আগামী লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহারে প্রার্থী বদলের রাস্তায় হাঁটল ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা কমিটি।
গত নির্বাচনে ওই আসনে জয়ী নৃপেন রায়কে সরিয়ে এ বার কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে দীপক রায়ের নাম চূড়ান্ত করেছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা নেতৃত্ব। দীপকবাবুর নাম রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে ওই অনুমোদন আসার অপেক্ষায় বসে না থেকে শনিবার কোচবিহার শহরের রবীন্দ্র ভবনে রীতিমতো কর্মিসভা করে নৃপেন রায়কে পাশে বসিয়ে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে দীপকবাবুর নাম ঘোষণা করেন ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ।
দলীয় সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই দলের তিন সাংসদ প্রার্থীর নাম ঠিক করে ফেলা হয়েছে। পুরুলিয়ায় প্রার্থী হচ্ছেন নরহরি পাত্র। তবে কোচবিহারের মতোই বারাসাতেও নতুন প্রার্থী করা হচ্ছে মোর্তাজা হোসেনকে। প্রার্থী বদলের কারণ? দলের অন্দরের খবর, গত পাঁচ বছরে কাজের নিরিখেই প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। নরহরিবাবু ‘কাজ’ করায় তাঁকে ফের প্রার্থী করা হচ্ছে। তবে নৃপেনবাবুর কাজে দল ‘খুশি’ নয়। তাই বদল।
এ দিন ওই কর্মিসভা থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর সমর্থনে কর্মীদের বাড়ি বাড়ি প্রচার শুরুর ডাক দেন ফব-র জেলা নেতৃত্ব। বিজ্ঞপ্তি জারি দূরঅস্ত, লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হওয়ার আগেই এ ভাবে ফরওয়ার্ড ব্লকের সম্ভাব্য লোকসভা প্রার্থীর নাম ঘোষণা নজিরবিহীন। গোটা বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক জল্পনা তৈরি হয়েছে। |
ফব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “সরকারি ভাবে নাম ঘোষণা করছি না। তবে কোচবিহারে এ বার লোকসভা নির্বাচনে আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী দীপক রায়। ওই ব্যাপারে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে।”
ফরওয়ার্ড ব্লক সূত্রেই জানা গিয়েছে, সিতাইয়ের প্রাক্তন বিধায়ক নৃপেন রায় গতবার লোকসভা নির্বাচনে জিতে সাংসদ হন। দলের কৃষক সংগঠনের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা নৃপেনবাবু ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যও। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে থেকেই নিজের খাসতালুক সিতাইয়ে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন একসময়ের ‘দাপুটে’ সাংসদ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল সিতাইয়ে সাফল্য পায়। ওই সাফল্যের পেছনে অবশ্য ছিলেন দল বদলে যাওয়া একদা নৃপেনবাবুর ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের একাংশ। তার আগে বিধানসভা নির্বাচনেও সিতাইয়ে তৃণমূল সমর্থিত জোটের কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের দীপক রায়। সব মিলিয়ে দলের অন্দরে চাপে ছিলেন নৃপেনবাবু। তার ওপর সাংসদের জনসংযোগ নিয়েও দলে অসন্তোষ বাড়ছিল।
ওই পরিস্থিতি সামলে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে শেষপর্যন্ত অবশ্য বিধানসভায় পরাজিত ও নৃপেন ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত পেশায় হাইস্কুল শিক্ষক দীপক রায়ের নাম প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত করেন দলের জেলা নেতারা। ফরওয়ার্ড ব্লকের এক নেতা জানিয়েছেন, নৃপেনবাবুকে সরিয়ে তাঁকে নিয়ে উদ্ভুত ‘ক্ষোভ’ সামলানোর পাশাপাশি তাঁরই ‘ঘনিষ্ঠ’কে টিকিট দিয়ে তাঁর ‘বিক্ষোভের’ আশঙ্কা এড়ানোর কৌশলেই সম্ভাব্য নতুন প্রার্থীর নাম ঠিক করেছেন জেলা নেতারা। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ অবশ্য বলেন, “পরিস্থিতি বুঝে প্রার্থী মনোনীত করা হয়। যা অবস্থা তাতে সংগঠকদের সংগঠনের কাজে লাগাতে হবে।”
এ দিন নাম ঘোষণার পর দীপকবাবু বলেন, “নৃপেনবাবু আর আমি একই এলাকার বাসিন্দা। ওঁর নেতৃত্বে সংগঠন করার সুবাদেই ঘনিষ্ঠতা। অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হলে জিতব।” আর নৃপেনবাবুর বক্তব্য, “সব দিক বিবেচনা করেই ওঁর নাম প্রার্থী হিসাবে চূড়ান্ত করা হয়। পূর্বসূরিদের রাস্তায় যাবার প্রশ্ন নেই। দলের অন্যদের সঙ্গে ওঁর জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চাইছি।” প্রসঙ্গত গত লোকসভা ভোটে হিতেন বর্মনকে সরিয়ে নৃপেনবাবুকে প্রার্থী করে ফব। হিতেনবাবু পরে তৃণমূলে যোগ দেন। তিনি এখন রাজ্যের বনমন্ত্রী। |