পরশু আদালতে গোপন জবানবন্দি
দেওয়ার অনুমতি পেলেন কুণাল
বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিতে চাইলেন কুণাল ঘোষ। সারদা-কাণ্ডে ধৃত ওই সাসপেন্ড তৃণমূল সাংসদের আবেদন শুক্রবার মঞ্জুরও করেছেন বিধাননগরের অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (এসিজেএম)। স্থির হয়েছে, আগামী পরশু অর্থাৎ সোমবার কুণালবাবু বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দেবেন। পাশাপাশি তাঁকে এ বার পুলিশ হেফাজত থেকে জেল হেফাজতে আনার নির্দেশ হয়েছে।
গত শনিবার গ্রেফতার হওয়া ইস্তক কুণালবাবু ছিলেন বিধাননগর পুলিশের হেফাজতে।
এ দিন বেলা দু’টো নাগাদ কুণালবাবুকে সল্টলেকের এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। বিচারক অপূর্বকুমার ঘোষ তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এর পরেই তাঁর কৌঁসুলিরা মক্কেলের তরফে গোপন জবানবন্দি পেশের আবেদন জানান। জবানবন্দি নেওয়ার আগে কুণালবাবুকে ৪৮ ঘণ্টা সংশোধানাগারের আলাদা কক্ষে রাখা হবে বলে তাঁর আইনজীবীরা জানিয়েছেন। সারদা-তদন্তে ওঁর গোপন জবানবন্দির গুরুত্ব কতটা?
শুক্রবার সল্টলেকের এসিজেএম আদালতে কুণাল ঘোষ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য: এ যাবৎ কুণালবাবুর নামাঙ্কিত ফেসবুক পেজের পোস্ট বা রেকর্ডিং করা সিডি প্রকাশ্যে আসছিল। কয়েক জন মন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম করে তাতে বলা হচ্ছিল, সারদা-কাণ্ডের তদন্তে ওঁরা সহায়তা করতে পারেন, তাই ওঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। কিন্তু ফেসবুকের সেই লেখা কিংবা রেকর্ডেড সিডি-র বক্তব্য সত্যিই কুণালবাবুর কি না, তদন্তকারীদের তা ভাল ভাবে যাচাই করা জরুরি। এ হেন প্রেক্ষাপটে কুণালবাবু গোপন জবানবন্দিতে বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কী বলেন, আইনগত ভাবে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন আইনজীবীদের এই মহল।
কুণাল ঘোষের হাজিরা ঘিরে এ দিন সকাল থেকে সল্টলেক এসিজিএম আদালতে উৎসাহী মানুষের ভিড় জমে যায়। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ কুণালবাবু পুলিশের জিপে চড়ে আসেন। পরনে টি-শার্ট ও ট্র্যাকস্যুট, গালে না-কাটা দাড়ি। আদালতে ঢোকার সময় প্রশ্ন করতে গেলে হাত নেড়ে তিনি বলে যান, “বলব, বলব, সব বলব।” পরে কোর্ট লক-আপের ভিতরে কখনও বসে, কখনও দাঁড়িয়ে তিনি সওয়াল-জবাব শোনেন। আগাগোড়া এক বারের জন্যও তাঁকে বিচলিত হতে দেখা যায়নি।
বরং সওয়াল চলাকালীন মাঝে-মধ্যে লক আপের ভিতর থেকে নানা মন্তব্য করে গিয়েছেন।
কুণালবাবুর তরফে আইনি লড়াই লড়তে দাঁড়িয়েছেন আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা, সমীরকুমার দাস, সুদীপ্ত মৈত্র, সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, পবিত্র বিশ্বাস। সরকারি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন শেখর চক্রবর্তী। কুণালবাবুর কৌঁসুলিরা সওয়ালে বলেন, রাজ্য পুলিশ ও বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা মিলিয়ে তাঁদের মক্কেলকে ১৩ বার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার পরেও তাঁকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওঁদের দাবি: সারদা-কাণ্ডের যে ৩৪ নম্বর মামলায় কুণালবাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটি মূলত সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে। সুদীপ্তবাবুর একদা ছায়াসঙ্গিনী দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও সারদার মিডিয়া শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমনাথ দত্তও তাতে অভিযুক্ত। এঁরা প্রত্যেকে এই মামলায় জামিন পেয়ে গিয়েছেন।
“তা হলে কুণালবাবুর জামিন হবে না কেন?” প্রশ্ন তোলেন তাঁর কৌঁসুলিরা।
অন্য দিকে সরকারি কোঁসুলি শেখরবাবু সওয়ালে বলেন, জিজ্ঞাসবাদের সময়ে কুণালবাবু সব প্রশ্নের উত্তর দেননি, কিছু চেপে গিয়েছেন। সরকারি আইনজীবীর এই কথা শুনে কুণালবাবু লক-আপের ভিতর থেকে বলে ওঠেন, ‘‘ডাহা মিথ্যে বলছেন।’’ আদালতের কাছে শেখরবাবুর অভিযোগ, কুণালবাবু সারদা-কাণ্ডের ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন। এবং কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার ক’দিন আগে, সুদীপ্ত সেন গা ঢাকা দেওয়ার পূর্ব মুহূর্তে সুদীপ্তেরই পরামর্শে ওই সংস্থা থেকে কুণালবাবু ইস্তফা দেন। এই অভিযোগ শুনে কুণালবাবু ফের লক-আপ থেকে বলে ওঠেন, “ভুল তথ্য। আমি যদি ষড়যন্ত্রে সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে লিপ্ত থাকতাম, তা হলে সুদীপ্ত সেন সিবিআই-কে লেখা চিঠিতে আমার নাম উল্লেখ করতেন না।”
এ সবের মধ্যে চলতে থাকে সওয়াল-জবাব। সরকারি কৌঁসুলি কুণালবাবুর জেল হেফাজতের আবেদন করলে কুণালবাবুর কৌঁসুলিরা বলেন, “জেল হেফাজত মানে তো পুলিশের তদন্ত শেষ! তদন্ত যখন হয়েই গিয়েছে, তখন আর জেল হেফাজত কেন? ওঁকে জামিন দেওয়া হোক।” সরকারি কৌঁসুলির যুক্তি, কুণালবাবু প্রভাবশালী ব্যক্তি। বাইরে বার হলে তিনি মামলার উপরে প্রভাব খাটাতে পারেন। প্রসঙ্গত, কলকাতা পুলিশ ও উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ কুণালবাবুকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়েছে।
এ দিকে সারদা-কর্ণধার সুদীপ্তবাবুকে এ দিন রায়গঞ্জ মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক সব্যসাচী চট্টরাজ জামিন নাকচ করে তাঁকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সুদীপ্তবাবুকে রায়গঞ্জ জেলা সংশোধনাগারে রাখা হয়েছে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.