বাড়ির কাছেই গুলিতে খুন যুবক, গ্রেফতার ৩ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
বাড়ির অদূরে এক ব্যক্তিকে গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে হিরাপুর থানার রাধানগরের নিচুপাড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম রাজেশ জায়সবাল (৩৫)। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাধানগর মোড়ের ছিন্নমস্তা পুকুরের কাছে জনবসতি এলাকায় রবিবার রাত সওয়া ১০টা নাগাদ রাজেশবাবুকে খুব কাছ থেকে তাঁর থুতনিতে গুলি করে দুষ্কৃতীরা। গুলির শব্দ পেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন আশপাশের বাসিন্দারা। রক্তাক্ত অবস্থায় রাজেশবাবুকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। রাজেশবাবুর স্ত্রী জ্যোতিদেবী পুলিশকে জানিয়েছেন, বাড়ি লাগোয়া একটি মুদি দোকান আছে রয়েছে তাঁদের। রবিবার রাত সওয়া ৯টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে অন্য কাজে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। বাড়ি ফেরার সময় ছিন্নমস্তা পুকুরের কাছে দু’টি বাড়ির মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় গুলি করা হয় তাঁর স্বামীকে। জ্যোতিদেবী বলেন, “রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রতিবেশী এক যুবক আমাকে বাড়িতে এসে খবর দেন আমার স্বামীর দুর্ঘটনা ঘটেছে। আমি ঘটনাস্থলে যাই। গিয়ে দেখলাম তাঁর শরীরে কোনও প্রাণ নেই। এরপর বাড়ির সবাইকে খবর দিয়েছি।” কমিশনারেটের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায় জানান, কী কারণে এই খুন তা জানতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। |
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন রাজেশবাবুর পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র। |
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ব্যবসায়ীক শত্রুতার জেরেই খুন হয়েছেন রাজেশবাবু। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মুদি দোকান ছাড়াও পরিবহণের ব্যবসা ছিল রাজেশবাবুর। তিনটি ছোট চাকার গাড়ি ভাড়ায় চালাতেন তিনি। এ ছাড়াও সম্প্রতি অংশীদারিতে কেনা একটি লরি ভাড়ায় চালাতে শুরু করেছেন তিনি। আড়ালে আবডালে রাজেশবাবু একটি আর্থিক লেনদেনের কারবারও চালাতেন বলে জেনেছে পুলিশ। এই কারবারটির পোশাকি নাম কমিটি খেলানো। পুলিশ খোঁজ নিয়ে জেনেছে, এটি একটি জটিল অঙ্কের আর্থিক কারবার। নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক নিয়ে একটি কমিটি বানানো হয়। এই কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়। সেই অর্থ অন্য কোথাও লগ্নি করা হয়। লগ্নির লভ্যাংশ কমিটির সদস্যদের আনুপাতিক হারে ভাগ করা হয়। জটিল এই বিষয়টি সাধারণ সদস্যেরা ঠিকমতো বুঝতে পারেন না। ফলে তাঁদের সঙ্গে এই কারবারের মালিকদের একটি সময়ের পরে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে বচসা ও মারামারি হয়। রাজেশবাবুর ক্ষেত্রে সে রকম কোনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কী না পুলিশ তার খোঁজ শুরু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই খুনের ঘটনায় যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা ওই কমিটির সদস্য ছিলেন। তদন্ত করতে নেমে পুলিশ জেনেছে, দু’মাস আগে বার্নপুরের ত্রিবেণী মোড়ের কাছে রাজেশবাবুকে কিছু দুষ্কৃতী আক্রমণ করেছিল। দুষ্কৃতীদের ভোজালির আঘাতে তাঁর ডান হাত জখম হয়। কিন্তু ব্যাপারটি থানায় জানাননি তিনি।
এলাকায় সুনাম থাকা রাজেশবাবুর খুনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, রাজেশবাবুকে খুনের ঘটনার পরেই পরিষ্কার এলাকায় দুষ্কৃতীদের আনাগোনা রয়েছে। এলাকায় পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তাঁরা। পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
|