দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের একটি হাই স্কুলে একাধিক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে ‘কড়া’ পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। স্কুলটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
জেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি মহেন্দ্র হাই স্কুল নামে ওই স্কুলটিতে পরিদর্শনে গিয়ে প্রশাসনের একটি দল কিছু অনিয়মের হদিস পায়। জেলা পরিষদ সভাধিপতি, জেলা স্কুল পরিদর্শক, অবর স্কুল পরিদর্শক, বিডিও সহ অন্য আধিকারিকদের নিয়ে গড়া ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি প্রাথমিক তদন্তের পর স্কুলের বিরুদ্ধে রিপোর্ট জমা দেয়। বৃহস্পতিবার জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ বৈঠক করে ‘কড়া’ পদক্ষেপের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সর্বশিক্ষা মিশনের চেয়ারম্যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি ললিতা টিগ্গা বলেন, “শ্রেণী কক্ষ তৈরি থেকে স্কুল মেরামতি এবং মিড ডে মিলের বরাদ্দ অর্থে ওই স্কুলে অনিয়ম ধরা পড়েছে। দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মহেন্দ্র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিমল প্রামাণিকের দাবি, “গত ২০০৯ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করি। এ সময় অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি। বরাদ্দর হিসেব দেওয়ার কাজ চলছে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০০৭ সাল থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত ওই হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ ১৬টি ক্লাস ঘর তৈরির জন্য কয়েক দফায় সর্বশিক্ষা মিশন থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। যদিও এখন পর্যন্ত স্কুলে ১৩টি ক্লাসঘর তৈরির হিসেব জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্কুলের মেরামতি বাবদ ৩ বছর আগে বিধায়ক তহবিল থেকে পাওয়া ২ লক্ষ টাকার কাজ না করেই, হিসেব জমা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রধান শিক্ষক অবশ্য জানিয়েছেন, বিধায়ক তহবিলের টাকায়, পড়ুয়াদের বসার বেঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
প্রশাসনের তদন্তকারী দলের সদস্য তথা তৃণমূল পরিচালিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের দলনেতা শুভাশিস পাল বলেন, “ওই স্কুলের হিসাব পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে নানা সময় পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য সংখ্যালঘু সেল, সাংসদ ও বিধায়ক তহবিল থেকে পাওয়া কয়েক লক্ষ টাকার হিসেব নেই। স্কুলের তহবিল থেকে বিভিন্ন সময়ে চেকে ৯ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা তোলা হলেও, সেই টাকা খরচের হিসেব পাওয়া যায়নি।” জেলা স্কুল পরিদর্শক পঙ্কজ সরকার বলেন, “প্রাথমিকভাবে কিছু আর্থিক অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা পরিষদ সভাধিপতি জানান, জেলার ৩০৩টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল কর্তৃপক্ষকে ২০০৩-০৪ সাল থেকে ২০১২-১৩ পর্যন্ত পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সেগুলিরও হিসেব নেওয়া হচ্ছে। জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের সদস্য তথা সহকারী সভাধিপতি কল্যাণ কুণ্ডু জানান, ৩৩টি স্কুল কর্তৃপক্ষ খরচের হিসেব জমা দিয়েছেন। সব স্কুলেই পরিদর্শন হবে বলেও তিনি জানান। |
আর্থিক অনিয়ম |
• স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৬টি ক্লাস ঘর তৈরির জন্য কয়েক দফায় সর্বশিক্ষা মিশন থেকে ৪০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। যদিও এখন পর্যন্ত স্কুলে ১৩টি ক্লাসঘর তৈরির হিসেব জমা দেওয়া হয়েছে।
• বিধায়ক তহবিল থেকে পাওয়া ২ লক্ষ টাকার কাজ না করেই, হিসেব জমা দেওয়া হয়েছে।
• স্কুলের তহবিল থেকে বিভিন্ন সময়ে চেকে প্রায় ৯ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা তোলা হলেও, সেই টাকা খরচের কোনও হিসেব পাওয়া যায়নি। |
|