হিংসা ও হানাহানিতে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ। ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির মেয়াদ বাড়িয়ে ৬০ ঘণ্টা করা হয়েছিল। বুধবার মধ্যরাতে সেই মেয়াদ আরও বাড়িয়ে ৭১ ঘণ্টা করেছে বিএনপি ও তার জোটসঙ্গী জামাতে ইসলামি। অর্থাৎ শুক্রবার ভোর ৫টা পর্যন্ত বহাল থাকছে অবরোধ।
এ দিনও নাশকতা ও গুন্ডামির নেতৃত্বে ছিল জামাত কর্মীরাই। তাল দিয়েছে বিএনপি। বহু জায়গায় রেললাইন কেটে নেওয়ায় ট্রেন চলাচল থমকে গিয়েছে। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র শাহবাগ চত্বরে যাত্রিবাহী বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে আগুন লাগানোয় অন্তত ২১ জন যাত্রী সাংঘাতিক ভাবে দগ্ধ হয়েছেন। চলন্ত বাসটি থেকে প্রাণভয়ে লাফ দিয়ে পড়ায় হাত-পা ভেঙেছেন বহু যাত্রী। অ্যাম্বুল্যান্স ও স্কুলবাসেও দুষ্কৃতীরা যথেচ্ছ বোমা ছুড়েছে। তিন দিনে মারা গিয়েছেন অন্তত ২০ জন। আহতের সংখ্যা হাজারেরও বেশি। বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি জানিয়েছেন, রবিবার থেকে ‘আরও কড়া’ আন্দোলনে নামছেন তাঁরা। তার মেয়াদ টানা এক সপ্তাহও হতে পারে। রিজভি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের ঘোষণা করুন, তা হলেই আন্দোলন হবে না। মানুষও ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন।” প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, নির্বাচন হবে। জামাত ও তার সঙ্গীরা নাশকতা করে নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না। তিনি অভিযোগ করেন, বিরোধী নেত্রী নিজে ঘরে বসে থেকে দুষ্কৃতীদের রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছেন। তাদের গুন্ডামিতে হতাহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। |
ঢাকার রাস্তায় অবরোধকারীদের আগুনে পুড়ে ছাই বাস। বৃহস্পতিবার। ছবি: এএফপি। |
রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক আজ জানিয়েছেন, অবরোধের এই তিন দিনে নাশকতায় রেলের অন্তত ৬০০ কোটি টাকার সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে। টানা রেল বন্ধ থাকায় সার্বিক ক্ষতির পরিমাণ ৮০০ কোটি টাকা। রেললাইন কাটার কাজে জামাতের কর্মীরা এমন সব আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেছে, টেলিভিশনে তা দেখে রেলকর্মীরাও অবাক হয়েছেন। এমন যন্ত্র তাঁরা চোখেও দেখেননি বলে জানিয়েছেন। অর্থনীতিবিদ মুহম্মদ মাহবুব আলি হিসেব করে জানিয়েছেন, তিন দিনের অবরোধে সরকারি-বেসরকারি পরিষেবা ও ব্যবসা-বাণিজ্য মিলিয়ে লোকসানের পরিমাণ অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় পড়াশোনা লাটে উঠেছে। তার মধ্যেই বহু স্কুলে পরীক্ষা চলছে। উদ্বিগ্ন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে যে সব যানবাহন রাস্তায় বেরিয়েছে, তার ওপরও দেদার বোমা ছুড়েছে জামাতের কর্মীরা। হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া অ্যাম্বুল্যান্সেও মারা হয়েছে বোমা।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনা নামানোর কথা বলছেন অনেকেই। নির্বাচন কমিশনাররা আজ বৈঠকের পরে জানিয়েছেন, আপাতত বিজিবি-র মতো আধাসামরিক বাহিনীই পুলিশকে সহযোগিতা করবে। ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়ন পর্ব মেটার পরেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সেনা নামানো হতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজি রকিবুদ্দিন আহমেদ আজও বলেন, সরকার ও বিরোধী পক্ষের সমঝোতা হলে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট পিছিয়ে দিতেও সমস্যা হবে না। সব পক্ষ যাতে নির্বাচনে অংশ নেয়, সেটাই হবে তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। রাজনৈতিক সঙ্কট মিটিয়ে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দৌত্য করার জন্য সহকারি মহাসচিব ফার্নান্দেজ তারানকো-কে ৬ ডিসেম্বর ঢাকা পাঠাচ্ছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে দু’পক্ষকে আলোচনায় বসানোর চেষ্টা করবেন তিনি। ৪ ডিসেম্বর এক দিনের সফরে ঢাকা আসছেন ভারতের নতুন বিদেশসচিব সুজাতা সিংহও। হাসিনা সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি আলোচনায় বসবেন। |
আগের হরতালের সময়ে নাশকতায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপি-র যে পাঁচ শীর্ষ নেতাকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেফতার করেছিল, আজ তাঁদের আদালতে তোলা হয়। কিন্তু বিচারক তাঁদের জামিনের আর্জি খারিজ করে জেলে পাঠিয়ে দেন। বিএনপি-র আরও এক প্রাক্তন মন্ত্রী মীর নাসিরকেও আজ চট্টগ্রাম থেকে আটক করা হয়েছে।
|