ওড়িশায় এক লক্ষ টন আলু পাঠানোর অনুমতি দিল রাজ্য সরকার। রাজ্যের বাজারে আলুর সরবরাহে সঙ্কট দেখা দেওয়ায় ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে নবান্ন। পরে জানানো হয়, আলু রফতানি করতে গেলে রাজ্য সরকারের অনুমতি লাগবে। বাজার দরের উপরে নজরদারি করার জন্য গঠিত টাস্ক ফোর্স বুধবার জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওড়িশায় এক লক্ষ টন আলু পাঠানোর অনুমতি দিয়েছেন।
টাস্ক ফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৫৫ লক্ষ বস্তা আলু মজুত রয়েছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা ভিন রাজ্যে আলু সরবরাহের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি চেয়েছিলেন। সব দিক বিবেচনা করেই মুখ্যমন্ত্রী আপাতত এক লাখ টন আলু সরবরাহের অনুমতি দিয়েছেন।
এ রাজ্য থেকে আলুর সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পশ্চিম মেদিনীপুর লাগোয়া ওড়িশা সীমানায় অন্ধ্রপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র থেকে আসা মাছ ও পেঁয়াজ বোঝাই বেশ কিছু ট্রাক দীর্ঘ ক্ষণ আটকে রেখেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুই রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। অনেকের ধারণা, সেই কারণেই রাজ্য সরকার সবার আগে ওড়িশায় আলু সরবরাহের অনুমতি দিল। ব্যবসায়ীদের আশা, এর পরে সরকার অন্য রাজ্যেও আলু পাঠানোর অনুমতি দেবে। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য সভাপতি লালু মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “আমরা বেশ কিছু দিন ধরেই আর্জি জানিয়ে আসছিলাম। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বাইরে আলু রফতানির অনুমতি দেওয়ায় আমরা খুশি। আশা করি, অন্যত্র আলু পাঠানোর ব্যাপারেও সরকার নরম মনোভাব নেবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, টাস্ক ফোর্সের বৈঠকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সরকারকোনও আলু ব্যবসায়ীর লোকসান চায় না। কিন্তু বাড়তি মুনাফার লোভে কেউ আলু বাইরে পাঠিয়ে দেবে, আর রাজ্যের মানুষকে বেশি দামে আলু কিনতে হবে, সরকার তা মানবে না। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, আলুর বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেই সামান্য কিছু আলু বাইরে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এই মুহূর্তে রাজ্যে অন্তত ১০ লক্ষ টন আলু মজুত রয়েছে বলে সরকারের দাবি।
টাস্ক ফোর্সের আর এক সদস্য সদস্য কমল দে জানান, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ১৮ টাকা কেজি দরে চাষিদের ভাল মানের আলু বীজ সরকার বিক্রি করবে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সরকার চারটি জেলায় আলু বীজ বিক্রি শুরু করেছে।
আলুর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এ দিনই উত্তর চব্বিশ পরগনার হাবড়ায় এক জনসভায় বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র সরকারের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “আলু নিয়ে সরকারের সমালোচনা করায় বিধানসভায় তর্কাতর্কি হয়েছে। আলুর দাম বাড়ায় রাজ্যেরও দায়িত্ব আছে। রাজ্যকে এ ব্যাপারে নীতি ঠিক করতে হবে।” সূর্যকান্তবাবুর অভিযোগ, তৃণমূলের আমলে রাজ্যে নতুন কোনও হিমঘর তৈরি হয়নি। উল্টে হিমঘর থেকে আলুর ট্রাক বের করতে গেলে আট হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে তৃণমূলকে। সীমান্ত এলাকায় দিতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকা।
পাল্টা হিসাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এ প্রসঙ্গে বলেন, “সূর্যবাবুদের আমলেই এ রকম তোলাবাজি চলত। তাই উনি বিস্তারিত ভাবে এ সব জানেন। তৃণমূলের আমলে এ সব হয় না। এই কারণেই মানুষ তৃণমূলের পাশে রয়েছেন।”
|