সুড়ঙ্গপথে সুরক্ষার পাতাল-প্রবেশ
ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে রেড রোডে ১২ ফুটেরও বেশি লম্বা একটি সুড়ঙ্গ!
বৃহস্পতিবার রাতে এর অস্তিত্ব প্রথম টের পায় ময়দান থানার পুলিশ। শুক্রবার সকাল থেকেই তৎপরতা শুরু হয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর। পুলিশই জানাচ্ছে, অত লম্বা সুড়ঙ্গ এক দিনে কাটা সম্ভব নয়। এলাকার সাধারণ নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের হলেও ময়দান সেনাবাহিনীর অধীন হওয়ায় সেখানে নিয়মিত নজরদারি ও টহল চালায় সেনাও। তাই কলকাতা পুলিশের নাকের ডগায়, সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের সদর দফতরের সামনে ‘পেশাদারি’ দক্ষতায় কাটা এই সুড়ঙ্গ প্রশ্ন তুলেছে উভয়ের ভূমিকা নিয়েই।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে রেড রোড ধরে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে যেতে বাঁ হাতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তির সামনে সন্দেহজনক পাঁচ যুবককে ঘোরাফেরা করতে দেখে সন্দেহ হয় টহলদার পুলিশের। তখনই নজরে আসে দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ে স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের তাঁবুর সামনে রয়েছে মাটির ঢিপি। ঢিপির সামনে ঘাস ছেঁটে তৈরি হয়েছে প্রায় আট বর্গফুটের একটি গর্ত। সেই গর্তে টর্চের আলো ফেলতেই পুলিশকর্মীদের চোখে পড়ে সুড়ঙ্গের মুখ।
ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে সেই বিশাল গর্তটি দেখছেন
সেনা ও পুলিশের কর্তারা। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, টেলিফোনের পরিত্যক্ত কেবল চুরি করার জন্যেই কিছু দুষ্কৃতী এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। কেবল চুরির অভিযোগে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ছয় দুষ্কৃতীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশকর্তাদের একাংশের মত, রেড রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এত বড় একটি সুড়ঙ্গ নিপুণ ভাবে কাটা হল, অথচ তা সেনা থেকে পুলিশ সকলের চোখ এড়িয়ে গেল, এই ঘটনা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই কার্যত বেআব্রু করে দিয়েছে।
লালবাজার সূত্রের খবর, সুড়ঙ্গ কাটার কথা জানতে পেরে নড়েচড়ে বসেন পুলিশকর্তারা। নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে বড় গাফিলতির আঁচ টের পেয়েই সকাল ১১টা থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শুরু করেন কলকাতা পুলিশের বড় কর্তারা। যুগ্ম কমিশনার (ইন্টেলিজেন্স), যুগ্ম কমিশনার (স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স), ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ), ডেপুটি কমিশনার (মধ্য) সকলেই একে একে পৌঁছে যান রেড রোডে। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে দুপুর আড়াইটে নাগাদ পৌঁছন স্বয়ং পুলিশ কমিশনার। এমনকী, বিকেলে ওই সুড়ঙ্গ দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রাজ্য পুলিশের এডিজি বীরেন্দ্র-ও।
নিরাপত্তা বিধানে পুলিশের গাফিলতি রয়েছে কি? না কি এটি জঙ্গি নাশকতার কোনও পরিকল্পনা? কোনও প্রশ্নেরই সরাসরি জবাব দেননি কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে শুক্রবার তিনি বলেন, “সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, বেশ কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় সুড়ঙ্গ খুঁড়ে টেলিফোনের পুরনো পরিত্যক্ত কেবল চুরি করছে কিছু ছিঁচকে চোর। তাদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে, কোনও জঙ্গি সংগঠন যদি এই একই কায়দায় বড় রকমের কোনও নাশকতা ঘটিয়ে ফেলে, তখন পুলিশ কী বলবে?
পুলিশকর্তাদের একাংশের মতে, ছিঁচকে চোরের উপরে দায় চাপিয়ে পার পেতে পারেন না পুলিশের বড় কর্তারা। শহরের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ যে আদতে ব্যর্থ, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই ঘটনা। যদিও বৃহস্পতিবার রাতেই পাঁচ যুবককে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, ওই যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, কিছু দিন ধরেই সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তারা টেলিফোনের পরিত্যক্ত কেবল চুরি করছে এবং তা বিক্রি করে নেশার সামগ্রী কিনছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের কয়েক জন জওয়ান নিয়মমাফিক টহল দিতে গিয়ে আরও এক যুবককে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে ময়দান থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই যুবককে গ্রেফতার করে। তখনই অন্য এক ভবঘুরে যুবককে ধরে এনে পুলিশ সুড়ঙ্গে ঢোকায় এবং দেখে পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী ১২ ফুট লম্বা সুড়ঙ্গ কেটে ফেলেছে দুষ্কৃতীরা।
সুড়ঙ্গটি বারো ফুট গিয়ে ফের দক্ষিণ দিকে তিন-চার ফুট ঘুরে গিয়েছে। দক্ষিণ দিকে মাটির তলায় রয়েছে টেলিফোনের পুরনো কেবল।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ওই কেবল বিএসএনএল-এর পুরনো আমলের। মাটি খুঁড়ে পুরনো কেবল বার করার খরচ বহনের ক্ষমতা না থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা মাটির তলাতেই রেখে দিয়েছিলেন বলে পুলিশের অনুমান। বিএসএনএল-কেও বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশ জানায়, ময়দান এলাকার মাটির তলার নকশা জোগাড় করে জানার চেষ্টা হচ্ছে ওই চত্বর জুড়ে কোথায় কী রয়েছে। পুরনো কেবল, পুরনো পাইপ কোথায় কী ভাবে পাতা রয়েছে, এখন তা জানাও জরুরি বলে মনে করছেন লালবাজারের কর্তারা। কারণ, এই ধরনের ঘটনা যে ফের ঘটবে না, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা এখনও দিতে পারেননি তাঁরা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.