এ যেন আক্ষরিক অর্থেই চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ার গল্প।
বৃহস্পতিবার রাতে রেড রোডে ফোর্ট উইলিয়ামের পাশে ১২ ফুটেরও বেশি লম্বা একটি সুড়ঙ্গ আবিষ্কারের পরে কার্যত বেআব্রু হয়ে পড়ে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রেড রোড দিয়ে নিত্যদিন অনেক ভিআইপি-ও যাতায়াত করেন। ওই রাস্তার নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের হলেও ময়দান সেনাবাহিনীর অধীনে হওয়ায় সেখানে নজরদারি ও টহল চালায় তারাও। দুই বাহিনীর সেই কড়া নজরদারির ফাঁক গলে কী ভাবে পেশাদারি দক্ষতায় ওই সুড়ঙ্গ খোঁড়া হল, তা নিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী উভয়েই বিচলিত।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, সুড়ঙ্গ তৈরির ধরন দেখেও ক্ষুব্ধ পুলিশ কমিশনার। এমনকী, ওই সুড়ঙ্গ তৈরি হওয়ার সময়ে কী ভাবে তা টহলদার জওয়ানদের নজর এড়িয়ে গেল, তা নিয়ে বেজায় রুষ্ট সেনাবাহিনীর কর্তারা। নিয়মিত টহলদারি মানে যে রাস্তার দু’পাশ ধরে শুধু হেঁটে যাওয়া নয়, তা বোঝানো হয়েছে নিচুতলার কর্মীদের। রেড রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সেখানে বিস্ফোরক পুঁতে নাশকতা ঘটানো হলে কী হত, এখন সেই চিন্তায় ঘুম উড়েছে পুলিশকর্তাদের। সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, জওয়ানদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ফোর্ট উইলিয়ামের আশপাশে সন্দেহজনক কোনও কিছু দেখলেই তা সঙ্গে সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে।
লালবাজার সূত্রে শনিবার খবর মিলেছে, ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে রেড রোডের পাশে দুষ্কৃতীদের খোঁড়া ১২ ফুটের ওই সুড়ঙ্গটি বুজিয়ে ফেলবে রাজ্যের পূর্ত দফতর। একই সঙ্গে গোটা ময়দান এলাকা জুড়ে নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগও বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করছে বলে খবর মিলেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে ওই সুড়ঙ্গের অস্তিত্ব টের পায় ময়দান থানার পুলিশ। সেনা ও কলকতা পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে কী করে অত লম্বা সুড়ঙ্গ দুষ্কৃতীরা খুঁড়ে ফেলল, তা নিয়ে শুক্রবার দিনভর আলোচনা করেন পুলিশকর্তারা। পুলিশ জানায়, বেশ কয়েক দিন ধরে রেড রোডের পাশে মাটির তলায় বিএসএনএল-এর পুরনো ও বাতিল তার চুরি করছিল কয়েক জন দুষ্কৃতী। ওই তার চুরির অভিযোগে ছয় দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারও করে ময়দান থানার পুলিশ।
লালবাজারের এক পুলিশকর্তা এ দিন বলেন, আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, ওই সুড়ঙ্গ বুজিয়ে ফেলার জন্য পূর্ত দফতরকে অনুরোধ করা হবে। ময়দান এলাকার কোন কোন জায়গা দিয়ে জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত তার গিয়েছে, সে বিষয়ে বিশদ খোঁজখবর নেওয়া এবং নকশা জোগাড় করার কাজ শুরু হয়েছে। তারগুলির কোনও অংশ যাতে মাটির উপরে বেরিয়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির কাছে অনুরোধ জানাবে পুলিশ। |