সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এক ইনটার্নকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠার পরে এ বার নিয়মে বদল ঘটাল ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস। তা হল, কোনও প্রবীণ আইনজীবীর অধীনে ইনটার্ন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন হল, পরে তা মহিলা শিক্ষানবিশ আইনজীবীদের কাছে লিখিত ভাবে জানতে চাইবে বিশ্ববিদ্যালয়। অশোকবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন যে ইনটার্ন, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়কে এ বিষয়ে কিছু জানাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।
ওই ইনটার্নের অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিচারপতি আর এম লোঢার নেতৃত্বাধীন কমিটি বৃহস্পতিবারই তাদের রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছে। এর পর দিনই অভিযুক্ত হিসেবে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম প্রথম বার প্রকাশ্যে আসে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সব অভিযোগ অস্বীকার করে গোটা বিষয়টিতে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে জানালেও তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের পদ থেকে তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। শনিবার কল্যাণবাবু বলেন, “ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি নৈতিকতার কারণে ওঁর পদত্যাগ করা উচিত।” পদত্যাগ নিয়ে অবশ্য এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেছেন, “এখনও ঠিক করিনি, কী করব। দেখা যাক।”
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরোধ চলছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অতীতে একাধিক বার প্রকাশ্যেই রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের কাজকর্ম নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার মানবাধিকার কমিশনের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন জানাবে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজ্যের আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না বলে গোটা বিষয়টিই এড়িয়ে যান এ দিন।
গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরে অশোকবাবু আর ওই আইন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেব পড়াতে পারবেন কি না, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পি ইশ্বর ভট্ট বলেছেন, “অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের সুপারিশে অশোকবাবু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে আসেন। তিনি পড়াতে পারবেন কি না, সে সিদ্ধান্তও নিতে হবে তাদেরই। জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে বিষয়টি নিশ্চয়ই উঠবে। তার পরেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে।”
তবে অভিযোগ উঠেছে বলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এখনই কোনও পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়া ঠিক নয় বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীর। এ দিন কলকাতায় তিনি বলেন, “কেউ যখন খুশি, যে কোনও অভিযোগ জানাতে পারেন। কিন্তু তার সত্যাসত্য বিচার করার আগেই অভিযুক্ত অব্যাহতি নিতে যাবেন কেন! যদিও এ ক্ষেত্রে কী করা উচিত, তা অশোকই সব থেকে ভাল বলতে পারবেন।”
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কার্যত এই অভিযোগকে সমর্থন করে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কবীর বলেন, “মানুষ যত উঁচু পদে ওঠেন, ততই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার প্রবণতা বাড়ে। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে কি কেউ ষড়যন্ত্র করতে যায়!”
|