এ যেন সিন্ধবাদ নাবিকের গল্পের সেই বৃদ্ধ। যে ছলে-বলে কৌশলে চড়ে বসতেন কোনও না কোনও যুবকের পিঠে। তার পরে সেই যুবক আমৃত্যু বইতে বাধ্য হতো তাঁকে।
টানা ১৭ বছর ধরে নিজের পোলিও আক্রান্ত ভাইকে নিজের পিঠে করে বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর দাদা। তবে আউশগ্রামের এড়াল গ্রামের বাসিন্দা দাদা আয়াত নবি মল্লিক সানন্দে বইছেন তাঁর প্রতিবন্ধী ভাই নিয়াজ নবিকেপার্থক্য শুধু এটুকুই। এই কাজ করতে গিয়ে দাদা নিজে মাধ্যমিকের পরে আর পড়তে পারেননি। কিন্তু ভাইকে পড়িয়েছেন স্নাতক স্তর পর্যন্ত। মানকর কলেজ থেকে স্নাতক ভাইয়ের এখনও বাড়ির বাইরে কোথাও যাওয়ার দরকার হলেই তাঁকে পিঠে চাপিয়ে নিয়ে যেতে হয় দাদাকে। |
এই দাদা-ভাইয়ের গল্প জানে গোটা আউশগ্রামের মানুষ। বাড়িতে বসে এখন গৃহশিক্ষকতা করে নিয়াজ। তাঁর আক্ষেপ,“দাদা আমার চেয়ে লেখাপড়ায় ভাল ছিল। কিন্তু মাধ্যমিকের পড়ে পড়তে পারলো না। কিন্তু আমি ওর পাশে দাঁড়াতে পারলাম কই! কত লোকের কাছে গেলাম, চাকরি চাইলাম। এখনও কিছুই তো পেলাম না।”
১৯৯২ সালে আয়াতদের গোলাম নবি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আয়াত তখন পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ও নিয়াজ তৃতীয় শ্রেণিতে। এর কিছু দিনের মধ্যে তিনদিনের জ্বরে নিয়াজ নিজের হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অনেক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলেও পোলিও আক্রান্ত নিয়াজের হাঁটার ক্ষমতা ফেরেনি।
সেই শুরু। এক স্কুল ছাত্র তার চেয়ে মাত্র তিন বছরের ছোট ভাইকে নিজের পিঠে নিয়ে স্কুলে যেতে শুরু করে। তারপরে থেকে কেটে গিয়েছে টানা ১৭টি বছর। আজও ভাইকে পিঠে নিয়েই নানা হাঁটেন আয়াত।
দরিদ্র পরিবারের প্রতিদিন দিন আনি দিন খাই অবস্থা। সংসার চালাতে স্থানীয় বাজারে মাছ বিক্রি করেন আয়াত। সেই টাকা দিয়ে শুধু ভাইকেই নয়, নিজের ছোট বোন আমিনাকেও স্নাতক পর্ব পার করিয়েছেন। আমিনা এখন স্থানীয় এক নার্সারি স্কুলে পড়ান। সবার ছোট ভাই রতন পেশায় কাঠের মিস্ত্রী।
আয়াতের ক্ষোভ, “রাজনৈতিক নেতা থেকে বিডিও, পুরপ্রধান সকলেই কাছেই গিয়েছি। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছু পাইনি। প্রতিবন্ধী হিসেবেও সাহায্য মেলেনি।”
বর্ধমান উত্তরের মহকুমাশাসক স্বপন কুন্ডু বলেন, “ ছেলে দুটোর কথা শুনে খারাপ লাগছে। আমি ওঁদের সঙ্গে দেখা করবো। চাকরি হয়তো দিতে পারবো না। তবে সরকারি সাহায্য দিতেই পারি। তবে সাহায্যর জন্য নিয়াজের প্রতিবন্ধী শংসাপত্র থাকতে হবে।” |