এইচআইভি পরীক্ষার কিট ফুরিয়ে গিয়েছে আট দিন আগে। তার জেরে অন্তঃসত্ত্বা, থ্যালাসেমিয়া রোগী থেকে শুরু করে অনেকেই এইচ আই ভি পরীক্ষা করাতে না পেরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফিরে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের সুপার মহম্মদ রসিদ বলেন, “এইচআইভি পরীক্ষার কিট যে নেই তা আজকেই আমার নজরে এসেছে। কলকাতার স্বাস্থ্য ভবন থেকে তা আনানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
জেলার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির অভিযোগ, কিট না থাকার বিষয়টিকে মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষও গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তাদের অভিযোগ, স্টেট এডস কন্ট্রোল সোসাইটিতে মালদহের জন্য এইচআইভি কিট বেশ কিছুদিন ধরে বরাদ্দ পড়ে থাকলেও কলকাতা থেকে সেই কিট আনতে উদ্যোগী হননি কর্তৃপক্ষ। কিট সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ২ অমিতাভ মণ্ডল বলেছেন, “ওই কিট পাঠানোর জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।” অন্তঃসত্ত্বাদের এইচআইভি পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিটিসি (ইন্ট্রিগ্রেটেড কাউন্সিলিং অ্যান্ড টেস্টিং) ইউনিটে প্রতিদিন ২৫-৩০ অন্তঃসত্ত্বা, ১০-১৫ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এবং ১৪-১৫ জন সাধারণ রোগী এইচআইভি পরীক্ষা করাতে আসেন। ইউনিটে বিনা খরচে পরীক্ষা করা হয়। ৮ দিন ধরে কিট না থাকায় বাইরের নার্সিংহোম থেকে ৪০০-৫০০ টাকা খরচ করে এইচআইভি পরীক্ষা করাতে হচ্ছে বলে রোগীরা অভিযোগ করেছেন। কালিয়াচকের বীরনগরের দিনমজুর মোস্তাক আলম বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁর স্ত্রী’র এইচআইভি পরীক্ষা করাতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন। আইসিটিসি ইউনিটে গিয়ে পরীক্ষা করাতে না পেরে ক্ষুব্ধ মোস্তাক আলম বলেন, “অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে প্রতিদিন এত দূর থেকে আসা সম্ভব নয়। এ দিকে সরকারি নিয়মে এইচআইভি পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। আমাদের পক্ষে বেশি খরচ করে পরীক্ষা করানো সম্ভব নয়। কী করব বুঝতে পারছি না।”
হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষার কিট অমিলের খবর শুনে রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান রাজ্যের পযর্টন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “শেষ হওয়ার আগেই জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উচিত ছিল এইচআইভি কিট সংগ্রহ করে রাখা। কেন এখনও পর্যন্ত কিট আনানো হয়নি, সেই বিষয়ে খোঁজ নেব।” আগামী এক-দু’দিনের মধ্যে কলকাতা থেকে তিনি কিট আনানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। এরই পাশাপাশি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদেরও সতর্ক করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এইচআইভি কিট না থাকা প্রসঙ্গে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জেলা সম্পাদক সৌমিত্র দত্ত বলেছেন, “থ্যালাসেমিয়া রোগীদের যেহেতু বাইরে থেকে রক্ত দিতে হয়, সে কারণে তাদের এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিট না থাকায় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের বেশি টাকা খরচ করে বাইরের নার্সিংহোম থেকে রক্ত পরীক্ষা করাতে হচ্ছে। অথচ স্বাস্থ্য দফতরের হেলদোলই নেই।” |