জেল হেফাজত থেকে এ বার ফের পুলিশ হেফাজতে গেলেন সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ। সাঁত্রাগাছি থানার সারদা কাণ্ডের একটি মামলায় শনিবার তাঁকে হাওড়া আদালতে হাজির করায় হাওড়া সিটি পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা, হুমকি, চক্রান্ত, বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন তদন্তকারীরা। এই মামলায় হাওড়ার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট অরুণকুমার নন্দী তাঁকে সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এই প্রথম সারদা কাণ্ডের কোনও মূল মামলার সঙ্গে তাঁকে যুক্ত করা হল।
• ৫ মে সাঁত্রাগাছি থানায় স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্ত বেরা অভিযোগ জানান, সারদা অর্থলগ্নি সংস্থায় ৭ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, সেই অভিযোগে সুদীপ্ত সেন ও ব্রজেশ রায় নামে আর এক ব্যক্তির নাম থাকলেও কুণাল ঘোষের নাম ছিল না। তবে তদন্তকারীরা বলছেন, নাম না থাকলেও তদন্তের ভিত্তিতে যে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব। এ দিন আদালত থেকে পুলিশি হাজতে যাওয়ার সময় কুণালবাবু অবশ্য বলেন, “আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।”
একটি টিভি চ্যানেলের কর্মীদের ‘টিডিএস’ জমা না দেওয়ার অভিযোগে
• শনিবার, ২৩ নভেম্বর কুণালবাবুকে গ্রেফতার করেছিলেন বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা। গত রবিবার সেই মামলায় তাঁর পুলিশি হাজতের নির্দেশ হয়।
শুক্রবার ফের আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক কুণালবাবুকে ১৪ দিনের জন্য জেল হেফাজতে পাঠান। সে দিন থেকে দমদম সেন্ট্রাল জেলেই ছিলেন তিনি।
এ দিন বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকেই কড়া নিরাপত্তায় আদালতে নিয়ে আসা হয় কুণালবাবুকে। প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় কোর্ট লক-আপে। বেলা পৌনে তিনটে নাগাদ সেখান থেকে এজলাসে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতের ভিতরে ঢোকার সময় তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ‘আপনি যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছেন, যাঁদের নাম তুলেছেন, সুদীপ্ত সেন কেন সেগুলি নস্যাৎ করছেন?’’ কাঁদতে কাঁদতে কুণালবাবু বলেন, “উনি সব মিথ্যা বলছেন।”
আগামী সোমবার বিধাননগর আদালতে কুণালবাবুর গোপন জবানবন্দি দেওয়ার কথা। সেই কারণে জবানবন্দির আগে ৪৮ ঘন্টা তাঁকে সংশোধনাগারের আলাদা কক্ষে রাখা হবে বলে তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এ দিন কুণালবাবুর পুলিশি হেফাজতের নির্দেশের পর তাঁর আইনজীবী অর্ধেন্দু দাস বলেন, “গোপন জবানবন্দি এড়াতেই এ সব করা হচ্ছে।”
এ দিনই দুপুরে বিধাননগরের সরকারি আইনজীবী বিধাননগর আদালতে দাবি করেন, কুণালের গোপন জবানবন্দি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই কথার বিরোধিতা করে কুণালবাবুর আইনজীবীরা দাবি করেন, আবেদন পেশের সময় পেরিয়ে গিয়েছে। বিচারকও সরকারি কৌঁসুলির দাবি নাকচ করে দেন। সোমবার ফের এই দাবি পেশ করবেন সরকারি কৌঁসুলি। ফলে ওই দিন কুণালবাবু গোপন জবানবন্দি দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গেল বলেই আইনজীবীদের দাবি।
কুণালবাবুর আর এক আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহার অভিযোগ, “অভিযুক্ত গোপন জবানবন্দি দিয়ে তদন্তে সাহায্য করতে চাইলেও তদন্তকারী সংস্থা তা এড়িয়ে যেতে চাইছে।”
এ দিন বিধাননগর কমিশনারেটের সামনে রাজ্য জুড়ে সারদার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার দাবি তুলে অবস্থান বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই। পরে এসএফআই নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ছ’জনের প্রতিনিধি দল বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেয়।
এ দিনও সুজন চক্রবর্তী, সুনন্দ সান্যাল-সহ সহ বিশিষ্টজনরাও উপস্থিত ছিলেন। সারদা কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
|