লাগামহীন অটো-গাড়ি, দুর্গাপুরে
নিত্যযাত্রী হারিয়ে ধুঁকছে মিনিবাস |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
শহর জুড়ে বেআইনি অটো ও ছোট গাড়ির দাপটে চাপে পড়ে গিয়েছে মিনিবাস।
দুর্গাপুর শহরে বর্তমানে সাড়ে সাতশোর বেশি সিএনজি অটো চলে। ট্রেকার, ম্যাক্স ক্যাব মিলিয়ে সংখ্যাটা আরও শ’পাঁচেক। বাস মালিকদের অভিযোগ, ভাড়া পর্যাপ্ত হারে না বাড়ায় এমনিতেই লভ্যাংশ তলানিতে ঠেকেছে। তার উপরে মিনিবাসের রুটে বেআইনি ভাবে অটো-ট্রেকার চলায় যাত্রিসংখ্যা কমে গিয়েছে। বাসমালিকদের সংগঠনগুলি অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
মিনিবাস মালিকদের সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের বিভিন্ন রুটে বর্তমানে প্রায় আড়াইশো মিনিবাস চলাচল করে। সবথেকে বেশি, প্রায় ৫০টি বাস চলে দুর্গাপুর স্টেশন থেকে মুচিপাড়া, বিধাননগর, ইস্পাতনগরীর একাংশ হয়ে বেনাচিতির প্রান্তিকাগামী ‘এইট-বি’ রুটে। প্রায় ৩৫টি মিনিবাস চলে স্টেশন থেকে বেনাচিতি পর্যন্ত। এছাড়া এ-জোন এবং বি-জোন হয়ে স্টেশন থেকে প্রান্তিকা যাতায়াত করে ৪০টি মিনিবাস। এ ছাড়াও রয়েছে লাউদোহা, মায়াবাজার, পাণ্ডবেশ্বর, জয়দেব ঘাট প্রভৃতি যাতায়াতের রুট।
বাসমালিকদের অন্যতম সংগঠন দুর্গাপুর প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার অ্যাসোসিয়েশন-এর সাধারণ সম্পাদক কাজল দে-র অভিযোগ, জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। তার উপর মিনিবাসের রুটে অবৈধ অটো চলছে। দিন-দিন তার সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি চালু হয়েছে ছোট গাড়ি। ফলে বাসে যাত্রীর সংখ্যা কমেছে। কমেছে বাস থেকে আয়ের পরিমাণও। কাজলবাবুর দাবি, “অবিলম্বে অটো ও ছোট গাড়ির দৌরাত্ম বন্ধ করতে না পারলে বহু মিনিবাস উঠে যাবে।”
২০০৯ সালের গোড়ার দিকে দুর্গাপুরের প্রথম সিএনজি চালিত অটো পরিষেবা চালু হয়। যে সমস্ত রুটে মিনিবাস পরিষেবা ছিল না বা কম ছিল, সেগুলিতেই ওই সব অটো চালানোর হবে বলে অটো মালিকদের সঙ্গে প্রশাসনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ বাস মালিকদের আর এক সংগঠন দুর্গাপুর মিনিবাস অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি অলোক চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর দাবি, অটোয় তিন জনের বেশি যাত্রী তোলা নিয়মবিরুদ্ধ। অথচ ৫-৬ জন ওঠে। আবার অধিকাংশ অটোই রুটে না চলে ‘রিজার্ভ’ খাটে।
অলোকবাবুর বক্তব্য, মিনিবাসের উপরে মালিক ছাড়াও কয়েক জন কর্মীর জীবিকা নির্ভর করে। তা ছাড়া, পড়ুয়া, পরিচারিকা, প্রতিবন্ধীদের ভাড়ায় ছাড়ের মতো নানা সুবিধা দেয় মিনিবাসগুলি। অথচ বেআইনি অটো বা ছোট গাড়ি বন্ধ করতে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগ নজরে আসছে না।
দুর্গাপুরের মুচিপাড়া থেকে কাঁকসার অজয় ঘাট রুটে শ্যামলাল সাহার মিনিবাস চলে। তিনি জানান, গত কয়েক মাসে অটো ও ছোট গাড়ির সংখ্যা বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। পুরনো ট্রেকারগুলিও চলাচল করে থাকে। ফলে বাসের আয় একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। শ্যামলবাবুর অভিযোগ, “প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা দিয়ে অর্থাৎ গ্রামীণ এলাকায় ‘ম্যাক্সি ক্যাব’ চলাচলের অনুমতি দেওয়া নিয়ম। সেখানে রুট সার্ভে না করেই এই ধরনের গাড়িগুলিকে চলাচলের অনুমতি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
মহকুমা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকা আগে একেবারেই মিনিবাস নির্ভর ছিল। যাত্রীদের কথা ভেবেই সিএনজি অটো, ম্যাক্সি ক্যাবের মতো গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে তা চলার কথা কিছু নির্দিষ্ট রুটে। মহকুমা পরিবহণ আধিকারিক অনিমেষ সিংহ সরকার বলেন, “বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” তবে দফতর সূত্রের খবর, ‘রুটিন চেকিং’ বাদে নিয়মিত অভিযান চালানোর মতো পরিকাঠামোই তাদের নেই। অটো চালকদের সংগঠন, আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত দুর্গাপুর সিএনজি অপারেটরস ইউনিয়নের সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, তাঁরা বেআইনি ভাবে মিনিবাসের রুটে অটো চলাচলের বিপক্ষে। তাঁর বক্তব্য, “প্রত্যেককেই নিয়ম মেনে চলতে হবে।”
সবাই যদি জানেন বেনিয়ম চলছে, দীর্ঘদিন ধরে তা চলছে কী করে সেই প্রশ্নটা কিন্তু এড়ানো যাচ্ছে না। |