প্রেসিডেন্সির সুবিধা অন্যত্রও চান রাজ্যপাল
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরুর সময় থেকেই বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা হয়েছে। কেন শুধু প্রেসিডেন্সির জন্যই বিশেষ বন্দোবস্ত, বিতর্ক আছে তা নিয়েও। তারই মধ্যে আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন শুক্রবার জানিয়ে দিলেন, কলকাতা-সহ রাজ্যের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রেসিডেন্সির সমান সুযোগ-সুবিধা দিতে তিনি প্রয়াস চালিয়ে যাবেন।
এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল জানান, অন্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে প্রেসিডেন্সির সমতুল সুবিধা পায়, সেই ব্যাপারে ব্যক্তিগত ভাবে তিনি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যদিও এখনও তাতে খুব একটা সুফল মেলেনি। তবে তিনি চেষ্টা ছাড়বেন না বলে রাজ্যপাল আশ্বাস দেন। আর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানান, যাদবপুর এবং পুরুলিয়ার সিদো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়কেও উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। তাঁর মতে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এমনিতেই এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠান। সেই জন্য ওই তালিকায় তাদের নাম রাখা হয়নি।
এক মঞ্চে পরমাণু বিজ্ঞানী আর চিদম্বরম, আচার্য-রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন
ও উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে। ছবি:সুমন বল্লভ।
বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রেসিডেন্সির সূচনাতেই রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছিল, ওই প্রতিষ্ঠানকে তারা আন্তর্জাতিক মানের সমতুল করে গড়ে তুলতে চায়। সেই জন্যই প্রেসিডেন্সির জন্য মেন্টর গ্রুপ গড়া হয়। সেই গ্রুপের সুপারিশ ছিল, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান হারে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করুক রাজ্য। কিন্তু আইনি সমস্যায় তা সম্ভব হয়নি। পরে ঠিক হয়, ভাল শিক্ষকদের আনার জন্য প্রেসিডেন্সিকে উৎকর্ষ কেন্দ্র ঘোষণা করে গবেষণা খাতে বিশেষ অনুদান দেওয়া হবে। সেই অনুসারে সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গবেষণা খাতে বিশেষ অনুদানের ব্যবস্থা হয়েছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর স্তরে এই অনুদান বছরে এক লক্ষ টাকা, অ্যাসোসিয়েট স্তরে দু’লক্ষ এবং প্রফেসরেরা তিন লক্ষ টাকা। রাজ্যের অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা দেওয়া হয় না।
এই নিয়ে প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের সদস্য এক প্রবীণ শিক্ষক তখনই আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, যে-বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুরুই হল না, তাকে উৎকর্ষ কেন্দ্রের তকমা দিয়ে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া কত দূর সঙ্গত? ইতিমধ্যেই যে-সব প্রতিষ্ঠান উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তুলতে পেরেছে, তাদেরই বরং ওই বিশেষ সহায়তা দেওয়া হোক।
• আগামী ৩১ জানুয়ারি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে। শুক্রবার ছাত্র-প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্সি-কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভোট শেষ করতে হবে বলে আগেই জানিয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা থাকায় ফেব্রুয়ারির আগে ছাত্র সংসদের ভোট সম্ভব নয় বলে সরকারকে জানায় প্রেসিডেন্সি। কিন্তু সরকার ফের নির্দেশিকা দিয়েছে, ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই ভোট শেষ করতে হবে। প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্ত এ দিন বলেন, “দ্বিতীয় নির্দেশিকা আমাদের কাছে এখনও পৌঁছয়নি। তবে সরকারের অনুরোধ মেনে ৩১ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ঠিক করা হয়েছে।”
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এ দিন বলেন, “উৎকর্ষ কেন্দ্রগুলির বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হিসেবে কাজ না-করে পরস্পরের মধ্যে সমন্বয় করেই এগিয়ে যাওয়া দরকার।” রাজ্যপাল তাঁর বক্তৃতায় এই প্রসঙ্গের অবতারণা করে বলেন, “কলকাতার মতো অন্তত কয়েকটি রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রেসিডেন্সির মতো সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের সমাবর্তনেও এ কথা বলেছিলাম। ব্যক্তিগত ভাবে এই বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। যদিও তাতে কতটা কাজ হয়েছে, জানি না। তবে আমি এই প্রয়াস চালিয়ে যাব।”
এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারের চিন্তাভাবনা কী?
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু জানান, প্রেসিডেন্সির মতোই যাদবপুর ও সিদো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তিনি বলেন, “রাজ্যপাল তো বলেইছেন, সম্প্রতি উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ। তবে আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই জানিয়েছিলাম, শুধু প্রেসিডেন্সি নয়, যাদবপুর এবং সিদো-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়কেও উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যদিও ওই সব প্রতিষ্ঠানে উৎকর্ষ কেন্দ্রের কাজ শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান এখনই রাজ্য সরকারের নেই। তাই কাজে একটু বিলম্ব হচ্ছে।” আর কলকাতা এমনিতেই উচ্চশিক্ষায় মাইলফলক। তাই এই বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার তালিকায় রাখা হয়নি বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
প্রেসিডেন্সির প্রতি বাড়তি নজর দেওয়ার পক্ষপাতী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপের অন্যতম সদস্য স্বপন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “কলকাতার সঙ্গে আয়তনে, চরিত্রে প্রেসিডেন্সির তুলনা হয় না। কলকাতার যে-পরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে, প্রেসিডেন্সির তো তা নেই। একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রার শুরুতে অনেক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। রাজ্য সরকার তাদের সীমিত আর্থিক সংস্থান থেকে যতটা পারছে দিচ্ছে।” বিজ্ঞানী তথা প্রেসিডেন্সি কাউন্সিলের প্রাক্তন সদস্য বিকাশ সিংহেরও বক্তব্য, এখনই কলকাতা বা যাদবপুরের সঙ্গে প্রেসিডেন্সির তুলনা করা উচিত নয়। “ওদের উৎকর্ষের সামান্য অংশও অর্জন করতে প্রেসিডেন্সির অনেক সময় লাগবে। অনেকটা পথ পেরোতে হবে,” বলেছেন বিজ্ঞানী।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.