হাতে-গরম প্রতিবাদ চাই, বার্তা বিমানের
বিরোধী ভূমিকায় যাওয়ার আড়াই বছরের মাথায় দলের ভিতরে চাপ ক্রমশ বাড়ছে আক্রমণাত্মক হওয়ার জন্য। পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে এ বার দলের কাছে ‘ঝটিকা বাহিনী’ চাইছেন বিমান বসু! ঘটনা ঘটলে বিশদ পরিকল্পনার জন্য বসে না থেকে যারা তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদে নামতে পারবে। আলিমুদ্দিনে শনিবার থেকে শুরু হওয়া দলের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের গোড়াতেই এমন বার্তা দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু।
তৃণমূল সরকারের কাজকর্ম নিয়ে মানুষের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হলেও বামেরা কেন তা নিয়ে যথাযথ আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না, তা নিয়ে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের অন্দরেই এখন প্রবল বিতর্ক। বিধানসভায় সরকারের ‘অগণতান্ত্রিক মনোভাবে’র বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ চান বিধায়কদের বড় অংশ। আবার সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেরলের উদাহরণ (যেখানে বিরোধী বাম জোটের লাগাতার আন্দোলন জারি) দিয়ে আলিমুদ্দিনের উপরে চাপ বাড়াচ্ছেন। এই অবস্থায় রাজ্য কমিটির প্রারম্ভিক ভাষণেই এ দিন বিমানবাবুর দাওয়াই, রাজ্যের সর্বত্র ‘তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ’ চাই। অন্যায় হচ্ছে মনে করলেই জমায়েত গড়ে তুলে দ্রুত পথে নামা চাই। এবং এর জন্য তৎপর থাকতে হবে সব জেলা নেতৃত্বকেই।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এ দিন জানান, সাধারণ মানুষের দাবি নিয়ে পথে নেমে আন্দোলন করতে সিপিএমের বেশ কিছু জেলা নেতৃত্ব ব্যর্থ হয়েছেন। বর্ধমান, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, হুগলির মতো একদা লাল দুর্গ বলে পরিচিত জেলাগুলিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলনে দলের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরেন বিমানবাবু। কিছু দিন আগে শিলিগুড়িতে সিপিএমের ৫২ জন কর্মী-নেতাকে গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গেই অশোক ভট্টাচার্যদের জেলা যে ভাবে প্রতিবাদে নেমে পড়েছিল, সেই উদাহরণ দিয়েছেন তিনি। সারদা-কাণ্ডে এখন সুজন চক্রবর্তীরা যা করছেন, সেই পথের দিকেও তাঁর ইঙ্গিত ছিল বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
বস্তুত, আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থতা কেন, তা নিয়ে চাপানউতোর আছে সিপিএমের মধ্যে। জেলার নেতারা রাজ্য নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলছেন। আবার রাজ্য নেতৃত্ব ভার দিচ্ছেন জেলাকে! সিপিএম সূত্রের খবর, পরপর কিছু বৈঠকে একই প্রবণতা দেখে এ দিন আলোচনার শুরুতে এই নিয়ে ঈষৎ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্য সম্পাদক। তাঁর বক্তব্য ছিল, লোক আনার দায়িত্ব জেলাকেই নিতে হবে।
চাপানউতোর অবশ্য এ দিনও অব্যাহত ছিল কিছুটা। উত্তরবঙ্গেরই এক নেতা যেমন প্রশ্ন তোলেন, বারবার বৈঠক করে রোগ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। রোগ হচ্ছে, দল মানুষের ক্ষোভ কাজে লাগাতে পারছে না। কিন্তু তার দাওয়াইটা কী? রাজ্য নেতৃত্ব দাওয়াই বলে দিলেই জেলা ঝাঁপিয়ে পড়তে তৈরি! রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, বিমানবাবু এ দিন শুরুতে সেই দাওয়াই-ই দিয়ে রেখেছেন। সুর চড়া রাখার পথ ধরেই এ দিন বিধাননগর কমিশনারেটের সামনে সারদা-কাণ্ডের প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন সুজনবাবু, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, সায়নদীপ মিত্রেরা। ছাত্র-যুবদের পরে আজ, রবিবার একই প্রতিবাদ জারি রাখার কথা মহিলা সংগঠনের। অন্য দিকে আবার বর্ধমান জেলার তরফে এ দিনের বৈঠকে ফের দাবি করা হয়েছে, সদস্যপদ নবীকরণের মতো সাংগঠনিক কাজ আপাতত জেলায় চাপিয়ে না দিলেই ভাল হয়। কারণ, সেই সন্ত্রাস!
কড়া প্রতিবাদের পথে যাওয়া নিয়ে বাম শিবিরের অন্দরে যুক্তি-পাল্টা যুক্তির স্রোত প্রবল গতি পেয়েছে গত ক’দিনে। যার প্রভাব পড়েছে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের উপরেও। বিধানসভার চলতি অধিবেশনে সরকার পক্ষ যে আচরণ করছে, তাতে প্রবল ক্ষুব্ধ সূর্যবাবু। দল এবং বামফ্রন্টের অন্দরে তাঁর অভিযোগ, কখনও তাঁর প্রশ্ন বদলে দেওয়া হচ্ছে। কখনও তিনি বলতে উঠলে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে পাল্টা কোনও মন্ত্রী পর্যন্ত দাঁড়িয়ে পড়ছেন! বিরোধী দলনেতার মাইক্রোফোনও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে! এই আচরণ দিনের পর দিন মেনে নেওয়া মুশকিল। আরও আক্রমণাত্মক পরিষদীয় ভূমিকার স্বার্থে তিনি এমনকী বিরোধী দলনেতার পদ থেকে সরে দাঁড়াতেও রাজি! আলিমুদ্দিনে শুক্রবার সন্ধ্যার বৈঠকে সূর্যবাবুর কাছ থেকে এমন ইঙ্গিত পেয়ে সব বাম নেতাই অবশ্য বিরোধী দলনেতার ভূমিকায় আস্থা রেখেছেন। এক বাম নেতার কথায়, “আমরা তো শুধু বাইরে থেকে পরামর্শ দিচ্ছি। বিধানসভার ভিতরে ঝড়ঝাপ্টা তো সামলাতে হচ্ছে বিরোধী দলনেতাকেই!” রাজ্যে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টার প্রতিবাদে আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে বিধানসভার ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের সমাপ্তি বয়কট করা উচিত কি না, টানাপোড়েনে শেষ মুহূর্তের জন্য সেই সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রেখেছেন বিমানবাবুরা।
রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিন জেলায় জেলায় সাংগঠনিক পরিস্থিতি এবং প্রতিবাদ সংগঠিত করার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে মতামত জানিয়েছেন নানা প্রান্তের সদস্যেরা। তবে আগের বৈঠকে সমালোচনার মুখে পড়ার পরে এ দিন ফের গরহাজির থেকেছেন আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা!

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.