আলুর দর অগ্নিমূল্য হওয়ায় সরকার নিজেই বাজারে আলু সরবরাহ শুরু করেছিল। আপাতত সেই সরবরাহ বন্ধ। পাশাপাশি, ফের চড়ছে আলুর দর। শনিবার কোলে মার্কেটে জ্যোতি আলুর পাইকারি দর ছিল প্রতি কিলোগ্রাম ১৩-১৪ টাকা। আর মানিকতলা, নিউমার্কেট, লেকমার্কেট ও গড়িয়ার খুচরো বাজারে কোথাও ১৫, কোথাও ১৬ টাকা। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া পাইকারি দর হল প্রতি কেজি ১১ টাকা, এবং খুচরো ১৩ টাকা।
আলু ব্যবসায়ীদের কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন বাজারে আলু সরবরাহ করছিল সরকার। দিন কয়েক আগে সেই সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার জেরেই ফের বাড়তে শুরু করেছে জ্যোতি আলুর দাম। রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের এক পদস্থ অফিসারেরও বক্তব্য, “পরিস্থিতি ফের অস্বাভাবিক হচ্ছে।” তিনি জানান, আগামী মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী টাস্কফোর্সের বৈঠক ডেকেছেন। সেখানে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
গত ১ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, জ্যোতি আলুর পাইকারি দর হবে কেজি প্রতি ১১ টাকা এবং খুচরো দর ১৩ টাকা। সেই দরের চেয়ে বেশি নেওয়া হলে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে এমন কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তিনি নির্দেশ দেন রাজ্যের আলু বাইরে পাঠানো যাবে না।
এ দিকে, মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশের পরে হঠাৎ করেই বাজারে আলুর সরবরাহ কমে যায়। রাজ্য সরকার বাজারে আলু সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়। কৃষি বিপণন দফতর রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে খুচরো ব্যবসায়ীদের ১১ টাকা পাইকারি দরে আলু সরবরাহ করে। শর্ত ছিল, তা বিক্রি করতে হবে ১৩ টাকায়। ওই দফতরের এক আধিকারিক জানান, ৫ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন বাজারে আলু সরবরাহ শুরু করে সরকার। গত সপ্তাহে থেকে তা বন্ধ করা হয়েছে।
সরবরাহ বন্ধ হল কেন? টাস্কফোর্সের এক সদস্যের কথায় “ভাবা হয়েছিল, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আর সমস্যা হবে না।” কিন্তু এখন ফের দাম বাড়ায় চিন্তায় প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। এক কৃষি বিশেষজ্ঞের কথায়, “রাজ্যে এখন প্রায় সাত লক্ষ মেট্রিক টন আলু হিমঘরে মজুত রয়েছে। মাসে প্রায় চার লক্ষ মেট্রিক টন আলু প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ মজুত আলুতে আরও দেড়মাস সহজেই চলে যাবে। এর মধ্যেই আবার অন্য রাজ্য থেকে নতুন আলু আসতে শুরু করেছে। ফলে আলুর দর এমনিতেই এখন কমার কথা।”
কিন্তু বাস্তবে যে তা হচ্ছে না, কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট বিভাগও তা টের পাচ্ছে হাতেনাতে। গত ২৭ নভেম্বর ওই দফতরের অফিসারদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে পুরসভা নিয়ন্ত্রিত এন্টালি মার্কেটে। ওই বাজারে জ্যোতি আলু বিক্রি হচ্ছিল ১৫-১৬ টাকায়।
পুলিশ গিয়ে তা ১৩ টাকা দরে বিক্রির জন্য চাপ দেয়। এনফোর্সমেন্ট শাখার চাপে কিছু ক্রেতাকে ১৩ টাকা দরে বিক্রি করতে বাধ্য হন দু’এক জন বিক্রেতা। তাতেই ফুঁসে ওঠেন সেখানকার আলু ব্যবসায়ীরা। পরে এন্টালি মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির কাছে প্রতিবাদ জানায়। এন্টালি মার্কেট ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তারকনাথ ত্রিবেদী বলেন, “বাজারে এখন আলুর পাইকারি দর ১৩-১৪ টাকা কেজি। তাই ১৫-১৬ টাকার নীচে বিক্রি করা অসম্ভব।”
আলু ব্যবসায়ী গুরুপদ সিন্হার বক্তব্য, “কয়েক মাস ধরে অন্যান্য সব্জির দাম চড়া থাকায় আলুর চাহিদা বেড়েছিল। দাম বাড়ার কারণ সেটাই।” তাঁর মতে, সরকার যা ব্যবস্থা নেওয়ার নিয়েছে। এ বার ক্রমশই আলুর দাম কমবে। এনফোর্সমেন্ট শাখার এক পদস্থ অফিসারের কথায়, “বাজারে গিয়ে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়ার পাশাপাশি হিমঘর থেকে আলু বেরনোর সময় কত দামে তা বিক্রি হচ্ছে তার উপর নজর রাখা দরকার। তবেই আলুর চড়া দর রোখা যাবে।”
|