বিরোধী বিএনপি ও জামাতে ইসলামির ডাকা আচমকা অবরোধে ফের হিংসায় উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ৭১ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হওয়ার পরে এ দিন ভোর থেকে ফের ৭২ ঘণ্টার অবরোধ শুরুর কথা ঘোষণা করা হয়। তার পরে সকাল থেকেই রেল ও সড়ক পথে ব্যাপক নাশকতা শুরু হয়। বিভিন্ন সড়কে আটকে পড়া শতাধিক ট্রাক ও মোটর গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন দেওয়া হয়েছে। বাদ যায়নি ধান ও ওষুধের গাড়িও। রাতে ঢাকার মালিগাঁওয়ে চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়া হলে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফুটপাতে উঠে পড়ে। এ ঘটনায় এক জন প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া পাবনা, বগুড়া ও ঝিনাইদহে বিভিন্ন ঘটনায় ৪ জন মারা গিয়েছেন। এ বারও নাশকতার মূল নিশানা ছিল রেলপথ। গোটা দেশের কোনও শাখাতেই সুষ্ঠু ভাবে ট্রেন চালাতে পারেনি বাংলাদেশ রেল।
সরকারও এ বার কড়া হাতে অবরোধ মোকাবিলায় নেমেছে। বৃহস্পতিবার শাহবাগে বোমা ছুড়ে বাস জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় পুলিশ বিএনপি-জামাত জোটের ১৮ শীর্ষ নেতাকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিল। এ দিন ভোরেই পুলিশ বিএনপি-র সদর দফতরে হানা দিয়ে দলের মুখপাত্র রুহুল কবির রিজভিকে গ্রেফতার করে। পরে আদালতে তোলা হলে বিচারক ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজভিকে জেলে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনার পরে দলের আর এক যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমদকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেয় বিএনপি। কিন্তু বিকেলের পরে তাঁকে আর দফতরে পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোনটিও ছিল বন্ধ। বস্তুত গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে বিএনপি-র সব পরিচিত নেতাই এ দিন গা-ঢাকা দিয়েছেন। তার মধ্যেই দলের আইনজীবী সেলের এক নেতা আভিযোগ করেন, পুলিশ বিএনপি-র দফতরে ভাঙচুর করেছে।
এ দিনই দলের যুবশাখার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, নির্বাচন বানচাল করার জন্যই খুনোখুনিতে নেমেছে বিএনপি-জামাত। তিনি বলেন, এ বার আর কোনও অনির্বাচিত শক্তির হাতে তিনি ক্ষমতা ছাড়বেন না। মানুষ যাঁদের নির্বাচিত করবেন, তিনি তাঁদের হাতেই সরকার হস্তান্তর করবেন। বিএনপি-কে সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে হাসিনা বলেন, “যে মন্ত্রক পছন্দ তা-ই পাবেন। চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও দিতে রাজি।” বিরোধী নেতাদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গে যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের বলেন, পর্দার অন্তরালে বিএনপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তারা নির্বাচনে অংশ নিতে সম্মত হওয়ার পরে আর কোনও নেতাকে জেলে রাখা হবে না। কিন্তু নির্বাচন বানচাল করার জন্য হিংসা-নাশকতায় উস্কানি দিলে জেলেই থাকতে হবে।
গত এক মাস ধরে পর পর তিন বার হরতালের পরে এই নিয়ে দ্বিতীয় দফার অবরোধ শুরু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, বিরোধীদের এই এক মাসের কর্মসূচিতে এ পর্যন্ত ৫৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ৭২ ঘণ্টার এই অবরোধের প্রথম দিনেই মারা গিয়েছেন ৫ জন। এ বারও নাশকতায় জামাত কর্মীদেরই বেশি সক্রিয় দেখা গিয়েছে। পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, জামাত কর্মীরা এ বার বোমা ছাড়াও নানা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ছক কষছে বলে গোয়েন্দারা খবর দিয়েছেন। এই রিপোর্ট হাতে আসার পরে তাঁরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।
|