল? শূন্য। টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তৃতায় সুতেপ বলেছেন, “কোনও দর কষাকষি হবে না। পুরো বিষয়টি দু’দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।” কিন্তু কী ভাবে? ফের নির্বাচনের পথে হাঁটার কথা কি ভাবছে বিরোধীরা? সুতেপের দাবি, নতুন সরকারও যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনাবাত্রার প্রভাব মুক্ত থাকবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন তিনি। তবে ইঙ্গলাক-সমর্থকদের যুক্তি, ব্যাঙ্ককের বাইরে বিশেষত তাইল্যান্ডের উত্তরে তাকসিন ও ইঙ্গলাকের জনপ্রিয়তা প্রবল। তাই ভোট হলে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন ইঙ্গলাকই। এই আশঙ্কা থেকেই ভোটের পথে হাঁটতে চাইছেন না বিরোধীরা। অতএব একটাই পন্থা ‘পিপলস কাউন্সিল’। যা অগণতান্ত্রিক।
চক্রাকার এই যুক্তির জালে আটকে তাইল্যান্ডের ভবিষ্যৎ। যদিও কেউ কেউ বলছেন, ভবিষ্যৎ নয়, এ আসলে তাইল্যান্ডের ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি। যার শেষ কোথায়, কেউ জানে না।
|