গঙ্গার পশ্চিম কূলের নবান্নে উঠে গিয়েছে রাজ্যের প্রশাসনিক সদর। মহাকরণে যতটুকু যা আছে, তার সঙ্গে শুক্রবার হঠাৎ কেরোসিনের গন্ধ মেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। সেখানে কেরোসিন ছড়িয়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। সন্ধ্যায় নবান্নে তড়িঘড়ি ডাকা সাংবাদিক বৈঠকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য জানান তিনি। সঙ্গে ছিলেন পূর্তসচিব ইন্দিবর পাণ্ডেও।
ঠিক কী ঘটেছিল?
স্বরাষ্ট্রসচিব জানান, বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে মহাকরণের জি ব্লকে স্বরাষ্ট্র দফতরের রেজিস্ট্রার অব পাবলিকেশনের ঘর থেকে কেরোসিনের গন্ধ পান সেখানে কর্তব্যরত এক পুলিশ কনস্টেবল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি পূর্ত দফতর এবং তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানান। পূর্তকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। খবর যায় লালবাজারেও। ঘরে ঢুকে পূর্তকর্তারা দেখেন, মেঝেতে কেরোসিন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। আশপাশের দেওয়ালেও অনেক উঁচু পর্যন্ত ছড়ানো হয়েছে কেরোসিন। আগুন লাগিয়ে দেওয়ার জন্যই ওই ঘরে কেরোসিন ছড়ানো হয়েছিল বলে স্বরাষ্ট্রসচিবের অভিযোগ। তাঁর ধারণা, সুযোগ বুঝে কোনও সময়ে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হত। তিনি বলেন, “সরকার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। যে বা যারাই ওই ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক, সরকার তাদের খুঁজে বার করবে। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা, প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষাও হবে।” তাঁর দাবি, কর্তব্যরত এক কনস্টেবল সতর্ক থাকায় ব্যাপারটা ধরা পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে পুরস্কৃত করতে বলেছেন। যদিও ওই কনস্টেবলের নাম বলতে পারেননি স্বরাষ্ট্রসচিব এবং মহাকরণের অন্য কর্তারা।
তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কলকাতা পুলিশের একটি বিশেষ দল ঘটনাস্থলে যায়। তবে তদন্তে কী মিলেছে, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি কেউই। নথি পোড়ানোই লক্ষ্য ছিল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কী ভাবে ওখানে কেরোসিন এল, কে বা কারা তা ছড়িয়ে দিয়ে গেল, তা যাচাই করা হচ্ছে। ওখানে চা তৈরি হত কি না, তদন্তে সেটাও দেখা হচ্ছে। কারণ, ওখানে একটি চিনির কৌটোও পাওয়া গিয়েছে।” পুলিশি সূত্রের খবর, ঘরটি সিল করে দিয়ে তদন্ত চালানো হচ্ছে। শনিবার ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের দল ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করবে।
বিভিন্ন দফতর নবান্নে সরানোর মাস তিনেক আগে স্বরাষ্ট্র দফতরের রেজিস্ট্রার অব পাবলিকেশন বিভাগটি মহাকরণে আসে। তার আগে সেটি ছিল ভবানী ভবনে। কিন্তু নবান্নে মহাকরণ স্থানান্তরিত হওয়ার পরেও ওই বিভাগটি মহাকরণেই থেকে যায়। বিতর্কিত বইয়ের উপরে রাজ্য সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করবে কি না, তা খতিয়ে দেখা হয় ওই বিভাগে। এক পূর্তকর্তা বলেন, “ফাইলপত্র তেমন না-থাকলেও ওই দফতর সব সময়েই বইয়ে ঠাসা থাকে। ফলে আগুন লাগলে তা দ্রুত আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল।” গত ৫ অক্টোবর সচিবালয়ের মূল অংশ নবান্নে স্থানান্তরিত হওয়ার পর থেকে মহাকরণে এমনিতেই সুনসান। আগের মতো আঁটোসাঁটো নিরাপত্তাও নেই। তবে এ দিনের ঘটনার পরে মহাকরণের নিরাপত্তা ফের কঠোর করা হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রসচিব। |