বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় ওড়িশা ও গুজরাতে ‘ইন্টিগ্রেটেড কোস্টাল জোন ম্যানেজমেন্ট’ (আইসিজেডএম) প্রকল্পের কাজ তরতর করে এগোলেও রাজ্যে তা কার্যত খোঁড়াচ্ছে। এই তিন রাজ্যের উপকূল অঞ্চলের মানুষকে যুক্ত করে পরিকাঠামো উন্নয়নের এই পরীক্ষামূলক প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল ২০১০ সালের অগস্টে। তার পর তিন বছর কাটলেও থমকে অনেক কাজ।
বিগত বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিজ্ঞতা থেকে পরিষ্কার, পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পরিকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকে সচেতন করা জরুরি। যেমন, হঠাৎ কোনও ঘূর্ণিঝড় এলে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষকে যাতে সঠিক সময়ে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানানো যায় তার ব্যবস্থা করা দরকার। যে ভূ-উষ্ণায়নের জন্য সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বাড়ছে, রাজ্যের উপকূলে তার কী প্রভাব পড়ছে তারও একটা ধারণা থাকা দরকার। বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সাহায্যে সেই সচেতনতা বৃদ্ধির কাজই শুরু হয়েছিল। কিন্তু কয়েক কদমের বেশি এগোয়নি।
এ রাজ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর এবং পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকত-শহর দিঘাকে এই প্রকল্পের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য, উপকূল সম্পর্কে সমীক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভিত্তিতে তথ্যভাণ্ডার গঠন। পরে ওই গবেষণালব্ধ তথ্য কাজে লাগিয়ে সারা ভারতের উপকূল অঞ্চলে প্রকল্প চালু করা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখনও আবহাওয়ার সম্পর্কে সঠিক সময়ে তথ্য না পাওয়ায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূল অঞ্চলের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন। জীবনহানিও বাড়ে। সেই কারণেই আইসিজেডএম প্রকল্পে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতি মূহুর্তের আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য দিতে সাগরে জলবায়ু সংক্রান্ত অত্যাধুনিক যন্ত্র ‘ক্লাইমেট প্রোফাইলার’ বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু তা আজও বাস্তাবায়িত হয়নি। |
আবহাওয়া দফতর যেখানে রোজই পূর্বাভাস দেয়, সেখানে ক্লাইমেট প্রোফাইলার কী প্রয়োজন?
আইসিজেডএম-এর বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আবহাওয়া দফতরের মাধ্যমে যে পূর্বাভাস দেওয়া হয় তা বিশাল অঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ক্ষুদ্র অঞ্চলের আবহাওয়া সম্পর্কে (মাইক্রো ক্লাইমেট) খুঁটিনাটি তথ্য পাওয়ার জন্য ক্লাইমেট প্রোফাইলারই কার্যকরী। যন্ত্রটি আসলে ত্রিশ মিটার উঁচু আবহাওয়া নির্ণায়ক স্তম্ভ। প্রতি আশি বর্গমিটার এলাকার জন্য এ রকম একটি করে যন্ত্র বসানো হয়। যে কোন ঝড়-ঝঞ্ঝার ক্ষেত্রে এলাকায় কী প্রভাব পড়বে, সে সম্পর্কে আগাম পূর্বাভাস পাওয়া যায়। একই সঙ্গে স্থানীয় মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিও জরুরি। তাই প্রতি মুহূর্তের আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য এলইডি বোর্ডের মাধ্যমে বিভিন্ন ফেরিঘাটে দেখানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। প্রতি দিনের আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য বিডিও, মহকুমাশাসক ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা যেত। কিন্তু বাস্তবে যন্ত্র বসানোর কাজই থমকে রয়েছে। সমুদ্রের জলের উচ্চতা মাপার জন্যও উপকূল অঞ্চলে স্বয়ংক্রিয় ‘টাইড গেজ স্টেশন’ বসানোর কথা হয়েছিল। সেটি দিয়ে প্রতি দশ মিনিট অন্তর সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা মাপা সম্ভব। তাতে আবহাওয়ায় উপর বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে এ রকম আটটি স্টেশন রয়ছে। কিন্তু রাজ্যে সেটি বসানোও শুরু হয়নি।
বিশ্বব্যাঙ্কের প্রকল্প আধিকারিক তাপস পালের মতে, মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা ও পরিকাঠামো উন্নয়নই আইসিজেডএম প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। কিন্তু এই প্রকল্প তার মূল নীতিগুলি থেকে সরে আসছে। ২০১১ সালের শেষার্ধ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক ছিল। তবে এ বছরের গোড়া থেকেই প্রকল্পের কাজ খুব ধীর গতিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, “আগামী জানুয়ারিতে প্রকল্পের অবস্থা যাচাই করে আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেব।” |