তিন বছরেরও বেশি বন্ধ হয়ে আছে বরাহনগরের রতনবাবু ঘাট ও বাগবাজারের মধ্যে লঞ্চ পরিষেবা। স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের অভিযোগ, বন্ধ পরিষেবা চালু করতে উদ্যোগী হয়নি বাম সরকার। হেলদোল নেই বর্তমান সরকারেও। আরও অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ নিয়ে জানিয়েও কোনও সুরাহার আশ্বাস পর্যন্ত মেলেনি। হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির অবশ্য দাবি, লোকসানের কারণেই ওই লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
এ বছর ২৮ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেয়ারলি প্লেস-আড়িয়াদহ জলপথের সূচনা করেন। ফলে বরাহনগর কুঠিঘাট থেকে বাগবাজার যেতে লাগছে ৩০ মিনিট। নতুন পরিষেবায় কুঠিঘাট থেকে বাগবাজার যাচ্ছে লঞ্চ। বাগবাজার থেকে কুঠিঘাট বা আড়িয়াদহ ফিরছে। শেষ লঞ্চ কুঠিঘাট থেকে ছাড়ছে সন্ধ্যা ৭-২৫-এ। সব লঞ্চই রতনবাবু ঘাট ও কাশীপুর ঘাটের উপর দিয়ে যাওয়া-আসা করলেও ওই দু’টি ঘাটে থামছে না। কেন, তা জানেন না যাত্রীরা।
বাসিন্দাদের দাবি, এই পরিষেবা ফের শুরু হলে কাশীপুর রোডের টি এইচ কে জৈন কলেজ, কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি ও বরাহনগরের বিভিন্ন কলকারখানায় নিযুক্ত নিত্যযাত্রীদের সুবিধা হবে। একই দাবি কলেজের অধ্যক্ষা মৌসুমী সিংহ সেনগুপ্তের। তিনি বলেন, “সকাল ও দিবা বিভাগের বহু ছাত্রছাত্রী আসেন হাওড়া, লিলুয়া থেকে। একটি নির্দিষ্ট রুট ছাড়া কোনও বাসও চলে না এই পথে। ফলে লঞ্চ চললে ওঁদের খুবই সুবিধা হত। এই নিয়ে কলেজের তরফে অনেক চেষ্টা করেছি। লাভ হয়নি।”
রতনবাবু ঘাট এলাকার বাসিন্দা সুকুমার খাঁড়া জানান, ২০১০ সাল পর্যন্ত বরাহনগর কুঠিঘাট ও বাগবাজারের মধ্যে লঞ্চ পরিষেবা ছিল সকাল ৯টা ও ৯-১৫ মিনিটে এবং সন্ধ্যা ৭টা ও ৭-১৫ মিনিটে। এই চারটি লঞ্চ রতনবাবু ঘাট ও কাশীপুর ঘাটে থামত। সুকুমারবাবু আরও জানান, কম লঞ্চ থাকায় সমস্যা হত তখনও। অফিসযাত্রী বা ছাত্রছাত্রীরা কোনও কারণে লঞ্চ ধরতে না পারলে অন্য পথে ঘুরে যাতায়াত করতে হত। ফলে অনেক নিত্যযাত্রী হারাচ্ছিল লঞ্চগুলি। অন্য এক বাসিন্দা জানান, পৌষ সংক্রান্তিতে গঙ্গা সাগর উপলক্ষে প্রতি বছরই ডিসেম্বরের শেষে তুলে নেওয়া হয় লঞ্চ। খুলে নেওয়া হয় জেটিও। আগে মেলা শেষে ফের স্বাভাবিক হয়ে যেত পরিষেবা। কিন্তু ওই বছর মেলা শেষ হওয়ার পরে লঞ্চ পরিষেবা পুনর্বহাল হয়নি।
সুকুমারবাবুর মতোই স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ মনে করেন, লঞ্চ সংখ্যায় কম হওয়ার জন্যই যাত্রী হচ্ছিল না ওই দু’টি ঘাটে। সে কথা মানতে নারাজ হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি। সমিতির প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রণব ঘোষ বলেন, “ওই রুটের পরিষেবায় সংস্থার লাভ তো ছিলই না। বরং ঘাটতি হচ্ছিল। সরকারের পক্ষ থেকে কোনও সাহায্যও মেলে না। তাই বাধ্য হয়ে বন্ধ করা হয়েছে লঞ্চ।”
নিত্যযাত্রীদের তরফে স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনজীবী হারাধন মণ্ডল বলেন, “সমিতি-র লোকসানে চলার তথ্য ঠিক নয়। আমি নিজে সমীক্ষা করেছি। ২০১১-র ফেব্রুয়ারিতে করা এই সমীক্ষা অনুযায়ী সেই সময়ের হিসেবে সব খরচ বাদ দিলেও দৈনিক লাভের অঙ্ক ৩০০ টাকার কিছু বেশি। বিভিন্ন মহলে লেখালেখির পরে জানানো হয়, রতনবাবু ঘাট ও কাশীপুর ঘাটের জেটি পরিষেবার অনুপযুক্ত। সারাইয়ের পরে চলবে লঞ্চ। কিন্তু আর সারানো হয়নি।” কেন হয়নি, সে ব্যাপারে কোনও সদুত্তর মেলেনি রাজ্য পরিবহণ দফতরের কাছে। ভূতল পরিবহণের নতুন পরিষেবার সুবিধা কেন পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ? ভূতল পরিবহণ নিগমের তরফে জানানো হচ্ছে, পুরনো পরিষেবা চালুর বিষয়টি আমাদের নয়। তবে পুণ্যার্থীদের কথা ভেবে করা পরিষেবায় যদি নিত্যযাত্রীরা উপকৃত হন, তবে নিশ্চয়ই বিষয়টি ভাবা হবে। সে ক্ষেত্রে প্রস্তাব এলে রুট স্টাডির পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। |