মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধে সাড়া দিয়ে কৃষি নির্ভর শিল্প গড়তে কোচবিহারে গিয়ে জমি ঘুরে দেখলেন একটি শিল্প-সংস্থার প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার তুফানগঞ্জ ১ ব্লকে মারুগঞ্জ পঞ্চায়েতে শোলাডাঙা এলাকায় দু’টি এবং কোচবিহার ১ ব্লকে ডাউয়াগুড়ি পঞ্চায়েতে ফলিমারি এলাকায় জমিও দেখেছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। তাঁদের জমি দেখানোর কাজে সাহায্য করেন নাটাবাড়ির বিধায়ক তথা পূর্ত দফতরের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। পরে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠক করে, মালিকদের থেকে সরাসরি জমি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাতে সাড়া দিয়ে এক এলাকার জমির মালিক, কৃষকদের সঙ্গে শিল্প সংস্থার প্রতিনিধিদের দেখা করান নাটাবাড়ির বিধায়ক। জেলা প্রশাসনের অফিসাররা প্রক্রিয়ায় সামিল হন। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “জেলায় শিল্পস্থাপনের বিষয়ে আগ্রহী সংস্থার কর্তারা খুব শীঘ্রই প্রস্তাব পাঠাবেন বলে জানিয়েছেন। আমরাও এ বিষয়ে উৎসাহী। সংস্থাকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।” |
ওই শিল্প সংস্থাটি নির্মাণ, রিসর্ট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তারা এখন কৃষি নির্ভর শিল্প গড়তে চান। এ জন্য অন্তত ১৫০ একর জমি প্রয়োজন। কলকাতার ওই সংস্থাটির রাজস্থানেও বেশ কিছু রিসর্ট রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সংস্থার প্রতিনিধিরা জানান, মাস দেড়েক আগে শিল্প সংক্রান্ত বিষয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁদের আলোচনা হয়। সে সময়েই মুখ্যমন্ত্রী তাদের কোচবিহারে শিল্প স্থাপনের জন্য উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। এর পরে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। কৃষি ভিত্তিক শিল্প নিয়ে তাদের কোনও অভিজ্ঞতা না থাকলেও কোচবিহারের কথা মাথায় রেখে আলু, টোম্যাটো, লঙ্কা ছাড়াও পাট, তামাক সহ বিভিন্ন কৃষিপণ্যের জোগান নিয়ে সমীক্ষা শুরু করেছেন বলে জানান। শিল্পোদ্যোগী সংস্থার সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার সুদর্শনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহারে শিল্পস্থাপনে উদ্যোগী হতে বলেন। শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গেও ওই বিষয়ে একাধিকবার কথা হয়েছে। জমি পছন্দ হয়েছে। তবে ঠিক কী ধরণের শিল্প হবে, কত লগ্নি করা হবে এ বিষয়ে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শোলাডাঙায় ঘরঘরিয়া নদী লাগোয়া এলাকায় ৫০০ একর জমি সম্বলিত দুটি জায়গা রয়েছে। তার মধ্যে একটি জমিতে শতাধিক কৃষক চাষ করেন। প্রশাসনের দাবি, সেখানে শিল্প হলে অনেকেই জমি বিক্রি করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ দিন সংস্থার প্রতিনিধিরা কিছু জমির মালিক, কৃষকদের সঙ্গেও কথা বলেন। এলাকার বাসিন্দা মুকুল সরকার বলেন, “আমার ৩০ বিঘা দু’ফসলি জমি রয়েছে। নদীর লাগোয়া বলে ভাঙন নিয়ে উদ্বেগে থাকি। কারখানা হলে, ভাল দাম পেলে জমি বিক্রি করতে আমার আপত্তি নেই।” ইসরাজুল হক নামে অন্য এক জমি মালিক বলেন, “জমিতে বালির আস্তরণ থাকায় ফলন বেশি হয় না। তাই কারখানা গড়তে জমি দিতে আমার মত অনেকেই মনে হয় রাজি হবেন।” রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, ওই এলাকার জমি মালিকরা শিল্প গড়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন বলে আগেই জানিয়েছেন। সে জন্য প্রথম জমিটা ওই এলাকায় দেখানো হয়েছে। তাঁর আশা, “কৃষিভিত্তিক শিল্প হলে এলাকার অর্থনীতি বদলে যাবে।” |
কোচবিহারে শিল্প-চিত্র |
• বৃহৎ শিল্প: নেই
• মাঝারি শিল্প: ১ টি। চকচকায় পাটজাত সামগ্রী তৈরি।
• ক্ষুদ্র শিল্প: ৭০ টি। চকচকা শিল্পকেন্দ্রে ৩০ টি, বাকিগুলি জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
• অতি ক্ষুদ্র শিল্প: প্রায় ২০০০।
• শিল্পতালুক: একটি, চকচকায়।
• জেলায় মূল শিল্প: রাইস মিল, হাসকিং মিল, সরষের তেলের মিল, আটা মিল, প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরি, ওয়্যারিং সামগ্রী উৎপাদন, প্লাইউড কারখানা। |
সমস্যা |
• চকচকায় জুট পার্ক তৈরির উদ্যোগ থমকে। চিহ্নিত হওয়া ৩০ একর জমি পড়ে আছে।
• জমি বণ্টনের পরেও ১০ টি সংস্থা চকচকা শিল্পকেন্দ্রে কারখানা তৈরি করতে পারেনি।
• বিমান চালুর পরেও ফের বন্ধ। |
সম্ভাবনা |
• কৃষিভিত্তিক শিল্প, তামাক, পাট নির্ভর শিল্প।
• চিপস, টোম্যাটো সসের কাঁচামাল সুলভ। |
|