জুনিয়র চিকিৎসকদের গায়ে হাত তোলার ঘটনার পর এ বার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার জুনিয়র চিকিৎসকদের একদল প্রতিনিধির সঙ্গে আগের দিনের সমস্যা নিয়ে কথা বলেন পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন। মেডিসিন, প্রসূতি বিভাগ-সহ জরুরি বিভাগে রোগীদের নিয়ে নানা ধরনের সমস্যা এবং গোলমালের ঘটনার কথাও তাঁরা জানান। এর পরেই আজ, শুক্রবার থেকে জরুরি বিভাগে ২৪ ঘণ্টা পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। এমনকী শীঘ্রই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্যাম্পাসে থাকা ফাঁড়ির পরিকাঠামো উন্নত করার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে বলে জানিয়ে দেন।
পুলিশ কমিশনার বলেন, “জরুরি বিভাগে মুমূর্ষু রোগী, দুর্ঘটনায় জখম থেকে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে লোকজন আসেন। গোলমালের সম্ভাবনা থাকে। সে জন্য অন্তত ১জন পুলিশ অফিসার এবং ৫ জন কনস্টেবলের একটি দল ২৪ ঘন্টাই সেখানে থাকবেন। প্রয়োজনে অন্য ওয়ার্ডে বাড়তি নিরাপত্তা দরকার হলে সেই ব্যবস্থা করা হবে।” তবে পুলিশ কমিশনার জোর দেন ক্যাম্পাসে থাকা ফাঁড়ির পরিকাঠামো, পুলিশ কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর দিকে। জরুরি বিভাগ ছাড়াও অন্য কোনও বিভাগে বা ক্যাম্পাসের কোথাও গোলমাল হলে ওই ফাঁড়ি থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামলাবেন বলে তিনি জানিয়েছেন। জুনিয়র চিকিৎসকদের তরফে তুষার সরকার বলেন, “আমরা পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি বারবার জানিয়েছি। আমরা খুশি।”
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, বিভিন্ন ওয়ার্ডে মূলত বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার কর্মীরা রয়েছেন। তাঁরা সাধারণত সেনাবাহীনির অবসরপ্রাপ্ত এবং বয়স্ক কর্মী। তা ছাড়া খালি হাতে বা ছোট লাঠি নিয়ে ওই সমস্ত কর্মীরা বড় ধরনের গোলমাল মোকাবিলা করতে নিজেরাই দুশ্চিন্তায় থাকেন। প্রসূতি বিভাগে, জরুরি বিভাগে, মেডিসিন বিভাগে এর আগেও নানা ধরনের গোলমাল, জুনিয়র চিকিৎসকরা প্রহৃত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তা ছাড়া ক্যাম্পাসে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ, খাবারের সঙ্গে নেশার ওষুধ খাইয়ে রোগীর আত্মীয়দের টাকা ছিনতাইয়ের মতো ঘটনাও ঘটে। হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে আলোচনাও হয়েছে। বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষীদের পক্ষে সমস্ত ধরনের গোলমাল মেটানো সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়। পুলিশ কমিশনার আশ্বাসও দিয়েছেন নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবেন বলে।” বুধবার এক রোগিণীর মৃতদেহ নেওয়াকে কেন্দ্র করে জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে গোলমাল হয় ওয়ার্ডের মধ্যেই। জুনিয়র চিকিৎসকদের গায়ে রোগীর পরিচিতরা কয়েকজন হাত দেন বলে অভিযোগ। জুনিয়র চিকিৎসকরা এর পর অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে মৃতদেহ আটকে রাখেন। ওয়ার্ডে লোকজন জড়ো হয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হলে পরিষেবা ব্যহত হয়। পরে পুলিশ গিয়ে সামাল দেয়। অভিযুক্তরা ক্ষমা চাইলে মৃতদেহ ছাড়েন জুনিয়র চিকিৎসকরা। |