অধ্যক্ষা নিগ্রহে অভিযুক্তই পরিচালন সমিতিতে
শিক্ষিকা নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল যে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে, সেই গৌতম পালকে ওই কলেজেরই পরিচালন সমিতির সদস্য করা হল। যে ঘটনাকে আরাবুল-কাণ্ডেরই পুনরাবৃত্তি বলে মনে করা হচ্ছে।
তফাত শুধু, শিক্ষিকা নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার সময়ই আরাবুল ইসলাম ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি ছিলেন। পরেও তাঁকে ওই পদে রেখে দেওয়া হয়। আর উত্তর দিনাজপুরের মেঘনাদ সাহা কলেজের অধ্যক্ষা-সহ একাধিক শিক্ষিক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীকে নিগ্রহের অভিযোগ যে গৌতমবাবুর নামে, তাঁকে এ বারে ওই কলেজের পরিচালন সমিতিতে নিয়ে এলেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গত ২৭ অগস্ট মেঘনাদ সাহা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তথা গৌতমবাবুর স্ত্রী পম্পা পালের বিরুদ্ধে টুকলির অভিযোগ ওঠে। সেই নিয়ে শুরু হয় গোলমাল। অভিযোগ,
অভিযুক্ত
গৌতম পাল
তারই জেরে অধ্যক্ষা স্বপ্না মুখোপাধ্যায়, বাংলার শিক্ষক সুদেবকুমার রায়, রসায়নের শিক্ষিকা সেঁজুতি দে ও শিক্ষাকর্মী জাফর সাদেক প্রহৃত হন গৌতমবাবু এবং তাঁর অনুগামীদের হাতে। গৌতমবাবুরা আবার স্বপ্নাদেবী, সুদেববাবু, সেঁজুতিদেবী ও জাফর সাহেবের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনেন। স্বপ্নাদেবী ও পম্পাদেবী, পরস্পরের বিরুদ্ধে ইটাহার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ জামিন অযোগ্য ধারায় দু’টি মামলা শুরু করে! প্রায় একই ঘটনা ঘটে গত বছর ভাঙড়ে। সেখানে ওয়েবকুটার নির্বাচন নিয়ে গোলমালের সময় শিক্ষিকা দেবযানী দে-কে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই তৃণমূল নেতা তখন ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটির সভাপতি। পরেও তাঁকে সেই পদে রেখে দেওয়া হয়। যাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষিকা নিগ্রহের অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে কী ভাবে সভাপতির পদে রেখে দেওয়া হল এই প্রশ্ন তুলে সরব হন বিরোধীরা। অভিযোগ ওঠে, শিক্ষাগত দিক থেকেও আরাবুলের যোগ্যতা অনেক কম। আরাবুলের নাম না করে বিষয়টি নিয়ে সরব হন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেন, “তখন (বাম আমলে) দলতন্ত্র ছিল। আর এখন এইট পাশ লোকজন কলেজের প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেছে।” বৃহস্পতিবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য গৌতমবাবুকে সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে ওই কলেজের পরিচালন সমিতিতে মনোনীত করা হয়েছে। তার পরে নতুন করে প্রশ্নটা মাথা তুলেছে।
স্বপ্নাদেবীর স্বামী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সুষ্ঠু শিক্ষার স্বার্থে এই দলতন্ত্র আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে যাঁরা বসে রয়েছেন, তাঁরা শিক্ষার উচ্চ শিক্ষার পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।” স্বপ্নাদেবীকে অবশ্য পাওয়া যায়নি। ফোন বেজে গিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু কিছু বলতে চাননি। তেমনই মুখ খুলতে চাননি তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোপালচন্দ্র মিশ্র বলেন, “আমি কিছু দিন হল দায়িত্ব নিয়েছি। গৌতমবাবুকে চিঠি পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে মেঘনাদ সাহা কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আছে কি না, তা আমার জানা নেই।” বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়ে গোপালবাবুর আশ্বাস, “প্রয়োজনে তাঁর সদস্যপদ বাতিল করে দেব।”
গৌতমবাবু নিজে কী বলছেন? তাঁর বক্তব্য, পরিচালন সমিতির সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, “এতে এত প্রশ্ন ওঠার কী আছে, বুঝতে পারছি না! আমি কোনও শিক্ষক, শিক্ষিকা বা শিক্ষাকর্মীকে নিগ্রহ করিনি।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, “অধ্যক্ষা স্বপ্না মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্বামী প্রাক্তন সিপিআই বিধায়ক শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায় আমাকে যড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়েছেন।” গৌতমবাবু ছাড়াও আরও একাধিক প্রতিনিধিকে সমিতির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। সেই তালিকায় রয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের জেলা সভাপতি অমল আচার্যের স্ত্রী মৌসুমী দেবীও। অমলবাবু এ দিন গৌতমবাবুর পাশেই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যে পালাবদলের পর নতুন সরকার রাজ্যের সমস্ত কলেজের পরিচালন সমিতি ভেঙে দেয়। এখানে তাঁর অভিযোগ, শ্রীকুমারবাবু এবং স্বপ্নাদেবীই চাপ দিয়ে মেঘনাদ সাহা কলেছে পরিচালন কমিটি তৈরির কাজ আটকে রেখেছিলেন। ফলে কলেজের উন্নয়ন থমকে ছিল। অধ্যক্ষা নিগ্রহে অভিযুক্ত গৌতমবাবুকে পরিচালন সমিতির সদস্য করার জন্য সুপারিশ করেন অমলবাবুই। সে প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “গৌতমবাবু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন! তিনি কাউকে নিগ্রহ করেননি!” একই সঙ্গে অমলবাবু বলেন, “স্বপ্নাদেবীরা তো পাল্টা নিগ্রহ ও শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাঁরা গ্রেফতার হননি, পদ থেকে ইস্তফাও দেননি। সেই ব্যাপারে তো কেউ প্রশ্ন তুলছেন না।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.