ঘড়ির কাঁটাগুলো জানান দিচ্ছিল রাত তখন ১০টা বেজে ২৫। ক্লাইড নদীর ধারে ক্লুথা ভল্টস বারে জমে উঠেছিল সপ্তাহান্তের মজলিশ। ফ্লোরে ঝড় তুলেছে গানের দল ‘এসপেরাঞ্জা’।
হঠাৎ-ই কান ফাটানো আওয়াজ। বারের ছাদে ভেঙে পড়ল পুলিশ-কপ্টার। মুহূর্তে থেমে গেল গিটারের স্ট্রিং। মাথার উপর থেকে হুড়মুড় করে নেমে এল ছাদ। আর সে সঙ্গে ভিতরে ঢুকে এল আস্ত একটা হেলিকপ্টার। বারের মধ্যে তখন হাজির ১২০ জন মতো লোক।
আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬ জনের। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলি সে রকমই জানিয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা নিয়ে এখনই মুখ খুলতে রাজি নয় পুলিশ। তারা জানিয়েছে, আহত অন্তত ৩০ জন। ব্যান্ডের সদস্যরা সবাই নিরাপদে আছেন। ভেঙে পড়া ইউরোকপ্টার ‘ইসি ১৩৫ টি২’-তে পাইলট ছাড়াও আরও দু’জন পুলিশ কর্মী ছিলেন। তবে তাঁরা কেমন আছেন, সে বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি। স্কটল্যান্ড পুলিশের তরফে রোজ ফিৎজপ্যাট্রিক বলেন, “ভগ্নস্তূপের তলা থেকে আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। কেন ও ভাবে কপ্টারটা ভেঙে পড়ল, তা অবশ্য পূর্ণাঙ্গ তদন্তের পরই বলা সম্ভব।” তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী, কপ্টারের পাখা ঘুরছিল না। ইঞ্জিনেও আগুন দেখতে পাওয়া গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন অনেকে।
ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে আসেন আশপাশের লোক জন। হাতে হাতে লাগিয়ে নিজেরাই পাথরের চাঁই, ভগ্নস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করে দেন। |
চলছে উদ্ধার কাজ। রবিবার গ্লাসগোয়। রয়টার্সের তোলা ছবি। |
আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই ছুটে আসে দমকল-চিকিৎসক। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিলেন প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব জিম মার্ফি। গাড়ি থেকে দেখেন, এক এক জনকে টেনে বের করে আনছেন স্থানীয়রা। “আমিও সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি থামিয়ে উদ্ধার কাজে হাত লাগাই। শুধু দেখি যে, দলে দলে লোক ধুলোর স্তূপ থেকে উঠে আসছে। কোনও আগুন নেই, ধোয়া নেই, সবার গায়ে শুধু ধুলোর আস্তরণ”, বললেন জিম।
প্রাক্তন সচিবের বর্ণনায়, “হেলিকপ্টারটা পুরো পাবের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। এক-দু’পা এগোনোর পরই থেমে গেলাম। আর ভিতরে ঢোকা সম্ভব ছিল না।” জানালেন, এক তলা বারের ছাদে জেগে ছিল শুধু কপ্টারের নীল রঙের লেজটা। তাতে বড় বড় হরফে লেখা ‘পুলিশ’। ব্যাস ওইটুকুই। কপ্টারের সিংহভাগই বারের গর্ভে। বললেন, “চতুর্দিকে শুধুই ধুলোর আস্তরণ। আর তার উপর চাপ চাপ রক্ত।”
দুর্ঘটনার সময় পাবে ছিলেন গ্রেস ম্যাকলিন। বললেন, “বেশ ভালই ভিড় ছিল তখন। আমরাও সান্ধ্য উৎসব চুটিয়ে উপভোগ করছিলাম। হঠাৎই একটা বীভৎস আওয়াজ। তবে কোনও বিস্ফোরণ নয়, আগুন নয়। আমরা তো প্রথমে ভেবেছিলাম ব্যান্ডেরই কোনও কাজ হবে। তাতেই ছাদটা ও ভাবে নেমে এসেছে। ওরাও গান করে যাচ্ছিল প্রথমটা। তবে সে কয়েক মুহূর্তের জন্য।” গ্রেস বলেন, “ঘরটা ধুলোয় ভরে গিয়েছিল। এক হাত দূরের কিছুও দেখা যাচ্ছিল না ঠিক মতো। নিশ্বাস নেওয়া দূরস্ত। কোনও মতে বেরিয়ে আসি। দেখি বন্ধুরা রক্তাক্ত অবস্থায় বেরিয়ে আসছে।”
বছর চৌত্রিশের ফ্রেজার গিবসন-ও পাবে ছিলেন। দাদার সঙ্গে এসপেরাঞ্জা-র গান শুনতে গিয়েছিলেন। বললেন, “ওদের সেটের মাঝখানেই একটা বীভৎস আওয়াজ। যেন বিস্ফোরণ। গোটা ঘরটা ধুলোয় ভরে গিয়েছিল। কী যে হয়েছে, বুঝতে পারছিলাম না। মুহূর্তের জন্য পুরো স্থির হয়ে গিয়েছিলাম। হাত-পা নড়ছিল না। সম্বিত ফিরতেই হইচই পড়ে যায়।”
বাইরের ছবিটা জানা গেল অন্য এক ব্যক্তির কাছে। তিনি কাছেই একটি বহুতল আবাসনের পার্কিং লটে ছিলেন। তাঁর কথায়, “যে ভাবে, যে গতিতে কপ্টারটা আছড়ে পড়েছিল ভয়াবহ দৃশ্য। আবার এটাও ভাবা যাচ্ছে না, ও ভাবে ভেঙে পড়ল, অথচ বিস্ফোরণ ঘটল না!”
মৃতের সংখ্যা থেকে কত জন আটকে ভগ্নস্তূপে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে সবেতেই। ঘটনাচক্রে আজই স্কটল্যান্ডের জাতীয় দিবস। যদিও প্রশাসনের অনেক কর্তাব্যক্তিদের মুখেই ‘কালা-দিবস’ হয়ে উঠেছে শুক্রবারটা। |